Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একজন ডাক্তার ও ২ জন নার্স দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার কার্যক্রম

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কয়রার জায়গীর মহল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে

কয়রার জায়গীর মহল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে একাধিকবার জনবল ও আর্থিক সংকটের প্রতিবেদন দাখিল করা সত্ত্বেও নীরব কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত কয়রার ৩ লাখ মানুষ। জরাজীর্ণ কমপ্লেক্সটিতে একজন ডাক্তার ও ১ জন বৃদ্ধ নার্সকে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার জায়গীর মহল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী (বড় বাবু) সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে কাগজপত্র অনুযায়ী ৩ লাখ মানুষের সেবার জন্য সরকার কর্তৃক যেসব পদ শূন্য রয়েছে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মেডিকেল অফিসার ২ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট, গাইনি, সার্জারি, এনেস্থেসিয়া, মেডিসিন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫ জন সহকারী সার্জন এবং কয়রার উত্তর বেদকাশী মেডিকেল সেন্টরের ১ জন মেডিকেল অফিসার, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ২ জন শূন্য এবং ১১ জনের স্থলে ২ জন নার্স থাকলেও ১ জন ডেপুটেশনে দেখা যায়। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই কোন আয়া, ওয়ার্ড বয়, জুনিয়র ম্যাকানিক ২ জন নেই দীর্ঘ ১৫ বছর, নাইট গার্ড ২ জনের স্থলে রয়েছে ১ জন, অফিস সহকারী ৩ জনের স্থলে রয়েছে ১ জন, নেই কোন স্যানেটারি ইন্সপেক্টর এবং পরিসংখ্যানসহ কুক ম্যান। সব মিলিয়ে দেখা যায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ব্যাপক হারে জনবল শূন্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বড় বাবু তরুন কুমার দত্তকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে আরএমও। সেই পদসহ উল্লেখিত পদে জনবল সংকটের কারণে পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বড় বাবু বলেন- দীর্ঘ ৪ বছর গত হলো আমি এই কমপ্লেক্সটিতে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৫০ শয্যায় উত্তীর্ণ হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সরকারি অনুমোদন পেলেও জনবল ও আর্থিক অনুমোদন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তরুন বাবু বলেন, জায়গীর মহল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুরবস্থার চিত্র মাসিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে খুলনা সিভিল সার্জন বরাবর প্রেরণ করছি, অথচ কোন পরিবর্তন দেখছি না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমার্জেন্সিতে থাকা দিলীপ কুমারকে জিজ্ঞাসা করা হলো- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অবস্থা কি? উত্তরে দিলীপ কুমার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, বড় বিপাকে আছি ভাই! এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, এত বড় প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১ জন ডাক্তার ও ২ জন নার্স দিবারাত্রি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। জনবল সংকটের ফলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, স্যার ডাক্তার সুজাত আহম্মেদ ও ১ জন নার্সের দিন রাত সমান হয়ে গেছে। তাছাড়া এ কমপ্লেক্সটিতে মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট, সার্জারি এনেস্থেশিয়া, মেডিসিন, ইউনিয়ন পর্যায়ে সহকারী সার্জন ৫ জন, ল্যাবরেটরি, টেকনিশিয়ান, আয়া, বাবুর্চি, সুইপার, নাইটগার্ড, কুক ও পরিসংখ্যানের মত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো খালি থাকায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আর সে কারণে আমরা যারা দায়িত্ব পালন করছি তাদেরও একই অবস্থা। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনচার্জ ডাঃ সুজাত আহমদের সাথে। তিনি বলেন, সরকার আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা পালন করছি কি না দেখে যান- বলে তিনি একাধিক রোগীর সেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা রহমত আলীকে জিজ্ঞাসা করা হলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সম্পর্কে। উত্তরে তিনি বলেন, এত বড় প্রতিষ্ঠানে একজন ডাক্তার ও একজন বয়ঃবৃদ্ধ নার্সকে দেখতে পাই। এছাড়া খাতা-কলমে ১০/১৫ জন ডাক্তার ও ১১ জন নার্সের নাম থাকলেও তাদের কোনদিন চোখে দেখিনি। তিনি বলেন, শুনেছি কমপ্লেক্সের বড় বাবু প্রতি মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রিপোর্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে পাঠালেও কর্তৃৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে আরো জানা গেছে, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় পরিণত করা হলেও আর্থিক ও জনবলের অনুমোদন না পাওয়ায় ৩১ শয্যায় চলছে ৫০ শয্যার কার্যক্রম। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, খুলনা জেলা শহর থেকে ১শ কি.মি. দক্ষিণে ও কয়রা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কি.মি. উত্তরে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিই কয়রা উপজেলার ৩ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। প্রতিমাসে একাধিক রোগীর মৃত্যুর খবর শোনা গেলেও টনক নড়ছে না খুলনার সিভিল সার্জনের। এছাড়া এ কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ৪/৫ মাস কোন ওষুধের ব্যবস্থা নেই বলে জানা যায়। বিশেষ করে কয়রা উপজেলায় কোন সরকারি হাসপাতাল না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় ১শ বছর। সে কারণে সরকারের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে কয়রার স্বাস্থ্য সেবার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব বলে ভুক্তভোগীরা মনে করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একজন ডাক্তার ও ২ জন নার্স দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার কার্যক্রম
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ