বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের ইতিহাসে খলীফা মাহদি ছিলেন একজন খ্যাতিমান শাসক। আব্বাসীয় বংশীয় এ খলীফার মৃত্যু হয় ১৬০ হিজরীতে (৭৭৭ খ্রি.)। তিনি ছিলেন মুক্তহস্ত উদার শাসক। ধন-সম্পদ দু’হাতে ব্যয় করতেন। তার অনুদান ও উপহার থেকে বিরোধী লোকজন এমনকি শত্রুরাও বঞ্চিত হতো না। তিনি বলতেন, আপনজন ও সমর্থকরা তো ভালোবেসেই সাথে থাকে। আদর্শিক কারণেও তারা সঙ্গে থাকতে চায়। সাহায্য ও উপহার শত্রুকে কাছে আনে। বিরোধীদের মনকে নরম করে। এতে সমাজে উন্নয়ন সমানহারে হয়। জাতীয় ঐক্য নির্মিত হয়।
১৬৩ হিজরীতে খলীফা মাহদি যখন রোমীয় খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রওনা হন, তখন তিনি তার কোনো কোনো সেনাপতিকে ২০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করেন। শুধু তাই নয়, এক সেনাপতিকে এ পরিমাণ দিনার বার্ষিক ভাতা হিসেবে দেয়ার নির্দেশ দেন। ইতিহাসে পাওয়া যায়, মাহদি একদিনেই এক কোটি দিরহাম দান করেছিলেন। ১৬০ হিজরীতে হজের সময় খলীফা মাহদি মক্কাবাসীর মাঝে তিন কোটি দিরহাম বিলিয়ে দেন। তখন তার মন্ত্রী ইয়াকুব বলেছিলেন, মহান খলীফা এটা তো অপচয়। জবাবে মাহদি বলেছিলেন, সৎকাজে অপচয় না করলে দানের মর্যাদা থাকে না। কৃপণ আর দানশীলের মধ্যে পার্থক্যই হচ্ছে এমন অপচয়।
খলীফা মাহদি ছিলেন খুবই ধৈর্যশীল ও উদার শাসক। মানবাধিকার এবং নাগরিকদের সম্মান ছিল তার কাছে সবচেয়ে বড়। একবার তিনি নামাজ পড়তে মসজিদে গেলেন। এক বেদুইন এসে বলল, মুসল্লিরা তো সবাই চলে এসেছেন, আমি একটু অজু করব। আপনারা আমাকে নিয়ে জামাত পড়বেন। খলীফা মাহদি মেহরাবে দাঁড়িয়ে লোকটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। লোকটি অজু করে আসার পরই তিনি জামাত শুরু করেন। উপস্থিত জনগণ খলীফার এ আচরণে মুগ্ধ হন। এটি ছিল মাহদির স্বভাবের অংশ।
সুন্নাতের হেফাজতের প্রতি মাহদি অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তার পূর্বের খলীফাদের সময়ে বিভিন্ন মসজিদে তাদের নামে আলাদা প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৬১ হিজরীতে খলীফা মাহদি ওই সমস্ত প্রকোষ্ঠ ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে তিনি আদেশ করেন, যেসব মসজিদের মিম্বর মসজিদে নববীর মিম্বরের চেয়ে উঁচু সেগুলো নিচু করে ফেলতে।
মাহদি একজন তাকওয়াবান শাসক ছিলেন। একদিনের ঘটনা : হঠাৎ প্রচন্ড বাতাস শুরু হয়। মাহদি সে সময় ঘরের মেঝেতে গাল লাগিয়ে বলতে থাকেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মতকে হেফাজত করুন। আমাদের সাথে আপনি এমন কিছু করবেন না, যা দেখে আমাদের ভিন্ন ধর্মের শত্রুরা খুশি হয়। এই ঝড়ো বাতাসের আযাব যদি আমার উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে, আমি আপনার সামনে উপস্থিত। তারিখুত তাবারিতে উল্লেখ আছে, খলীফা মাহদি এ দোয়া করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড় থেমে যায়।
সবদিক বিবেচনায় মাহদির সামগ্রিক জীবনের দিকে তাকালে একথা বলা যায় যে, তিনি একজন মেহেরবান উম্মাহর দরদি শাসক ছিলেন। দয়াবান হওয়ার পরেও তিনি সফলতার সাথেই মুসলিম বিশ্ব শাসন করেছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।