বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে কিশোর গ্যাং-এর সাথে মাদকের রমরমা কারবার সুস্থ সমাজ ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলেছে। ২০১৯-এ বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত হত্যার ঘটনার পরে দক্ষিণাঞ্চলের পুলিশ নড়েচড়ে বসলে কিশোর গ্যাং কিছুটা স্থবির হলেও বছর না ঘুরতেই তারা অবস্থান আরো মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে। আর প্রতিটি কিশোর গ্যাং-এর সাথেই রয়েছে মাদকের অবৈধ ব্যবসা। এ অঞ্চলে যুব সমাজ থেকে কিশোররাও ক্রমাগত নেশার রাজ্যে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কিছু উপজেলা পর্যায়েও অনেক স্কুলগামী কিশোররা ধুমপান সহ ইয়াবা’র মত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।
তবে অনেক এলাকাতেই আবার ক্ষমতাশীন দলের একাধিক নেতা মাদকের ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এসব মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্যই বরগুনার ‘নয়ন বন্ড’র মত অনেক গ্যাংই প্রভাবশালীদের তত্বাবধানে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে সক্রিয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আইন-শৃংখলা বাহিনীকে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে অতিমাত্রায় ব্যস্ত থাকতে হয় বিধায় দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে কিশোর গ্যাং থেকে মাদকের কারবার ক্রমশ ডালপালা ছড়াচ্ছে। সীমান্ত থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন যানবাহনে বরিশাল হয়েই ভারতীয় ফেনসিডিল যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। আর টেকনাফ থেকে সাগর পথে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও বরগুনার পাথরঘাটা হয়ে ইয়াবার চালান যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ সারা দেশে। এ অঞ্চলে গাঁজার প্রচলনের সাথে তার আবাদও ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ির ছাদে ও টবে গাছ লাগিয়ে গাঁজা বিক্রির প্রবনতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বরিশাল মহানগরীরও প্রায় সব এলাকাই কিশোর গ্যাং-এর সাথে ইয়াবা ও গাঁজা বেচাকেনার বাজার সম্প্রসারণ ঘটছে। নগরীর অনেক এলাকার সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন নদীর পাড়ে, বিআইডব্লিউটিএ’র মেরিন ওয়ার্কসপ সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যানের হেলিপ্যাডসহ মাঠের অভ্যন্তরভাগ, আমতলা মোড়ের স্বাধীনতা পার্ক, নবগ্রাম রোড-চৌমহনী সংলগ্ন লেকের পাড়সহ নগরীর অনেক এলাকায়ই সন্ধ্যার পরে ইয়াবার পসরা বসে। এসব স্পটগুলোতে অনেক দূর দুরান্তের কিশোর ও যুবকরা আড্ডাবাজীর সাথে ইয়াবার নেশায় অনেক রাত অবধী হৈ-হুল্লোড় করে বেড়ায়। এদের অনেকেই স্কুল ও কলেজের ছাত্র। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই। এসব কিশোর গ্যাং গোটা এলাকার পরিবেশ বিপন্ন করলেও তার কোন প্রতিরোধ নেই।
তবে এসব ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর মানসিকতার থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তার প্রতিফলন খুব একটা লক্ষণীয় নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে কিশোর গ্যাং-এর আধিপত্যের সাথে বিভিন্ন ধরনের মাদকের ভাইরাসও ছড়াচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন অভিভাবক সমাজ। এমনকি করোনা মহামারি সঙ্কটের আগে বরিশাল নগরীতে কোচিং সেন্টারে যাতায়তের নামে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আড্ডাবাজিতে বেশি সময় ব্যয় করতে দেখা গেছে। সম্প্রতিককালে কিছু কিছু কোচিং সেন্টার প্রকাশ্যে ও গোপনে চালু হওয়ায় সে পরিস্থিতি আবার দৃশ্যমান হচ্ছে।
এসব বিষয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার’এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, মাদক সহ কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আমরা বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছি। এ বিষেয়ে বিএমপি’র জিরো টলারেন্স-এর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কোন ধরনের উদাসীনতাকে বরদাসত করা হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজের সচেতন মহলকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান তিনি। আইন-শৃংখলার পাশাপাশি আমাদের তরুণ ও যুব সমাজকে রক্ষার বিষয়টি নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব মনে করেই কাজ করার কথা জানান পুলিশ কমিশনার।
বরিশাল মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শনসহ মাসিক আইন-শৃংখলা সভায় পুলিশ কমিশনার সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্র্তারা মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছেন। কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ নগরবাসীর। এমনকি বিএমপিসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা পুলিশের অনেক সাফল্য থাকলেও কিশোর গ্যাং’ও মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই ম্লান বলেও অভিযোগ রয়েছে। নাম না করার শর্তে বিষয়টি পরক্ষোভাবে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করলেও এক্ষেত্রে আরো জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।