পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দশকে প্রথমবার মার্কিন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাটরা
১০০ দিনের পরিকল্পনা : ট্রাম্পের ভুল শোধরানো শুরু
জো বাইডেন যুগের সূচনা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। শুরু হয়েছে নতুন দিনের। হাতে নেয়া হয়েছে একশ দিনের কর্মসূচি। আর সেই সঙ্গে অবসান হয়েছে ট্রাম্প যুগ নামক এক কালো অধ্যায়ের! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে ৭৮ বছর বয়সী ধবধবে সাদা চুলের জো বাইডেন শপথ নিয়ে ফার্স্ট লেডির হাত ধরে হোয়াইট হাউসে (ওভাল অফিস) প্রবেশ করেন। এরপর প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে প্রথমেই সই করেন করোনাভাইরাস মোকাবেলা সংক্রান্ত ফাইলে। তার শপথের আগ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে দেশটিতে মারা গেছেন ৪ লাখের বেশি মানুষ। অদৃশ্য ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই কোটি মানুষ।
করোনা মোকাবিলা ফাইলে সইয়ের পরই বাইডেন টুইট করে জানিয়ে দেন, ‘আমেরিকার ভালোর জন্য অপচয় করার মতো তার সময় নেই’। অভিষিক্ত হয়ে ঐক্যের ডাক দিয়ে বলেছেন, ‘আমি আমেরিকার সবার প্রেসিডেন্ট’। শুরুতে তিনি বহুল প্রত্যাশিত ১৫টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। আগ থেকেই আদেশের ফাইলগুলো স্বাক্ষরের জন্য তার টেবিলে সাজানো ছিল। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস আবহাওয়া চুক্তিতে ফিরে যাওয়া, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিমালা বাতিল করা, যেসব মুসলিম দেশের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেয়া, সরকারি অফিসে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ইত্যাদি।
চলতি মাসের ৬ তারিখ ট্রাম্প সমর্থকদের তান্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছিল ক্যাপিটল হিল। তা নিয়ে অভিষেকের দিনও সর্বত্র ছিল আতঙ্ক-শঙ্কা। কিন্তু বুধবার ছিল হিমশীতল পরিবেশ। ট্রাম্পের অনুপস্থিতি যেন পুরো অভিষেক অনুষ্ঠানকে করে তুলেছিল আরো স্বস্তিদায়ক। বাড়তি সতর্কতা থাকলেও তা ছিল নিছক পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অনুষঙ্গ হিসেবে। করোনাভাইরাসের আবহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সবার মধ্যেই ছিল স্বস্তি। এটা বজায় ছিল শপথ অনুষ্ঠানের শেষেও। এককথায় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান নির্ঝঞ্ঝাটে হয়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটন তথা সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
শপথ নেয়ার আগেই বলেছিলেন, ‘অনেক ক্ষত উপশম করা বাকি।’ অনেক কাজ বাকি। তাই শপথ গ্রহণের পর এক মিনিটও সময় নষ্ট করলেন না আমেরিকার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়র। বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাতেই ১৫টি অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করলেন তিনি। রদ করলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একাধিক সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে রয়েছে প্যারিস আবহাওয়া চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত। রদ হল সাতটি ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞাও। একই সঙ্গে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে দেশের ১০ কোটি মানুষকে করোনাভাইরাস টিকার প্রথম ডোজ প্রদান নিশ্চিত করাও রয়েছে তার অগ্রাধিকার তালিকায়। এদিকে, বুধবার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভোটেই এক দশকে প্রথমবার মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষও দখল করল ডেমোক্র্যাটরা।
প্রথমেই কোভিড পরিস্থিতি সামাল দিতে পদক্ষেপ নিলেন বাইডেন। অর্ডিন্যান্স জারি করে জানালেন, ফেডারেল অফিসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ট্রাম্পের আমলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যপদ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমেরিকা। সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হল বাইডেনের আমলে। একইভাবে প্যারিস আবহাওয়া চুক্তিতে ফিরতে চাইছে আমেরিকা। সেই প্রক্রিয়া এদিন থেকে শুরু হয়ে গেল। অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে পাঁচিল দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের আমলের সূচনাতেই স্থগিত হয়ে গেল সেই প্রক্রিয়াও। কানাডার তেলক্ষেত্র থেকে তরল বিটুমিন আনার জন্য কিংস্টোন পাইপলাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। এর জেরে আমেরিকা-কানাডা সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন তৈরি হতে পারে বলে ক‚টনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মুসলিমদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন বাইডেন প্রশাসন। সাতটি ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার ওপরেও স্থগিতাদেশ দেয়া হল। উল্লেখ্য, ইরান, ইরাক, সোমালিয়া, সিরিয়া, সুদান, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছিলেন ট্রাম্প, যা নিয়ে তীব্র বিতর্কও দেখা দিয়েছিল।
শপথগ্রহণের পর আর এক মুহ‚র্তও নষ্ট করেননি বাইডেন। সাংবাদিকদের সামনেই ওভাল অফিসে বসে অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘নষ্ট করার মতো সময় নেই। তাই আজই এ অর্ডিন্যান্সে স্বাক্ষর করলাম। তবে এটা সবে শুরু। আগামী দিনে আরও কিছু অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করব।’
এদিকে, বিগত প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে হারের পর এবার সিনেটও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে রিপাবলিকান দল। ফলে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্ন ও উচ্চ দুই কক্ষই এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে। বুধবার ক্যাপিটল হিলে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে শপথগ্রহণ করেন। তার সঙ্গেই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। মার্কিন সংবিধান মতে, সিনেটের দৈনন্দিন কার্যকলাপ চলে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে। সেইমতো বুধবার জন অসফ, রাফেল ওয়ারনক ও অ্যালেক্স পাদিলাকে সিনেটের সদস্য হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান কমলা হ্যারিস। এর আগে গত সোমবার সিনেটর পদে ইস্তফা দিয়েছেন কমলা। তার জায়গায় নতুন সিনেটর হিসেবে অ্যালেক্স পাদিলাকে শেষমুহ‚র্তে নিজের নির্ণায়ক ভোট দেন তিনি। আর সেই সঙ্গে এক দশকে এ প্রথম ১০০ সদস্যের সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
এতদিন পর্যন্ত মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের দখল ছিল রিপাবলিকানদের হাতে। ফলে ২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইমপিচ করতে ব্যর্থ হয় ডেমোক্র্যাটরা। ‘হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এ ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাশ হলে রিপাবলিকানদের দখলে থাকা সিনেটে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পালটেছে। মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষেই ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় বিপাকে পড়তে পারেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাছাড়া, কংগ্রেসের দুই কক্ষই দখলে থাকায় নতুন নীতি আনতে কিছুটা সুবিধা পাবে বাইডেন প্রশাসন। সূত্র : সিএনএ, রয়টার্স, এপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।