পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ চাইছে গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক প্রত্যাবাসন। অন্যদিকে মিয়ানমার বলছে, এখন পর্যন্ত যতজনকে তারা যাচাই-বাছাই করেছে সেটি দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে। বিষয়টি সমাধানের জন্য চীন মিয়ানমারকে প্রভাবিত করে কি-না তার ওপর বাংলাদেশ অনেকাংশে নির্ভর করছে। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমার আরো সময় চাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেড় ঘণ্টা বৈঠক হয়।
পরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মিয়ানমার যেটা বলেছে, যে সংখ্যাটি (৪২ হাজার) তারা যাচাই-বাছাই করেছে, সেটি দিয়ে শুরু করা যায় কি-না। আমাকে দুই-তিনবার বলতে হয়েছে সংখ্যাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরস্পর পরস্পরকে চেনে বা একই গ্রাম বা একই এলাকা থেকে এসেছে, এমন লোকদের একসঙ্গে পাঠানো, যাতে তারা যেতে উৎসাহবোধ করে। দুটি বা তিনটি গ্রামের রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে পাঠানোটা আরও বেশি বাস্তবসম্মত হবে।
এ বিষয়ে মিয়ানমারের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমার যেহেতু আগে থেকে একটি অবস্থান নিয়েছে, সেজন্য তারা সঙ্গে সঙ্গে এটি মেনে নেয়নি। তবে তারা এটি বিবেচনায় নেবে এবং আমরা আশা করছি যে ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এগুলো সমাধান করতে পারব।
বেইজিংয়ের মনোভাব বিষয়ে তিনি বলেন, চীন মনে হলো আমাদের এই প্রস্তাবের কারণটা ধরতে পেরেছে।
চীনের ওপর বাংলাদেশ আস্থা রাখতে পারে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনের আগ্রহ ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন যেন এগিয়ে যায়। আমরা সরল বিশ্বাসে তাদের সঙ্গে গিয়েছি। আমার তো মনে হয় তাদের যথেষ্ট উদ্যোগ আছে। একটি শক্তিধর দেশ হিসেবে চীনের আত্মপ্রকাশ ঘটছে এবং সেক্ষেত্রে একটি ফলাফল দেখানোটা তাদের ক্রেডিবিলিটির জন্য দরকার। তাদের নিজেদের তাগিদে তারা চেষ্টা করবে এই সমস্যার যেন সমাধান দ্রুত হয়ে যায়। এছাড়া অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বিষয় তো আছেই। তবে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন একটি প্রক্রিয়া এবং এর প্রক্রিয়ায় অন্য দেশগুলো যদি অংশগ্রহণ করে তবে সেটিকে আমরা স্বাগত জানাব।
প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের অনীহার বিষয়ে তিনি বলেন, যেটা দেখা যাচ্ছে ১২টি গ্রাম থেকে ৮৪০ জন তারা যাচাই-বাছাই করেছে। অর্থাৎ গোটা বিষয়টি বিক্ষিপ্ত। বরং ৮৪০ জন একটি গ্রাম থেকে হলে তাদের আলাদা করে উৎসাহ দিয়ে প্রত্যাবাসনের জন্য তৈরি করতে পারতাম। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি অ্যাপ্রোচ পরিবর্তনের জন্য, সংখ্যা যেটাই থাকুক।
মিয়ানমারের অবস্থান পরিবর্তন হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা আলোচনা করতে চায়। আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমারের যদি ন্যূনতম রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে তবে প্রত্যাবাসন সম্ভব। তাছাড়া চীনেরও একটি ইচ্ছা আছে। কয়েকদিন আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার ঘুরে গেলেন এবং তাদের মধ্যে নিশ্চয় বিষয়গুলো আলোচনা হচ্ছে। সুতরাং কিছুটা নমনীয়তা দেখাবে বলে মনে হয়।
প্রত্যাবাসন কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি মার্চের মধ্যে শুরু করা যায় কি-না। কিন্তু তারা বলেছে লজিস্টিক কিছু সমস্যা আছে। হয়তো আরো কিছু সময় লাগবে। সুতরাং তারা একদম বিষয়টি বাতিল করেনি। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে জুনের মধ্যে আমরা আশা করতে পারি।
এ বিষয়ে তিনি কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কূটনীতির ভাষায় আমি ‘সাবধানতার সঙ্গে আশাবাদী’।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত : বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে আরেকটি বৈঠক হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আলোকে কীভাবে এগোতে পারি এবং নতুন কোনও ইস্যু এরমধ্যে না এনে এটিকে আরও দেরি না করার বিষয়ে সবাই ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ওই বৈঠকের পরপরই পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আরেকটি বৈঠক হবে। আমি অন্য দুই দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং চীনেরও এই বৈঠক করার আগ্রহ আছে। তবে এটি ভার্চুয়ালি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও চীন : অন্যান্য দেশকে এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করাটাকে চীন ভালোভাবে নেবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান চীনকে জানানো হয়েছে, যাতে তারা বিব্রত না হয়। প্রত্যাবাসন শুরু হলে চীন যেহেতু এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে সুতরাং তাদের শারীরিক উপস্থিতি থাকলে ভালো হবে। তবে আমরা চাইব এটি যদি আরও বড় হয় অর্থাৎ চীনের পাশাপাশি জাপান, ভারত, আসিয়ান, জাতিসংঘ এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয় তাহলে তারাও সহযোগিতা করতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই গঠনমূলক অংশগ্রহণে তারা আপত্তি জানায়নি।
এর আগে গতকাল চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের মধ্যে ভার্চুয়ালি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উপমন্ত্রী হাউ দো সুয়ান। সভাপতিত্ব করেন চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুও জাওহুই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।