বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের ছবি দেখাল নাসা’, শীর্ষক খবরটির প্রতি অনেকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হবার কথা। সাধারণভাবে বিবেচনা করতে গেলে এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই।
কেননা প্রাকৃতিক নিয়মে সূর্য, চন্দ্র ও তারকা তথা মহাকাশের এসব গ্রহ, উপগ্রহের অবিরাম নির্দিষ্ট সময়-ক্ষণের মধ্যে উদয়-অস্ত ঘটছে। তবে কিছু কিছুর ব্যতিক্রম আত্মপ্রকাশ ব্যতীত, তা মানুষের দৃষ্টি শক্তির আড়ালে থেকে যায়। কোরআন ও হাদীসে এগুলোর আত্মপ্রকাশ ও আত্মগোপনকে ‘তুলু’ ও ‘গুরুব’ বলা হয়েছে। যেহেতু সূর্য ব্যতীত খোদার কুদরতি কারখানার সমস্ত মহাকাশের গ্রহ-উপগ্রহ রাতেই আত্মপ্রকাশ করে থাকে, তাই রাতেই সেগুলো মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় এবং দিনে সূর্যই কেবল দেখা যায়।
সূর্যের কথাই আসা যাক। প্রতিদিনই সূর্য মানুষের দর্শনে থাকে এবং তার উদয়-অস্ত মানুষের জন্য মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয় হওয়ায়, অনেকে ভোরের উদয় ও সন্ধ্যায় অস্তমিত হবার অপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করার জন্য উদগ্রীব থাকেন। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য পর্যটক ছাড়াও সাধারণ মানুষদের ভিড় লেগেই থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মাহকাশ সংস্থা ‘নাসা’ সাম্প্রতি সূর্যোদয়ের একটি ছবি পোস্ট করে সবাইকে চমকে দিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। খবরটির শেষভাগে মহাকাশচারী যে তথ্যটি পরিবেশন করেছেন তাই আমাদের আজকের প্রতিপাদ্য।
‘রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড’ সূত্রের বরাতে গত ৯ জানুয়ারি ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরের শেষ অংশে ‘পুরো এলাকা মেঘের চাদরে ঢাকা থাকে’ এ বাক্য দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে, তা বিবেচ্য বিষয়। সূর্যের আভাগুলোর উৎপত্তি ও উৎসরণের কেন্দ্র আকাশ নাকি ভূখন্ড তা নিশ্চিত না হলেও সূর্যোদয়ের ব্যাপ্তির স্থানের সন্ধান পাওয়া যায়। যে মেঘের চাদরে ঢাকা এলাকা ভূখন্ডের ওপর অংশ সূর্যের অবস্থান শূন্য জগত আকাশে, নাকি নিচের ভূখন্ডে হলেও কোরআন-এর একটা সাংকেতিক সন্ধান দিয়েছে, যা সূরা ‘কাহফে’-এর আয়াত হতে জানা যায়। আলোচনার সুবিধার্থে কোরআনের-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি আয়াতের অনুবাদ নিম্ন রূপ :
তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, আমি তোমাদের কাছে তার কিছু অবস্থা বর্ণনা করব। আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপোকরণ দান করেছিলাম, অতঃপর তিনি এক কার্যোকরণ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি সূর্যের আস্তাবলে পৌঁছলেন, যখন তিনি সূর্যাস্তের প্রান্ত সীমায় (পশ্চিমের শেষ সীমায়) পৌঁছলেন তখন তার দৃষ্টিগোচর হলো, এক কৃষ্ণজলাশয়ে সূর্য অস্তমিত হচ্ছে। (আয়াত: ৮৪-৮৬)।
এখানে উল্লেখ্য যে, যুলকারনাইন তার বিশ্ব সফর শুরু করে প্রথমে পশ্চিম দিগন্তে যান এবং সেখানেই সূর্যাস্তের ওই রূপ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। সূর্যোদয়ের বর্ণনায় এলাকাটি মেঘের চাদরে ঢাকা বলা হয়েছে। আকাশচারীর ভাষায় অঞ্চলটি কানাডার এককেবারে উপকূলবর্তী দুই প্রদেশ ‘নিউফাউন্ডল্যান্ড’ ও ‘ল্যাব্রাডরক’। এছাড়া পূর্ব কানাডার ‘কিউবেক’ প্রদেশেরও দেখা মিলেছে বলে তিনি বর্ণনা করেছেন।
কোরআনে যুলকারনাইনের বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা এবং সূর্যাস্তের স্থলের বর্ণনায় ‘ফি আইনন হামিয়াতিন’ বাক্যে ব্যবহার করা হয়েছে এর শাব্দিক অর্থ কালো জলাভ‚মি অথবা কাদা। সে জলাশয়কে বোঝানো হয়েছে, যার নিচে কালো রঙের কাদা থাকে। ফলে পানির রঙও কালো দেখায়। সূর্যের এ রূপ জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখার অর্থ এই যে, দর্শক মাত্রই অনুভব করে যে, সূর্য এই জলাশয়ে অস্ত যাচ্ছে। কেননা, এর পর কোনো বসতি বা স্থলভাগ নেই। কেউ যদি সূর্যাস্তের সময় এমন কোনো ময়দানে উপস্থিত থাকেন যার পশ্চিম দিকে দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো পাহাড়, বৃক্ষ, দালানকোঠা ইত্যাদি নেই তবে তার মনে হবে, যেন সূর্যটি মাটির অভ্যন্তরেই প্রবেশ করছে।
সূর্যের উদয়-অস্তের এ বিবরণের সাথে মহাকাশচারীর বর্ণনাকে মিলিয়ে দেখলে, এটিকে বিজ্ঞানের এক বিরল আবিষ্কার বলা যায়। কোরআনে বর্ণিত পশ্চিম গগনে সূর্য অস্তমিত হওয়ার, যুলকারনাইনের দেখা দৃশ্য এবং পূর্ব দিগন্তে মহাকাশচারীর সূর্যোদয়ের দৃশ্য অবলোকন করার মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উদিত হওয়ার পূর্বে অন্ধকার জগতে সূর্যের অবস্থান, এবং অস্তমিত হওয়ার পর গন্তব্যের দিকে যাত্রা রহস্যময় হলেও তার আল্লাহর আর্শ পর্যন্ত গমনের বিষয় হুজুর (সা.)-এর হাদীস থেকে জানা যায় যা পরবর্তী আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।