বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সূর্যের গন্তব্যস্থল : সূর্য অস্তিমিত হওয়ার পর তার গন্তব্য কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব হাদিসে রয়েছে। ‘সুজুদুশ শামসি লিল্লাহি আযযা ওয়া জাল্লা’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার আরশকে সূর্য সেজদা করে। এই মর্মে বিভিন্ন হাদিস রয়েছে। কোরআনে সূরা ‘ইয়াসীনে’ আল্লাহ সূর্য সম্পর্কে বলেন : ‘সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। (আয়াত-৩৮)
এ আয়াতের ব্যাখ্যা বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যাতে সূর্যের গন্তব্যে পৌঁছার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। আয়াতে বর্ণিত ‘মোস্তাকারর’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয় যে, এখানে কালগত অবস্থানস্থল বোঝানো হয়েছে। সেই সময় যখন তার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করবে, সে সময়টি কেয়ামতের দিন। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ এই যে, সূর্য তার কক্ষপথে মজবুত ও অটল ব্যবস্থাধীনে পরিভ্রমণ করছে।
এতে কখনও তাকে এক মিনিট ও এক সেকেন্ড পার্থক্য হয় না। সূর্যের এই গতি চিরস্থায়ী নয়। তার একটি বিশেষ অবস্থানস্থল আছে যেখানে পৌঁছে তার গতি স্তব্ধ হয়ে যায়, সেটা হচ্ছে কেয়ামতের দিন। হজরত কাতাদাহ কর্তৃক এই তাফসির বর্ণিত হয়েছে। সূর্যের স্থানগত অবস্থানস্থল অর্থ করা হয়েছে, বোখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিসের ভিত্তিতে।
সূর্যের অবস্থানস্থলের পর তার গন্তব্য কোথায় তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একাধিক হাদিস থেকে সূর্যের গন্তব্য জানা যায়। এ সম্পর্কে হজরত আবুযর গিফারী (রা.) একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সূর্যাস্তের সময় মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আবুযর! সূর্য কোথায় অস্ত যায় জান?’ আবুযর বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন।’
তখন রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : ‘সূর্য চলতে চলতে আরশের নিচে পৌঁছে সেজদা করে।’ অতঃপর তিনি ওপরে বর্ণিত আয়াত পাঠ করেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরও থেমে থাকে না, অবিরাম চলতেই থাকে এবং আরশের নিচে পৌঁছে যায়, সেখানে তার অবস্থানকাল কত সময় তা অজ্ঞাত, তবে পরের দিন উদিত হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বলে অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, ‘প্রত্যেক সূর্য আরশের নিচে পৌঁছে সেজদা করে এবং নতুন পরিভ্রমণের অনুমতি প্রার্থনা করে। অনুমতি লাভ করে নতুন পরিভ্রমণ শুরু করে। অবশেষে এমন একদিন আসবে যখন তাকে নতুন পরিভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে না। বরং পশ্চিম থেকেই উদিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। এটা হবে কেয়ামত হওয়ার একটি আলামত। তখন তওবা ও ঈমানের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কোনো গুণাহগার, কাফের ও মুশরেকের তওবা কবুল করা হবে না।’ (ইবনে কাসীর)
আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম ‘বছরের প্রথম সূর্যাস্তের ছবি দেখাল নাসা’ শীর্ষক খবরটি নিয়ে। সূর্যোদয়ের দেশ কানাডার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পুরো এলাকা মেঘের চাদরে ঢাকা থাকে বলে মহাকাশচারীর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। উপস্থাপিত আলোচনার সারমর্ম এই যে, সূর্যোদয়ের সময় সমগ্র অন্ধকার এলাকা মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখায়। অনুরূপ পশ্চিম আকাশেরও একই অবস্থা কোরআন থেকে জানা যায়।
মহাকাশ নিয়ে মানুষের গবেষণা অনুশীলনচর্চার অন্ত নেই, অথচ কোরআন গবেষণা করলে নব নব অনেক কিছুই উদ্ভাবন সম্ভব। সূর্যের উদয়-অস্তের মধ্যে যে এলাহী রহস্যাবলি নিহিত রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করলে আল্লাহর অসীম কুদরতের ওপর অধিক বিশ্বাস জন্মাবে, তার অস্তিত্বে অস্বীকার করার প্রবণতা হ্রাস পাবে, আল্লাহদ্রোহিতার রোগ হতে মুক্তি লাভ করা যাবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্লভ লেখার উল্লেখ করে এ নিবন্ধের উপসংহার টানতে চাই। ১৯৫৭ সালের কথা, দারুস সুন্নাত ছার্ছিনা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে একটি অসাধারণ তথ্যবহুল লেখা পাঠ করার সুযোগ হয়েছিল। সে সময়কালের মধ্যে কোনো এক সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে একটি ম্যাগাজিন ছাপা হয়েছিল। বিভিন্ন রচনার মধ্যে আরবিতে একটি লেখা ছিল এই শিরোনামে, ‘সুজুদশ শামসি লিহি আযযা ওয়া জাল্লা।’
মোহতারাম উস্তাদ, প্রখ্যাত মোহাদ্দেস হজরত আল্লামা নিয়াজ মোহাম্মদ মাখদুম খোতানী (রহ.) রচিত এ লেখায় বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছিল যে, প্রতিদিন সূর্য অস্তমিত হয়ে যাওয়ার পর আরশের নিচে গিয়ে সেজদা করে। এ দুর্লভ সুদীর্ঘ লেখাটি সংগ্রহ করে বাংলা ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ করা হলে, বহু নতুন তথ্য অবগত হওয়া যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।