বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পবিত্র কুরআন ঈমানদারদের প্রতিটি কাজের বিশ্লেষণের অন্যতম মাপকাঠি। যখনই মুমিন কুরআনের কাছে ফিরে যায়, তখনই সে তার করণীয় কি? তা সে পেয়ে যায়। মানব প্রকৃতির সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসক হলো এই কুরআন। পবিত্র কুরআন যদি কেউ সঠিকভাবে অনুধাবন করে এবং তাঁর প্রতিটি নির্দেশকে অনুসরণ করে চলে তাহলে সে মানবজীবনে যেমন অনেক মর্যাদার অধিকারী হবে, তেমনি পরকালে তার সম্মানের তো কোনো শেষই নেই। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন: হে আমার উম্মত সকল, আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে গেলাম, তার একটি হলো কুরআন, অপরটি হলো সুন্নাতে রাসুল (সা.)। যতক্ষণ তোমরা এ দু’টি জিনিস দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে রাখবে, ততদিন তোমাদের কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না। বিপথগামী করতে পারবে না।
পবিত্র কুরআনের সুরা আল ইমরানের ১১৮ থেকে ১২০ নং পর্যন্ত এই তিনটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। এখানে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে আয়াতের ভাবার্থটা উল্লেখ করব, যাতে আমাদের করণীয় ঠিক করতে পারি।
বর্তমান সময়ে মুমিনরা নিজেদের নিজেরাই বিশ্বাস করে না। মুসলমান নামধারণ করা লোকগুলোও শত্রæকে যতটা আপন মনে করে, সত্যিকার মুমিনদের ততটাই অনিরাপদ মনে করে। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা কোনো অবস্থাতেই ঈমানদারদের ব্যতিরেকে অন্যদের মিত্ররূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সামনে যতই সুন্দর আচরণ করুক, তারা কোনো অবস্থাতেই তোমাদের আপন নয়।
এরা সুযোগ পেলে তোমাদের ক্ষতি করতে কোনো রকম দ্বিধা করবে না। সঙ্কোচবোধ করবে না। বস্তুত, এরা সবসময়ই এটা কামনা করে, যাতে তোমরা ক্ষতির মধ্যে নিপতিত হও। মাঝে মাঝে ওদের মুখ দিয়ে অসর্তকতা হেতু আক্রোশমূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে যায়। আর এটা তো খুব অল্পই। বর্তমানেও কিছু মানুষ সাধারণ দ্বীনদার ও হকপন্থী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মুখে যা প্রকাশ করে যাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ঘৃণা ও বিদ্বেষ তাদের অন্তরে বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা এসব কুরআনে এ জন্যই উল্লেখ করেছেন যেন মুমিনগণ সতর্ক হতে পারে, সঠিক বিষয়টা অনুধাবন করতে পারে।
হে ঈমানদাররা, তোমরা সাবধান হয়ে যাও। তোমরা ওদের অন্তর দিয়ে ভালোবাসলে কি হবে, তারা কিন্তু তোমাদের মোটেও ভালোবাসে না। বিশ্বাস করে না। মুমিনরা অন্য ধর্মের সকল কিতাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, কিন্তু তারা পবিত্র কুরআনসহ মুসলমানদের কোনো সম্মানিত জিনিসকে সামান্য বিশ্বাস করে না, সম্মান প্রদর্শন করে না।
এই লোকগুলো এতই ধূর্ত যে, তারা মুসলমানদের সাথে দেখা হলে বলে, আরে ভাই! আমরা তো তোমাদেরই দলের। আর যখনই মুমিনদের থেকে তারা আড়াল হয়ে যায়, তখন রাগে, ক্ষোভে, মুসলমানদের প্রতি চরম হিংসাবশত: নিজেদের আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। আল্লাহ মুমিনদের লক্ষ করে বলেন, হে মুমিনরা! তোমরা ওদের জানিয়ে দাও যে, হে কাফিরের দল, হিংসুটের দল, তোরা নিজেদের আক্রোশের রোগে মরে যা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরের হালত সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।
দুনিয়ার সম্পদশালী, ইসলামবিদ্বেষী, আলেম-ওলামা বিদ্বেষীরা যখন মুমিনদের ভালো কিছু দেখে তখন খুব কষ্ট পায়। আর যখন কোনো বিপদ আসতে দেখে, তখন তারা খুব খুশি হয়। আল্লাহ মুমিনদের সাহস দিয়ে বলেন, হে ঈমানদাররা, ওদের এই হিংসুটেপনা দেখে, ওদের নানামুখী চক্রান্ত দেখে তোমরা ভয় পেও না। এদের এই শয়তানি তোমাদের কোনো স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে না। যদি তোমরা একটু ধৈর্য ধরো, আর প্রকৃতই আল্লাহকে ভয় করো, তাদের এই শয়তানি তোমাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ওরা যা করে তার সবকিছুই গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
আয়াত তিনটির সারমর্ম আমাদের বর্তমান সমাজের সাথে খুব সুন্দরভাবে মিলে যায়। যাদের সুযোগ হয় তিনটি আয়াত বারবার পাঠ করে এর মর্মার্থ অনুধাবনের চেষ্টা করি। মুখস্থ করার চেষ্টা করি। হৃদয়ে এর আবেদন লালন করি। আর আল্লাহর দেয়া নির্দেশকে শতভাগ অনুসরণের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।