Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইটভাটায় পুড়ছে জ্বালানি কাঠ

দৌলতপুরে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ

মাহফুজুল আলম, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে অবাধে চলছে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পুড়ানোর উৎসব। সরকারি ভাটাস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ আইন না মেনে উপজেলার ২৬টি ইটভাটার মধ্যে দু’একটি বাদে প্রায় সবগুলো ইটভাটাতে দেদারসে পুড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ বা কাঠের গুড়ি। এর ফলে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকাধীন বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাটা মালিকরা জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছে। আর এসব ইটভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে পড়ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, অপরদিকে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে হুমকির মুখে। দৌলতপুর উপজেলার হাসপাতাল রোডের সরকারি শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব মহিলা কলেজ সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠা সুলতান আলীর পিবিসি ব্রিকস ও ইয়াসিন আলীর এএমবি ব্রিকসসহ ৪টি ইটভাটা, রিফায়েতপুরের শহিদুল ইসলাম ওলির জেপিবি ব্রিকস, চকদৌলতপুরে রমজান আলীর আরএনবি ব্রিকস, সংগ্রামপুরে নজরুল ইসলামের বিএইচএন ব্রিকস ও জহুরুল আলমের এবিসি ব্রিকসসহ দৌলতপুরের ২৬টি ইটভাটায় হাজার হাজার মণ গাছের গুড়ির স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় ছোট-বড় ৯টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটাতেও কয়লার পরিবর্তে পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ।
দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের পাশের ভাটাতে অবাধে কাঠ পুড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নীরব। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন লতিবমোড়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যেই ট্রাকভর্তি জালানী কাঠ ওজন দেয়া হয়ে থাকে। আর এসব নিষিদ্ধ ইটভাটায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে সেই মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। প্রতিটি ভাটায় এক রাউন্ড ইট পুড়াতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। সে হিসেবে একটি মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ রাউন্ড ইট পুড়ানো সম্ভব। এক রাউন্ড ইট পুড়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার মণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাটায় এক মৌসুমে একলাখ মণ জ্বালানি হিসেবে সবুজ বৃক্ষ বা কাঠ পুড়ানো হলে ২৬টি ইটভাটায় প্রায় ২৬ লাখ মণ বা তারও বেশি কাঠ পুড়ানো হবে। এছাড়াও ইটভাটাগুলো সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো উর্বর ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যহানী ঘটছে, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত। সেই সাথে আবাদি জমি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে।
অবৈধ এসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার বিষয়ে দৌলতপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম বলেন, সরকারকে ভ্যাট দিয়ে ইটভাটা চালাচ্ছি। তবে তিনি কয়লার পরিবর্তে অবৈধভাবে কাঠ জালিয়ে ইট পুড়ানোর কথা স্বীকার করেন। একই সাথে তিনি স্থায়ী চিমনির ইটভাটা চালানোর বিষয়ে রিটের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, বেশ কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জ্বালানি কাঠ পুড়ানোর দায়ে অর্থদন্ড ও ভাটা মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। ইটভাটায় আবারও অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।
প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ইটভাটা মালিকরা অবাধে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের নজরে নেয়া প্রয়োজন বলে ভূক্তভোগীদের দাবি। একই সাথে পরিবেশ ও আবাদি জমি রক্ষায় এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে সচেতন মহলের দাবি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইটভাটা

১১ এপ্রিল, ২০২২
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩১ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ