পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কথায় আছে রতনে ‘রতন’ চেনে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসি’র জুরাইন অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাও ‘রতন’ চিনতে ভুল করেন নি। তারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য ত্রিরত্মের উপর নির্ভরশীল। মিটার টেম্পারিং, ভূয়া বিল প্রদান, নানা কায়দায় গ্রাহককে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ে সিদ্ধহস্ত এই তিনজন হলেন, কমার্শিয়াল সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেন, মিটার রিডার আমিনুল ইসলাম ও মিটার রিডার আবু সাঈদ। এরা কেউই ডিপিডিসির স্টাফ নন। ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। চাকরি হারানোর ভয় নেই এদের। গ্রাহককে হয়রানির সময় এরা সে কারণেই হয়ে ওঠে বেপরোয়া। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর এরা তিনজন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসি’র প্রধান কার্যালয়ে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং সাদ্দামের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টোটা। অভিযোগের প্রমান পাওয়ার পরে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী প্রধান প্রকৌশলীর দোহাই দিয়ে সাদ্দামকে পদোন্নতি দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-সচিব ও কোম্পানি সচিব এবং স্পেশাল টাস্কফোর্সের আহবায়ক মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কমার্শিয়াল সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেনের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই চিঠিতে ( স্বারক নম্বর ৮৭.৪০২.৪২৯.০০.০০০৪৯.২০১৪.৬৭২) বলা হয়, “১/১১/২০২০ ইং তারিখে ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয় বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল হয়। উক্ত পত্রে অভিযোগ করা হয়, এনওসিএস জুরাইন দপ্তরের মো. কামাল হোসেন (গ্রাহক নং ১২১৮৪৬২৪), ঠিকানা: ১৪৬৯ সাউথ দনিয়া, ঢাকা এর স্থাপনায় বরাদ্দকৃত মিটারটি এনওসিএস জুরাইন দপ্তরের কমার্শিয়াল সাপোর্ট সার্ভিসে কর্মরত বিল সুপাইভাইজার মো. সাদ্দাম হোসেন খুলে এনেছেন। আরো অভিযোগ করেন যে, মো. সাদ্দাম হোসেন উৎকোচের বিনিময়ে বিদ্যুৎ কারচুপির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। উক্ত পত্রের ভিত্তিতে গত ০৪/১১/২০২০ ইং তারিখে এনওসি জুরাইন দপ্তরের আওতাধীন গ্রাহক কুতুব উদ্দিন (ব্যবহারকারি দাদন ব্যাপারি, আক্তার হোসেন কালু, সুজন খলিফা এবং নুরুল ইসলাম), গ্রাহক নং ১২১৪৯৩৮২, দাগ-১৪৬৮, দনিয়া, ঢাকা এর স্থাপনা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। স্পেশাল টাস্কফোর্স টিমের প্রদত্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী উক্ত স্থাপনায় মিটার বাইপাস করে বিদ্যুৎ কারচুপির প্রমান পাওয়া যায়। উক্ত বিদ্যুৎ কারচুপির ঘটনায় এনওসিএস জুরাইন দপ্তরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেভি অফ এন্টারপ্রাইজ এন্ড চিশতিয়া ট্রেডিং এন্ড কনস্ট্রাকশন এর কমার্শিয়াল সুপারভাইজার মো. সাদ্দাম হোসেন এর সংশ্লিষ্টতায় ডিপিডিসি’র সুনাম ও ভাবর্মর্তির অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এমতবস্থায়, অবৈধ কর্মকান্ডে ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য কমার্শিয়াল সুপারভাইজার মো. সাদ্দাম হোসেন এর নিয়োগ বাতিল করত: তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ক্রয় ও চুক্তি সার্কেল) এবং অত্র দপ্তরকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো”। জুরাইন দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই চিঠি পাওয়ার পরও নির্বাহী প্রকৌশলী বিভিন্ন অজুহাতে সাদ্দামকে রক্ষার চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, তিনি প্রধান প্রকৌশলীর দোহাই দিয়ে সাদ্দামকে এক গ্রেড পদোন্নতি দিয়ে কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব দিয়েছেন। এতে করে সাদ্দাম এখন আরও বেপরোয়া। ভুক্তভোগিরা জানান, সাদ্দাম মূলত নির্বাহী প্রকৌশলীর ক্যাশিয়ার হিসাবে কাজ করে। তার কাজই গ্রাহককে জিম্মি করে অবৈধ পন্থায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া। এভাবে অবৈধ উপায়ে ইতোমধ্যে সে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। কদমতলীর জনতাবাগ এলাকার গ্যাস রোডে ১০ তলা বাড়ির ভীত দিয়ে বিশাল ভবন নির্মাণ করছে সাদ্দাম। এরই মধ্যে সাত তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়ে গেছে।
ত্রিরত্মের আরেক সদস্য আমিনুল ইসলাম। ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও আমিনুলের খুঁটির জোর এতই বেশি যে তার ভয়ে তটস্ত থাকে খোদ ডিপিডিসির স্টাফরাও। একজন স্টাফ জানান, জুরাইন দপ্তরের যে কাজ উপ-সহকারি প্রকৌশলীদের করার কথা সেই কাজ আমিনুল করে। নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে এলটিআই’র কাজ আমিনুলই করে থাকেন। ডিপিডিসির ঠিকাদারিও করেন আমিনুল। একই প্রতিষ্ঠানের মিটার রিডারের পাশাপাশি ঠিকাদারি করা কতোটা যৌক্তিক জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, সবই এক্সইএন স্যারের ইচ্ছা। তিনি যাকে কাজ দিবেন তিনি তা করতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, গত ২৪ ডিসেম্বর জুরাইন এলাকার রিডিং সিনডিউল ভাগ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যাদের নামে মিটার রিডিংয়ের বই বণ্টন করা হয়েছে তারা কেউই এলাকায় পরিচিত নন। হোল্ডিং নম্বর অনুযায়ী তারা বাড়িও ঠিকমতো চেনেন না। এ কারণে মিটার তা দেখেই তারা বিল করেছেন। এতে করে চলতি মাসে আরও তীব্র আকার ধারণ করবে গ্রাহক হয়রানি। একজন ভুক্তভোগি বলেন, মিটার না দেখে আইডিয়ার উপর বিল করে আমাদেরকে জিম্মি করা হয়। এরপর এ নিয়ে জুরাইন অফিসে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। ১৫০৭ নং মুরাদপুর মাদরাসা রোডের বাসিন্দা জাহানারা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, আমরা গ্রাহক। আমাদেরতো মানসন্মান আছে। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আমরা যেন গরু ছাগলের মতো। উনি যে ব্যবহার করেন তাতে মান-সন্মান বলে কিছু থাকে না। মহিলা বলে এতটুকু ছাড় দেন না। আদর্শ রোড’ দক্ষিণ দনিয়ার বাসিন্দা জামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, কয়েকদিন আগে আমি গিয়েছিলাম নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে। আগে আমার ভাই আমার বাড়িতে থাকতেন। তিনি হঠাৎ করে মারা গেছেন। কিছু বিল জমে গেছে। আমি ভাইয়ের মৃত্যুর কথা বললে নির্বাহী প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বলেন, তোর ভাই মরেছে, তুই মরতে পারিস না? জামাল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা তো টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ চালাই। উনারা সরকারি চাকরি করেন। উনাদের ব্যবহার এরকম হবে কেন? একজন সরকারি কর্মকর্তা আমাকে এভাবে মরতে বলেন কিভাবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।