গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
দেশের জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নের সাথে সে দেশের প্রচলিত আইন ও নীতিগুলোর সম্পর্ক নিবিঢ়। স্বার্থনেষী কিছু গোষ্ঠী এ সকল নীতিকে তাদের স্বার্থে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে থাকে। এ ধরনের গোষ্ঠীগুলোর মাঝে তামাক কোম্পানি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক নিয়ন্ত্রণকে আরো অধিক গুরুত্ব প্রদান এবং রাষ্ট্রে প্রচলিত অন্যান্য আইন থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এ ধরনের বিধানগুলো যুগোপযোগী করা জরুরী। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কৈর্বত্য সভা কক্ষে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টিকারী আইন ও নীতি সংক্রান্ত গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, দি ইউনিয়ন এর কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার ডা. ফরহাদ রেজা, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল হেলাল আহমেদ, সিটিএফকে এর সিনিয়র পলিসি এডভাইজার আতিউর রহমান মাসুদ, ডাস এর উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ডাবিøউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচী ব্যবস্থাপক, সৈয়দা অনন্যা রহমান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হলেও, প্রেসিডেন্টের (পারিশ্রমিক ও অধিকার) আইন, ১৯৭৫ আইনে[১] প্রেসিডেন্টের বাড়ির সদস্য বা তার অতিথি গৃহিত হলে কোন দেশী তামাকের উপর কোন আবগারি শুল্ক আদায় করা হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সিগারেটের মতো ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যহানীকর দ্রব্য শুল্কবিহীন প্রদানের বিধান বাতিল করা জরুরি। এ ধরনের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ গবেষনায় উঠে এসেছে। গবেষনায় বর্তমানে বিদ্যমান ১১টি আইন ৭টি বিধি ও ২টি আদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি করতে পারে এমন বিধান যুক্ত রয়েছে বলে চিহ্নিত করা হয়। সরাসরি আইন নীতি ছাড়াও এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো তামাককে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে উৎসাহিত করছে। যার মধ্যে পাঠ্যপুস্তকে তামাককে অর্থকরী ফসল এবং সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে তামাকের স্বপক্ষের তথ্য উপস্থাপন উল্লেখযোগ্য ।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্রের আইন ও নীতি সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আবু নাসের খান বলেন, রাস্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগ অবশ্যই কাম্য। কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগের নামে যেন তামাকের স্বাস্থ্যহানীকর পণ্যে উৎসাহ প্রদান না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কিছু আইনে প্রত্যক্ষভাবে সমস্যা তৈরী না করলেও পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানীকে সুযোগ দেবার বিষয়টি রয়ে গেছে। রাস্ট্রের কল্যানেই এগুলোকে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক ও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ১৯৯০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপের কারণে এটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ ঘটনার ১৫ বছর পর বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সকল তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এ দীর্ঘ সময়ের মাঝে হাজার হাজার তরুণকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধূমপানে আকৃষ্ট করার সুযোগ পেয়েছে কোম্পানিগুলো। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের সুযোগ বন্ধ করা জরুরী।
ডা. ফরহাদ রেজা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল কার্যক্রম চলছে। এ সময় বাংলাদেশের অন্যান্য আইনগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণে কিধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে এমন একটি গবেষনায় দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ গবেষনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌছে দেওয়া জরুরী।
হেলাল আহমেদ বলেন, তামাকের মতো স্বাস্থ্যহানীকর পণ্য নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তামাক কোম্পানীতে সরকারের শেয়ার এবং প্রতিনিধিত্ব প্রত্যাহার, তামাক কোম্পানী আয়োজিত কর্মসূচীতে সরকারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ ও কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে সরকারী কর্মকর্তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন ।
আতিউর রহমান মাসুদ বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। অত্যন্ত পরিকল্পনা করে তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনে নিজেদের জন্য সুবিধা হতে পারে এ বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্ত করেছে। আমরা প্রত্যাশা করি বর্তমান সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত ইতিবাচক সুতরাং, জনস্বাস্থ্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কমিটমেন্ট বাস্তবায়নে অন্যান্য আইনের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।