Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিত্য নতুন কৌশলে মাদক পাচার

রাজধানীতে মাদক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

মাদকবিরোধী অভিযান ও মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের পরও মাদক পাচার থামছে না। বরং মাদক পাচারে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। অনেক সময় পাচারকারীদের নিত্য নতুন ও ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল দেখে হতবাক হয়ে পড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। সবজি, পরিবহনের মধ্যে বিশেষ চেম্বার তৈরি, শুকনো মরিচ, জুতা, ইলিশ মাছ, কচ্ছপ ও নারীদের অন্তর্বাসসহ নানা কায়দায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করে আসছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রায় দিনই স্থল ও জল সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইয়াবাই সবচেয়ে বেশি। আর ইয়াবা পাচারে বাহকদের অদ্ভুত কৌশলে বিস্মিত সংশ্লিষ্টরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে এসব মাদক পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, জিআই পাইপ, পানির কলসিতে ইয়াবা তৈরির কেমিক্যাল, মহিলাদের অন্তর্বাস, ইলিশ মাছ ও শুকনো মরিচও রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার শনিবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানীতে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেন্সিডিল পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার এবং মাদক ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেফতার করার পরেও এদের নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে মাদক পরিবহন করলেও আমরা এ সব কৌশলের সাথে পাল্লা দিয়ে এদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সকলের সহযোগিতায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার মন্তব্য করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, তাকি, বশিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুরিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁও, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদীয়া, মালদাহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরে মাদক ঢুকছে। আর ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায়। এছাড়াও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেন্সিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সব রুট দিয়ে দেশে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা আসছে। পরে নানা কৌশলে রাজধানীতে আসছে এসব মাদক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তবে মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঢুকছে কোটি-কোটি পিস ইয়াবা। ইয়াবার অবাধ প্রবেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশে। বেশিরভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে। মিয়ানমারের সাবাইগন, তমব্রু, মুয়াংডুর মতো ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, ধুমধুমিয়া, কক্সবাজার হাইওয়ে, উখিয়া, কাটাপাহাড়, বালুখালি, বান্দরবানের গুনদুম, নাইখ্যংছড়ি, দমদমিয়া, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। আর হাত বদল হয়ে নানা পন্থায় রাজধানীতে আসছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলছেন, আসলে ইয়াবার জন্য মিয়ানমারের পছন্দের বাজার ছিল থাইল্যান্ড। কিন্তু এরপর আমাদের দেশে এই মাদকের আসক্তের সংখ্যা কল্পনার বাইরে চলে যাওয়ায় ইয়াবার বড় বাজারে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এই বাজারের চাহিদা মেটাতে কক্সবাজার-টেকনাফের স্থল সীমান্তবর্তী ৬০-৭০টি স্পট দিয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে। কক্সবাজার, টেকনাফ সংলগ্ন উপক‚লবর্তী সমুদ্রে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি ছোট-বড় নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযানে করে ইয়াবার চালান আসে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, গত রোববার ৩ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় মাতুয়াইল এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে গাড়ির ভতরে অভিনব কৌশলে তৈরি করা গোপন কক্ষ থেকে ৪৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এসময় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- রুবেল সরকার (৩৫) ও চালক সুমন মিয়া (২৪)। গাঁজা পরিবহনে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, জব্দকৃত কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অভিনব কৌশলে একটি গোপন কক্ষ তৈরি করা হয়। যা গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে বিশেষ একটি ইলেকট্রিক সুইচের মাধ্যমে অটোমেটিক হাইড্রোলিক দরজা খোলা জোড়া করা যেত। মাদক পরিবহনের জন্য এই গোপন কক্ষটি ব্যবহার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, যেসব মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে আমরা তাদেরকে আমাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনও তথ্য পেলেই আমরা তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতে নিয়ে আসছিল।

র‌্যাব-২ এর মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত শুক্রবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে সিমান্ত এলাকা থেকে একটি পণ্যবাহী পিকআপে করে ফেনসিডিলের চালান রাজধানীতে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর আদাবর থানার শ্যামলী মাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকের চালনসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে টমেটো, কুল ও পেয়ারা ক্যারেটের ভেতরে অভিনব কায়দায় লুকিয়ে রাখা ১০০১ বোতল ফেনসিডিল ও পলিথিনে মোড়ানো ১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৫ লাখ টাকা। গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবকে জানিয়েছেন, অভিনব কায়দায় নিত্য নতুন কৌশলে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা ফেনসিডিল ও গাঁজা স্বল্প মূল্যে কিনে বড়লোক হওয়ার জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশি দামে মাদক সরবরাহ করে আসছিলেন।



 

Show all comments
  • Ekla jomer ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪৮ এএম says : 0
    দেশটা শেষ হয়ে গেলো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ