পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই। এ মধ্যেই ভারতে মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিল্লিকে খুশি করতে পহেলা জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে তিনটি স্থল বন্দর ও চট্টগ্রাম নৌ বন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানী শুরু হয়। ফলে বিপদে পড়ে যায় দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী লাখ লাখ কৃষক। গোটা চিত্র তুলে ধরে ‘ভারতের পেঁয়াজকে না বলো’ এবং ‘ভারতের পেঁয়াজ আমদানীতে দেশের পেঁয়াজ চাষীদের সর্বনাশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর শুরু হয় ভারতীয় পেঁয়াজ বর্জনের প্রক্রিয়া। রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার হিসেবে পরিচিত কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ বর্জন করেছেন। তারা ভারত থেকে আমদানী করা পেঁয়াজ গোডাউন ও দোকানে তুলছেন না। চট্টগ্রাম নৌ বন্দরে হাজার হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ জাহাজে পড়ে রয়েছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ওই সব পেঁয়াজ লোকসানের ভয়ে উঠাচ্ছেন না। দিনাজপুরের হিলি, সাতক্ষিরার সেনাদিঘী : এখন চলছে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের হাটবাজারে বিপুল পরিমান দেশি পেঁয়াজ উঠেছে। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে পণ্যটির দাম কমেছে। তাই বেশি লাভের আশায় অতি লোভী ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করলেও রাজধানীর কারওয়ানবাজারে নেই ভারতীয় কোনো পেঁয়াজ। বিক্রেতারা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক বেশি; তাই বাজারে আনছেন না তারা। বাজার ঘুরে তাদের দাবির সত্যতাও মিলল। আবার কেউ বলছেন, মোদী সরকারকে খুশি করতে এবং বেশি বেশি লাভ করতে যারা ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানী করছেন তাদের ‘উচিত শিক্ষা’ দেয়ার জন্য আমদানী করা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। বাজারে আসা সর্বোচ্চ ভালো মানের এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪০ টাকা। দেশি হাইব্রিডের কেজি পড়ছে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা। অথচ গতকাল বুধবার হিলি বন্দর এলাকায় প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করলে ঢাকায় ওই পেঁয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের দামকে ছাড়িয়ে যাবে। এ জন্য কারওয়ানবাজারের পাইকাররা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রিকে ‘না’ বলে দিয়েছেন। কারওয়ানবাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. আশরাফ হোসেন জানালেন, ভারতীয় পেঁয়াজ না থাকলেও বাজারে সরবরাহ আছে চীন, মিশর, তুরস্কের পেঁয়াজের। এ বাজারে তুরস্ক, চীন ও হল্যান্ডের পেঁয়াজের প্রতি কেজির দাম পড়ছে ২০ থেকে ২২ টাকা। এছাড়া ৩৫ টাকার মধ্যে মিলছে এক কেজি মিশরের পেঁয়াজ। কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পেঁয়াজ গুনেমানে উন্নত। দেশে উৎপাদিত উন্নতমানের পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কিনতে পারলে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনবো কেন? বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দেশী পেঁয়াাজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হলে এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা হলে ক্রেতারা কিনতে পারেন।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেল বাজারে এসে পেঁয়াজের দাম নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন ক্রেতারা। তবে মৌসুম বিবেচনায় দাম আরো কমার কথা- এমন প্রত্যাশা অনেক ক্রেতার। আবার দেশি পেঁয়াজের দাম কমতির এ সময়ে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এ নিত্যপণ্যের আমদানি বন্ধ রাখার পক্ষেও মত তাদের। একাধিক ক্রেতা বলেন, গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় প্রথমে একশ পরে ২৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ খেয়েছি। দেশী পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে হলেও কিনতে পারবো। এখন সবার উচিত ভারতীয় পেঁয়াজ বর্জন করা।
মোদী সরকার পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দেশের কিছু লোভী ব্যবসায়ী অতি লোভের আশায় নৌ বন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম নৌ বন্দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেছে। পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় কৃষকের কপালে ভাঁজ পড়েছে। হঠাৎ করে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। দেশীয় পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। আবার তুরস্ক, মিশর, নেদারল্যান্ড, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা বন্দরে শত শত কন্টেনার পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। এই মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। সরকারের কিছু দিল্লিপ্রেমি কর্মকর্তা ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানী করতে উৎসাহ দিচ্ছেন। সরকারের উচিত দেশের কৃষকদের স্বার্থে পেঁয়াজ রফতানির উপর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ করারোপ করা।
এদিকে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, যশোর, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলাগুলোর হাটবাজারে দেশি পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ। তাই ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি কমে গেছে। ক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ কিনছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে বেশি লাভের আশায় যে সব ব্যবসায়ী ও পাইকার ভারতীয় পেঁয়াজের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন তাদের মাথায় হাত পড়েছে। কেউ কেউ আফসোস করে বলচেন আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করবো না।
গতকাল চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ ৩২-৩৫ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২৫ থেকে ২৭ টাকা এবং নেদারল্যান্ডের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এ জাতের পেঁয়াজের ব্যাপক ফলন। ফলে বছরজুড়ে কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আমদানি করা হয় বাকি ৪ লাখ টন। এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর বড় প্রভাব ফেলে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আজাদী বলেন, ভারত সব সময় আমাদের দেশে কৃষকের ঘরে যখন পেঁয়াজ ওঠে, তখন আমদানি মূল্য কমিয়ে দেয়। এতে আমাদের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তারা পেঁয়াজ চাষে আর উৎসাহী হয় না। আবার নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে সুযোগ বুঝে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। দেশের কৃষক দাম পেলে তারা আরো বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করবে। আমদানি নির্ভরতাও কমবে।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের আড়তদার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যখন পেঁয়াজের সঙ্কট ছিল তখন ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে আমরা ব্যবসায়িরাসহ ক্রেতারাও বিপদে পড়েছিল। ৩শ’ টাকা কেজি দরেও পেঁয়াজ কিনেছে ক্রেতারা। এখন তো আমাদের ভরা মৌসুম। এখন প্রতিদিনই পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজ আসছে। এখন আবার ভারত পেঁয়াজ রফতানি শুরু করেছে। ভরা মৌসুমে ভারতীয় পেঁয়াজ আমাদের দেশী পেঁয়াজের বাজার নষ্ট করবে। তাতে কৃষক দাম পাবে না। আর দাম না পেলে তারা আগামী বছর পেঁয়াজের আবাদ করবে না। তখনও আবারও সঙ্কট দেখা দিবে। এ কারণে আমরা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি না। তাছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতের ফুটে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। তার মানে আমাদের এখানে পাইকারী বিক্রিতে কেজি পড়বে কমপক্ষে ৪৫ টাকা কেজি। খুচরায় এর দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অথচ ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ এখন পাইকারীতে ৩৪/৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় এই পেঁয়াজের কেজি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকায় পেলে ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকায় কিনবে কেন? ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।