পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষমতাসীনদের দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতে ৩ জন নিহত
নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতায় স্থানীয় সরকারের চলতি সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা নির্বাচনও বিতর্কিত এবং এককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যারা পাচ্ছেন অর্থাৎ নৌকা মার্কা যারা পাচ্ছেন তাদেরই জয় নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে দেশের ২৫টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোতে বিএনপি মাত্র ২টিতে জয়ী হয়েছে। ৩টি স্বতন্ত্র হিসাবে দলের বিদ্রোহী এবং বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়ী হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষের অনিহা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বর্তমানে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে অনেক স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভায় সংঘর্ষে কমিশনার প্রার্থীসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এটা ক্ষমতাসীনদের দখলদারিত্ব এবং নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, যে কোনো নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ব্যাপারে তাদেরকে সকল প্রকার আইনগত ক্ষমতা দেয়া আছে। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের কাজকর্মে এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ। নির্বাচন কমিশনকে কেমন যেন নিষ্ক্রিয় ও নির্জীব বলে মনে হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের ইচ্ছা মতো নির্বাচন শেষ করছে তার কমিশন এতে সন্তোষ প্রকাশ করছে। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রার্থীদের সংঘর্ষ-সংঘাত যেন সাধারণ ভোটারদের আতঙ্কের কারণ না হয় সে বিষয়টি অবশ্যই ভাবতে হবে। ইসিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের সহায়তায় ভোটকেন্দ্র, প্রার্থী এবং ভোটারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যতায় এ অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনের প্রতি জনগণের যে অনিহা তৈরি হয়েছে তা আরও বাড়বে।
নির্বাচন কমিশনের নীরবতা ও ব্যর্থতার কারণে চলমান সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনেও চলছে ক্ষমতাসীনদের দখলদারিত্ব। বিরোধীদলের এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যালটে সিলমারাসহ নানা অনিয়ম চলছে অবাধে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল কাদের মির্জার বিভিন্ন জনসভায় দেয়া বক্তব্য এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তবে যেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে সেখানে দখল দারিত্বে বাধা পড়ছে। সে সব স্থানে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত বুধবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নিহত হয়েছেন ২ জন। এ দু’জন হলেন- কাউন্সিলর প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বাবু ও ৮ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত আলীর ছোট ভাই লিয়াকত হোসেন বল্টু।
ভোট কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্যে সিলমারাসহ অন্যান্য অনিয়মের বিষয় সম্প্রতি বসুরহাটের মেয়র প্রার্থী আব্দুল কাদের মির্জার বক্তব্যে ঊঠে এসেছে। এ ছাড়া গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এনামুল হক। তার এ বক্তব্যেও নির্বাচনে প্রকাশ্যে সিল মারার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ। এ নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। নির্বাচন এখন এক কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এ নির্বাচন কমিশন তাদের নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
দলীয় সমর্থনে অর্থাৎ দলীয় মার্কায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৫ সালে। ওই বছরের ১৩ অক্টোবর দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার আইন অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন দিয়েই শুরু হয় দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রথম স্থানীয় নির্বাচন। ২০১৬ সালের মার্চে শুরু হওয়া দেশের ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন হয় রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীকে। আর তখন থেকেই রাজনীতির তৃণমূলে পেশিশক্তির চর্চা নতুন রূপ লাভ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই পদ্ধতি চালু করা হয়, সে লক্ষ্য সামান্যতমও অর্জিত হয়নি। উল্টো স্থানীয় পর্যায়ে ভালো সামাজিক নেতৃত্ব বিকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে দলীয় কোন্দল, বেড়েছে রাজনীতিবহিভর্‚ত পেশীশক্তির চর্চা। এ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ। এরই মধ্যে ৩ জন মারা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।