পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর গুলিস্তানের যে অংশে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার র্যাম্প নেমেছে তার সামনেই চার রাস্তার মোড়। ফ্লাইওভার থেকে নেমে আসা গাড়িগুলো ডানে-বামে ঘুরতে গেলেই বাধা। রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। সামনে যাওয়ারও উপায় নেই। সেখানে সুন্দরবন স্কোয়ারের সবগুলো রাস্তা ও ফুটপাত হকারদের দখলে। এতে করে ফ্লাইওভার দিয়ে নির্বিঘেœ এলেও এখানে এসে গাড়িগুলো যানজটে আটকা পড়ছে। ভুক্তভোগি একজন চালক বলেন, টাকা দিয়ে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে আসি সময় ও জ্বালানী বাঁচানোর জন্য। গুলিস্তানে এলেই যানজটের যন্ত্রণা। প্রশাসন একটু সচেতন হলেই এটা দূর করা সম্ভব। তিনি কাছেই দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশ দেখিয়ে বলেন, তাদের কাজ কী?
অভিযোগ রয়েছে, গুলিস্তানে পুলিশ টাকার বিনিময়ে হকারদের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করার সুযোগ করে দেয়। শুধু তাই নয়, বিকালের দিকে পুলিশ রেকার দিয়ে রাস্তা আটকিয়ে সেখানে হকারদের বসার সুযোগ করে দেয় টাকার বিনিময়ে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত রয়েছে লেনভিত্তিক রাস্তা। যাত্রাবাড়ী অংশে চার লেনের দুই লেনই দখল করে রাখা হয়েছে বাস, মিনিবাস, টেম্পু, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন রকমের গাড়ি। এতে করে এক লেন দিয়ে চলতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বাড়ছে ভোগান্তি। অথচ সেদিকে কারও নজর নেই। উত্তর সিটি করপোরেশনের কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশ দখল করে বানানো হয়েছে গ্যারেজ, দোকান ও মাদকের স্পট। একই অবস্থা মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচেও।
অন্যদিকে, বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণখান ইউনিয়নগামী সড়কটির আশকোনা রেলক্রসিং থেকে শুরু করে হাজি ক্যাম্পের বিপরীত অংশের প্রায় ২০০ মিটার ফুটপাত ও রাস্তা দখলে চলে গেছে। সেখানে বসেছে শতাধিক শাকসবজি, ফলমূল, তরিতরকারি ও মাছের দোকান। পাঁচ ফুট চওড়া ফুটপাত এত সরু হয়ে গেছে যে হেঁটে চলাও যায় না। ফুটপাত দখল করে এসব দোকানি বসছেন স্থায়ীভাবেই। আর যারা ফুটপাতে জায়গা পাননি, তারা মালামাল নিয়ে বসে পড়েছেন রাস্তার ওপরই। এমনকি রাস্তার ডিভাইডারে উপরেও রাখা আছে ফলের ঝুড়ি, সবজির বস্তা প্রভৃতি। এতে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের চলতে হচ্ছে মূল সড়কে নেমে মাঝপথ বরাবর।
সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অফিস সচিবালয়ের সামনে আব্দুল গণি রোডের বেশিরভাগ অংশ সারাদিনই দখল করে রাখে বাহির থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। এতে করে মন্ত্রী-এমপিদের গাড়িও নির্বিঘেœ চলতে পারে না। পিক আওয়ারের সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। পুলিশ তখন বাঁশি বাজিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কাজের কাজ কিছুই হয় না।
রাজধানীজুড়েই এমন দখলের চিত্র। রাস্তা, ফুটপাত, অলি-গলি, মাঠ, পার্ক, খাল, ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ সবই দখল করে নিয়েছে দখলদাররা। গাড়ি চলতে পারে না, পথচারি হাঁটতে পারে না। পথিমধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স।
পুরান ঢাকার চিত্র আরও ভয়াবহ। সেখানকার রাস্তার সিংহভাগই ব্যবসায়ীদের দখলে। পুরান ঢাকার রাস্তা মানেই হাট-বাজার, ফুটপাত মানেই সারি সারি হকার। নর্থ সাউথ রোড, ইংলিশ রোড, ধোলাইখাল, আলুবাজার, বংশাল, বাবুবাজার, লক্ষীবাজার, শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার, পাটুয়াটুলি, নয়াবাজারসহ পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার রাস্তা বেদখলে। রাস্তার উপর মালামাল রেখে বছরের পর বছর ধরে চলছে পাইকারি ব্যবসা। তাতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দিনরাত যানজট লেগেই থাকছে। অথচ দেখার কেউ নেই।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়েছিলেন, দক্ষিণে অবৈধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল করতে পারবে না। এরপর জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পত্রিকায় এসব অবৈধ যান অপসারণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়। দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে মেয়রের নির্দেশ বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের বিন্দুমাত্র পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং উত্তর সিটির চাপে এসব অবৈধ যানের সংখ্যা দক্ষিণে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। রাস্তা-ঘাট, অলিগলির বিড়ম্বনা এখন এসব নিষিদ্ধ যান। আগে অলিগলিতে চললেও এখন এসব চলছে প্রধান রাস্তায়। গতকালও মতিঝিলে মোটরচালিত রিকশা চলতে দেখা গেছে।
দুই মাস আগে ফুটপাথ ও সড়ক দখলমুক্ত করতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত ৭ সেপ্টেম্বর অভিযানকালে ফুটপাত ও সড়কে পাওয়া নির্মাণসামগ্রী ও অবৈধ স্থাপনা জব্দ করে তাৎক্ষণিক নিলামে তোলা হয়। এই অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ফুটপাথ থেকে মালামাল উচ্ছেদের পর স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার পরিবেশের অনেকটাই উন্নতি হয়। যার বিপরীত চিত্র দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। দক্ষিণের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে শুধু দখল আর দখল। এখানে কেনো অভিযান হয় না-এমন প্রশ্ন অনেকেরই। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, আমরা এগুচ্ছি। সব ধরণের অনিয়ম দূর করার জন্য আমাদের মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে সবই হবে।
ভুক্তভোগিদের মতে, ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত করতে রাজধানীতে ঢাকঢোল পিটিয়ে চালানো হয় অভিযান। লাখ লাখ টাকা খরচ করে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। গত ৫ বছরে একাধিকবার অবৈধ দখলে থাকা রাস্তা, ফুটপাথ ও মার্কেটের স্পেস উদ্ধারের উদ্যোগ নিলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানে গিয়েও ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। আবার আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়েও বের হয়ে গেছেন অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রাজধানীকে বাসযোগ্য করার জন্য রাস্তা, ফুটপাত, অলিগলি দখলমুক্ত করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণের মেয়রকেও একইরকম উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবার উপর আইন প্রয়োগ করতে হবে না। একটা নজির স্থাপন করলেই বাকিগুলো নিয়মের মধ্যে এসে যাবে। তিনি বলেন, দক্ষিণের মেয়র রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও জনগণের সেবা নিশ্চিতে খুবই আন্তরিক। দায়িত্ব নিয়ে তিনি এরই মধ্যে অনেক চমক দেখিয়েছেন। আমার বিশ্বাস তিনি পারবেন এই দখলদারিত্ব থেকে দক্ষিণ সিটিকে মুক্ত করতে। তাতে জনগণের দুর্ভোগ কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।