Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জামিন নিতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন পাপুলের স্ত্রী-কন্যা

হাইকোর্টে নথি উপস্থাপন আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহিদ ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়ায়া ইসলাম হাইকোর্টে জামিন পেতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ কারণে হাইকোর্ট তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেন।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, জামিন চেয়ে তাদের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছিল, সেটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞার কোনও স্বাক্ষর ছিল না। স্বাক্ষরের জায়গায় ‘স্বাক্ষর অস্পষ্ট’ লেখা রয়েছে। প্রতিবেদনটি স্বাক্ষরের তারিখ উল্লেখ করা রয়েছে ২০২০ সালের ৯ জুলাই। তবে এ ধরনের প্রতিবেদন জামিন আবেদনের সঙ্গে পৃথকভাবে সংযুক্ত করার নিয়ম থাকলেও সেই নিয়মের অপব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে প্রতিবেদনটির বিষয়ে অসঙ্গতি দেখা দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মূল নথি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় পাপুলের স্ত্রী-কন্যার বিষয়ে তদন্তের মূল প্রতিবেদন দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের দেয়া নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নথিতে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই মো. আরেফিন মিঞার স্বাক্ষর রয়েছে। জালিয়াতপূর্ণ নথিতে ‘সার্বিক মতামত’ অংশে পাপুলের স্ত্রী-কন্যাকে দায়মুক্তি দেয়াসহ বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল নথিতে রয়েছে দুই লাইনের মন্তব্য রয়েছে। মূলত, এই অংশে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিজেদের দায়মুক্তি দিয়েছেন পাপুলের স্ত্রী-কন্যা।
পাপুলের স্ত্রী-কন্যার জামিন আবেদনের নথির প্রতিবেদনে ‘সার্বিক মতামত’ অংশে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক হাতিরপুল শাখার গ্রাহক জেসমিন আক্তার এফডিআর-এর বিপরীতে দুটি ঋণ নিয়েছেন এবং তা ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছেন। এখানে উল্লেখিত এফডিআর-এর টাকার উৎস এবং ঋণের টাকা ব্যবহারের ব্যাপারে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। আলোচ্য ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি। অতএব, উক্ত অভিযোগটি এই বিভাগের তরফ থেকে নথিভুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।’
অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল প্রতিবেদনের ‘সার্বিক মতামত’ অংশে বলা হয়েছে, ‘পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক হাতিরপুল শাখার গ্রাহক জেসমিন আক্তার এফডিআর-এর বিপরীতে দুটি ঋণ নিয়েছেন এবং তা ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছেন।’ নথি টেম্পারিং তথা জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কোর্টে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (সরকারপক্ষীয় আইনজীবী) একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে নথি জালিয়াতির বিষয় উঠে এসেছে। বিষয়টি সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের ডিভিশন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উপায়ে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এ প্রক্রিয়ায় পাপুল ও তার স্ত্রীসহ চার জনের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং ৯২টি তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। গত ১১ নভেম্বর ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।



 

Show all comments
  • তানিয়া ২৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২২ এএম says : 0
    এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • হেদায়েতুর রহমান ২৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২২ এএম says : 0
    কোন অপরাধীকে ছাড় দেয়া ঠিক হবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ