বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বগুড়া বিএনপিতে কথায় কথায় বহিষ্কার, কমিটি বাতিলের পর এখন সংবাদ সম্মেলন, পক্ষে বিপক্ষে দোষারোপ ও মারপিটের ঘটনায় দলের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মারাত্মক রুপ নিয়েছে। এতে দলের বর্ণচোরা নেতাদের ব্যক্তি ফায়দা হাসিল হলেও সাধারণ ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটির মতে বগুড়া বিএনপির বিদ্যমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চরম খেসারত দিতে হতে পারে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের পরেই বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে জেলা সম্মেলন করে দেওয়ার শর্তে এসময় ১/১১ এর ঘটনার চিহ্নিত মুখ ব্যবসায়ী জিএম সিরাজকে করা হয় দলের আহবায়ক। এটা মানতে না চাওয়ায় বিদ্রোহী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয় বিএনপি থেকে।
এ সময় শপথ না নেয়ায় বিধি মোতাবেক বগুড়া সদরের সদ্য নির্বচিত সংসদ সদস্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হলে দলের নতুন জেলা আহবায়ক জি এম সিরাজকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। সংসদ নির্বাচনের কারণে বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে জেলা বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য জেলা সম্মেলনের আয়োজনের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। মূলত সঙ্কটের শুরু এখান থেকেই মনে করেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে দেশে পৌর নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলে দলের মনোনয়নকে ঘিরে ফের বহিষ্কার করা হয় বগুড়ার জনপ্রিয় পৌর কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ও যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারকে। এর প্রতিবাদে কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি চলতে থাকে। সিপারকে বহিষ্কার করার পরপরই শেরপুর পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী ও সিনিয়র বিএনপি নেতা মো. জানে আলম খোকাকে বহিষ্কার করা হয়। একই সাথে বিএনপি নেতার সমর্থক চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা হয় বগুড়া জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মিল্লাত হোসেনকে। অন্যদিকে খোকা মিল্লাতকে বহিষ্কারের রেশ কাটতে না কাটতেই সারিয়াকান্দি পৌর ও উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে রাতারাতি দুটি নতুন আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়।
তবে এর প্রতিবাদে এবং অবৈধভাবে গঠিত নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে ৭দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিক্ষুদ্ধদের পক্ষে আবুল কাশেম বলেন, ২০১৯ সালে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। জেলা বিএনপির নির্দেশে গত বছরের নভেম্বর থেকে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দলকে পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়ে তারা ১২টি ইউনিয়ন ও পৌর বিএনপির ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলনের মাধ্যমে আহবায়ক কমিটি গঠন ও অনুমোদন করেন। তা সত্ত্বেও গত ১ জানুয়ারি জেলা বিএনপির আহবায়ক জিএম সিরাজ ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। পরেরদির নয়া কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। এই রদবদলের ঘটনাকে তিনি সারিয়াকান্দি বিএনপির ইতিহাসে এমন ন্যাক্কারজনক বলে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক রাতের পকেট কমিটি অনতিবিলম্বে ৭দিনের মধ্যে বাতিল করে সদ্য বিলুপ্ত কমিটি পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় সংক্ষুব্ধ নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচির হুমকি দেয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ইকবাল কবির পলাশ, যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী হাসান সুফল, হাফিজার রহমান, ইলিয়াসসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
সারিয়াকান্দি বিএনপির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত মঙ্গলবার বগুড়া জেলা বিএনপি ও যুবদল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের প্রহারে আহত হন যুবদলের জেলা যুগ্ম আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম। তাকে বাঁচাতে গিয়ে নাজেহাল হন সিনয়র বিএনপি নেতা শেখ তাহা উদ্দিন নাহিন। সর্বশেষ এই মারধরের ঘটনাটি বগুড়া জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ সঙ্কট ও দ্বন্দ্বের প্রতিফলনের বলে মনে করছেন দল সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।