Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমলনগরে ইট ও মাটি পরিবহনে ক্ষত বিক্ষত সড়ক!

যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনজীবন

কমলনগর(লক্ষ্মীপুর)উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:০৬ এএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে গ্রামীণ পাকা, আধা পাকা, কাঁচা সড়কে ইট, মাটি,বালি,কাঠ-গাছ পরিবহনকারী অবৈধ ট্রাক্টরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলার রোগী,শিশু,বয়োবৃদ্ধ শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারণ । উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে অবাধে ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টর টলি। চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রাক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে গ্রামীণ জনপদ গুলো দিনদিন চলাচলের অনুপযোগী করে তুলেছে।প্রতিনিয়ত নতুন সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করা হলে ও এ যন্ত্রদানবের ভয়াল ছোবলে সড়কগুলো যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে।বিবর্ণ লক্কর ঝক্করে রূপ নিচ্ছে সকল ধরনের সড়ক।বিরামহীন চলাচলে শব্দ দূষণেও আশপাশের গ্রামের মানুষ,রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।এদিকে ট্রাক্টরের থাবায় আশেপাশের সবকটি সড়ক ভেঙ্গেচুরে বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছে।

কৃষি উন্নয়নের জন্য এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট,বালু মাটি ও ফার্নিচারসহ ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। এসব অবৈধ যন্ত্রদানবের প্রতি নজর নেই প্রশাসনেরও।

সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।কৃষি জমির উর্বর টপসয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ এবং পুকুর-দীঘিনালা ভরাট চলছে। ট্রাক্টরের অত্যাচারের মুখে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।রোড পারমিশন বিহীন ট্রাক্টর ও লাইসেন্স বিহীন চালকের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলাচলকারী মানুষ সার্বক্ষনিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। অনেক সময় শিশু চালককে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। বিকট শব্দে মাল বোঝাই নিয়ে সাদা পাউডারের মত ধুলো উড়িয়ে ধাবিয়ে চলছে এরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি থেকে মাটি বোঝাই নিয়ে সড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রাামীণ সড়ক গুলোর উপর দিয়ে ব্যাপক হারে চলাচল করছে।বিশেষ করে কমলনগর উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের পাড়া মহল্লার সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা সহ উপজেলার প্রত্যেক সংযুক্ত সড়কগুলোতেই দিনরাত চষে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ পরিবহন।অবৈধ ট্রাক্টরগুলো সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ে।

এদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে।যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।বৃদ্ধি পাচ্ছে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা।কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা,চরফলকন,পাটারিরহাট,কালকিনি চরমার্টিন,চরলরেন্স,তোরাবগন্জ,হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট এবংপাশ্ববর্তী রামগতি উপজেলার চরবাদাম,চরপোড়াগাছা,চররমিজ,চরআলগী,চর আলেকজান্ডার,বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের সবগুলো গ্রামে গন্জে পাড়া মহল্লায় প্রায় ৫ শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর টলির দৌরাত্ম্য চলছে।

ফজুমিয়ার এলাকার রুবিনা, নাফিসা ও তুহিন নামের শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়,তারা বলেন অনেক আতংক নিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে রাস্তায় বের হতে হয় ট্রাক্টর টলির লোকজন রাস্তায় মেয়েদের দেখলে নানা কটুকথাও বলেন বলে জানান তারা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মালিক জানায়,এইসব অবৈধ ট্রাক্টর টলি রাস্তায় চলাচল করতে থানা পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়েই তারা এ ব্যবসা করে যাচ্ছে।তবে এমন অভিযোগ সঠিক নয় দাবী করেন পুলিশ।অভিভাবক রফিক,নুরজাহান বলেন,উন্নত শিক্ষার জন্য আমরা গ্রামীণ অঞ্চলের অভিভাবকরা সন্তানদের পড়া লেখা করাচ্ছি।কিন্তু এ অঞ্চলে ট্রাক্টর টলির দৌরাত্ম্যের কাছে মানুষ অসহায়।যারা এগুলো বন্ধ করবে, তারাই এখন এগুলোর লাইসেন্স দিচ্ছে।

বন্ধুর' সড়কে বুলেট গতিতে চলছে এসব পরিবহন।এসব দানব পরিবহনের ভয়ে গর্ভবতী মা,রোগী, বয়োবৃদ্ধ ও শিশু সন্তানদের বাড়ি থেকে বের করতে প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠায় পড়ে থাকে অভিবাবকরা।প্রশাসন যদি এতে নজর না দেয়,তাহলে যেকোন সময় যে কারো পরিবারে নামতে পারে আহাজারী।

পথচারী ডা.মফিজ জানান, এ গাড়ি চলাচলের সময় আশপাশ এলাকায় কুয়াশার মতো সৃষ্ঠ ধুলোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর ধুলোর মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করায় সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষেরা। অনতিবিলম্বে এ যন্ত্রদানব প্রতিরোধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)নুরুল আফসার বলেন, এসব টলি ট্রাক্টর রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করে। কমলনগরে ইতিমধ্যে কয়েকটি ট্রাক্টর মালিককে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমরা কয়কেটি ট্রাক্টর মালিককে জরিমানা করে সতর্ক করে দিয়েছে। তারপরেও তারা সতর্ক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যন্ত্রদানব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ