পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় রাউন্ডে সউদীগামী সকল ফ্লাইট দু’সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত ৬ জানুয়ারি থেকে পুনরায় ফ্লাইট শুরু হয়েছে। সউদীগামী টিকিটের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। সিন্ডিকেট চক্র সউদীর টিকিট ব্লক করে চড়া দামে কালোবাজারে দেদারসে বিক্রি করছে। সউদীগামী ওয়ান ওয়ে টিকিট বর্তমানে ৭০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে সউদীগামী ওয়ান ওয়ে টিকিট ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো।
বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে ছুটিতে এসে আটকে পড়া হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী দীর্ঘ দিন ঘরে বসে বসে খেতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেক প্রবাসী তাদের সন্তানদের পড়া-লেখার খরচ পর্যন্ত চালাতে পারছে না।
চড়া দামেও টিকিট না পেয়ে সউদী গমনেচ্ছুদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। ভিটেমাটি বিক্রি ও ঋণ করে প্রবাসের কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। সউদীগামী টিরিটের বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি শুরু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার ধরে রাখতে সকল থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্তকরণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
করোনার নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণ ঠেকাতে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া আকাশ, নৌ ও সড়ক পথ খুলে দিয়েছে সউদী আরব। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে সম্প্রতি এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে সউদী প্রেস এজেন্সির খবরে বলা হয়, গত ২০ ডিসেম্বর সাময়িক নিষেধাজ্ঞার পর আকাশ, ভূমি ও সমুদ্রপথে সউদী আরবে প্রবেশ রোববার থেকে চালু হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্সের গতি সচল রাখছেন। জনশক্তি রফতানির সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার সউদী আরবে বর্তমানে ২০ লক্ষাধিক নারী পুরুষ কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। ফ্লাইট সঙ্কটের দরুণ প্রায় এক লাখ সউদী গমনেচ্ছু কর্মী বিপাকে পড়েছে। সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের বর্হিগমন ছাড়পত্র পেতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। বিএমইটিতে মাত্র একজন আরবি অনুবাদক দিয়ে কাজ করায় প্রতিদিন শত শত বিদেশ গমনেচ্ছুদের ফাইল আটকা পড়ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বর্হিগমন ছাড়পত্র দ্রæত ইস্যুর জন্য একাধিক আরবি অনুবাদক নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা’বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিএমইটির সূত্র জানায়, নানা কারণে বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি কমছে। গত জানুয়ারি মাসে সউদীসহ বিভিন্ন দেশে ৬৯ হাজার ৯৮৮ জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। ফেব্রæয়ারি মাসে গেছে ৫৯ হাজার ১৩৯জন কর্মী। গত মার্চ মাসে বিভিন্ন দেশে চাকুরি নিয়ে গেছে ৫২ হাজার ৯১ জন কর্মী। এর মধ্যে শুধু সউদী আরবেই গেছে বেশির ভাগ কর্মী। গত জানুয়ারি থেকে গত ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ২ লাখ ৬ হাজার ২৪৭জন নারী পুরুষ কর্মী বিদেশে চাকরি লাভ করেছে।
হাবের সাবেক শীর্ষ নেতা ও প্যান ব্রাইট ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারি রুহুল আমিন মিন্টু গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাবকে বলেন, সউদীর ওয়ান ওয়ে টিকিট পচিশ হাজার টাকা থেকে ত্রিশ হাজার টাকায় পাওয়া যেতো। সিন্ডিকেট চক্র সউদী টিকিট বøক করে রেখে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছে। টপ টেন নামের সিন্ডিকেট কালোবাজারে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সিন্ডিকেট চক্র গরীব প্রবাসী কর্মীদের কাছে সউদীর ওয়ান ওয়ে টিকিট ৭০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নিয়ে সরকারের ওপর মহল থেকে শুরু করে সকলেই প্রশংসা করেন। কিন্ত এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিদেশে যাওয়ার সময়ে টিকিটের দাম গলাকাটা হারে নেয়া হচ্ছে। তিনি সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি বন্ধ এবং যাত্রা সহজতর করণের লক্ষ্যে দ্রæত সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কড়া নজরদারি আরোপের জোর দাবি জানান।
বায়রার ইসির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী সউদীর টিকিটের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষ ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে সউদী গমনেচ্ছুদের দ্রæত সউদী আরবে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বায়রা নেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, দু’সপ্তাহ সউদীর ফ্লাইট বন্ধ থাকার সুযোগে বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইটে সিট না থাকার অজুহাতে টিকিটের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টিকিট সঙ্কটের বেড়াজালে পড়ে চড়া দামে টিকিট কিনতে সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। বাড়তি টাকা দিয়েও অনেক কর্মীর ভাগ্যে জুটছে না টিকিট। সউদী থেকে ছুটিতে আসা হাজার হাজার কর্মীরা বিমানের টিকিট না পেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। সউদী গমনেচ্ছু বহু কর্মীর ভিসার মেয়াদও শেষ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসে জনবলের অভাবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে প্রতি সপ্তাহে বিশটি পাসপোর্ট জমা দেয়া হলে মাত্র ৫/৭ টি পাসপোর্টে ভিসা দিয়ে বাকি পাসপোর্ট বিনা কারণেই ফেরত দেয়া হচ্ছে। এতে অধিকাংশ সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের ভিসা, মেডিকেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি সউদী দূতাবাস থেকে ভিসা ইস্যুর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আটাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাবকে বলেন, বিমান ও সাউদিয়ার টিকিটের দাম রাতারাতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে সাধারণ কর্মীদের ওপর জুলুম করছে। তিনি সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিমানের ফ্লাইটে সিট নেই বলে কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ওপর ষ্টীমরোলার চালাচ্ছে টপটেন নামক ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টিকিট বিক্রির সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রবাসী কর্মীদের টিকিট নিয়ে এখনো গর্হিত কাজ চলছে। তিনি সউদী গমনেচ্ছুদের টিকিটের দাম সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যথাযথ নজরদারি বৃদ্ধি গুরুত্বারোপ করেন।
ট্রাভেলস নিউজ লিঃ এর স্বত্বাধিকারী আমিনুল হক ওয়ালী ইনকিলাবকে বলেন, সউদীগামী টিকিটের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। সিষ্টেমের কারণে সউদীগামী যাত্রীদের টাকা দিয়েও টিকিট মিলছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ১৩ জানুয়ারি বিমানের একজন যাত্রীর ওয়ান ওয়ে টিকিট ৫৮ হাজার ২শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। আরো ১০/১২ জন সউদীগামী যাত্রীর টিকিট পাচ্ছেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দু’সপ্তাহ সউদীর ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সিন্ডিকেট চক্র কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে টিকিটের দাম বাড়াচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি সউদী গমনেচ্ছু যাত্রীদের টিকিট সঙ্কট নিরসনে বিশেষ ফ্লাইট চালুর জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।