পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার অধিকাংশ ফুটপাত ও সরকারি জায়গা জমি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। এই দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র। যারা প্রতিদিন ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলছে। প্রতিদিন এই চাঁদার পরিমান প্রায় কোটি টাকা। এই টাকার ভাগ যায় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক দলের নেতা, সন্ত্রাসী ও পুলিশের কাছে। চাঁদাবাজির কারণে এরা ক্রমেই শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এখন আর এরা প্রশাসনকে ভয় পায় না। কথায় কথায় চড়াও হয়। সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর ১১ নম্বরের ৪ নম্বর এভিনিউ এলাকায় অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। দফায় দফায় সংঘর্ষ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দখলদার, চাঁদাবাজ ও প্রশাসনের মধ্যে। এ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কয়েক ঘন্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
সকাল ১১টায় মিরপুর ১১নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে লালমাটি পলাশ নগরমি সড়কের উভয় পাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এর পূর্বে সকাল ১০ টারও আগে থেকে পার্শ্ববর্তী নান্নু মার্কেট এলাকায় বুলডোজার, হ্যামারের মতো ভারী সরঞ্জাম এনে রাখা হয়। মূলত তখন থেকেই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে শুরু করে। জড়ো হতে থাকেন দখলদাররা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পরবর্তীতে মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এলে স্বাভাবিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর চেষ্টা করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু দখলদারদের বাধায় বেশ কয়েক দফা পিছু হটতে হয় উচ্ছেদ অভিযানের দলকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ সময় দখলদার, চাঁদাবাজ, স্থানীয় ক্যাডার, সন্ত্রাসী এবং পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কর্মীদের মধ্যে বহুমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। দখলদারদের ছত্রভঙ্গ করতে এ্যাকশনে যেতে হয় পুলিশকে। অভিযানের এক পর্যায়ে ৪ নম্বর এভিনিউয়ের নান্নু মার্কেট মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ মোড়ের উপরের তিনটি দোকান এবং একটি তিন তলা বাড়ি ভেঙে দেয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অভিযান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিরপুর ১১ নং সেকশন ছাড়াও শাহআলী ও দারুস ছালাম থানা এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে। এখানকার গডফাদারের নাম কবির। তার অত্যাচারে পথচারি ও হকাররা অতিষ্ঠ। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজ কবিরের আছে ডজন খানেক সন্ত্রাসী ক্যাডার। তাদেরকে ব্যবহার করে সে প্রথমে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজি করে। হকাররা জানান, কবির এক সময় গলায় ডালা ঝুলিয়ে পান সিগারেট বিক্রি করতো। এখন নে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। জানা গেছে, শাহআলী থেকে মিরপুর এক নং সেকশন হয়ে দুই নং সেকশন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার হকার আছে। এদের কাছে থেকে প্রতিদিন ২শ’ টাকা থেকে শুরু করে স্থানভেদে ৫শ’ টাকা করে চাঁদা তোলে কবিরের ক্যাডাররা। মাস শেষে শুধু এই এলাকা থেকে তোলা চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই টাকার ভাগ যায় সরকার দলীয় নেতা, প্রভাবশালী, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের পকেটে। স্থানীয় একজন হকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কবিরের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নং মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের চার পাশের টাকা আদায় করে রাজীব ও বুলেট। ফোর প্লাজা ও ছিন্নমূল মার্কেটের পাশের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে সুমন । নিউমার্কেট হতে সনি সিনেমা হলের সামনের রাস্তা ও ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে বাপ্পি ও মনির। আরেক হকার বলেন, কবির ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে সন্ত্রাসীদের দিয়ে। এরপর তাদের মাধ্যমেই চাঁদা তোলে।
চাঁদার পরিমান জানতে চাইলে হকাররা জানান, ১ নং মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের চার পাশের এলাকা থেকে জনপ্রতি ২৫০-৩০০ টাকা আদায় করে কবির। একইভাবে মুক্ত বাংলা মার্কেট ও গ্রামীণ মার্কেটের পাশের ফুটপাতের প্রতিজন হকারদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করে কবির। দারুস সালাম থানা এলাকার আশপাশের রাস্তা থেকে দোকানপ্রতি ৩শ’ থেকে চারশ’ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। একজন হকার বলেন, কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে কবির সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে মারধর করে। এরপর হকারদের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এরপরও চাঁদা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেয় কবির। এরপর মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এভাবে একজনকে কারাগারে পাঠিয়ে ওই স্থান আবার অন্য কারো কাছে ৪০-৫০ হাজার টাকায় ইজারা দেয় কবির। একজন ভুক্তভোগি বলেন, কবিরের নির্যাতনে অতিষ্ঠ অনেকেই। কিন্তু কে করবে তার বিচার? পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ শোনে না। নেতারাও মুখ বুজে বসে থাকেন। আমরা কার কাছে যাবো?
এদিকে, মিরপুর এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এখানে বছরের পর পর কেউ কেউ ৩০ বছর পর্যন্ত জনগণের রাস্তা দখল করে আছেন। বিহারিদের নির্দিষ্ট পিলার পর্যন্ত সীমানা রয়েছে। তারা এটা জানে, কিন্তু জেনেও পিলারের বাইরে এসে দখল করেছেন। এটা ৬৮ ফুট চওড়া সড়ক। আমরা তাদের আগেও বলেছিলাম নিজেদের থেকে সরে যেতে। তারা সেটি না করায় আমাদের অভিযানে আসতে হলো। জনগণের উপকারের জন্য এ অভিযান চলছে দাবি করে মেয়র আতিক বলেন, এ অভিযান কিন্তু আমার জন্য না, জনগণের জন্য। এই সড়ক তাদের। যারাই দখল করবে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান হবে। এমনকি সড়ক প্রশস্ত করতে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও উচ্ছেদ করে সড়ক প্রশস্ত করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।