Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাউকে ওয়াসিলা নির্ধারণ করা জায়েজ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : হে মুমিনগণ। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ করো, এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফল কাম হও। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ৩৫)। ওয়াসিলা শব্দটি ওয়াসলুন মূলধাতু হতে উদ্ভ‚ত। এর অর্থ সংযোগ স্থাপন করা। ওয়াসিলা ওই বস্তুকে বলা হয়, যা একজনকে অপরজনের সাথে আগ্রহ ও সম্প্রীতি সহকারে সংযুক্ত করে দেয়। (লিসানুল আরব; মুফরাদাতুল কোরআন)। আর ওয়াসিলা শব্দটির সম্পর্ক আল্লাহর সাথে হলে ওই বস্তুকে বুঝতে হবে যা বান্দাহকে আগ্রহ ও মহব্বত সহকারে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। এ জন্যই পূর্ববর্তী সাহাবী মনীষী ও তাবেয়ীগণ উল্লিখিত ওয়াসিলা শব্দের তাফসীর করেছেন এবাদত, নৈকট্য, ঈমান ও সৎকর্ম দ্বারা। ইমাম হাকেমের বর্ণনা মতে হযরত হোযায়ফা (রা:) বলেন ওয়াসিলা শব্দ দ্বারা নৈকট্য ও আনুগত্য বোঝানো হয়েছে।

ইবনে জারীর হযরত আতা (রাহ:) মুজাহিদ (রাহ:) ও হাসান বসরী (রহ:) থেকে এ অর্থই করেছেন। এই আয়াতের তাফসীরে হযরত কাতাদাহ (রাহ:) বলেন, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো তাঁর আনুগত্য ও সন্তুষ্টির কাজ করে। অত্রএব, আয়াতের সার ব্যাখ্যা এই দাঁড়ায় যে, ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অন্বেষণ করো। হাদীস শরীফে ওয়াসিলা শব্দটি জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়েছে। এর ঊর্ধ্বে কোনো স্তর নেই। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেন তিনি এই স্তরটি আমাকে দান করেন। (মোসনাদে আহমাদ)।

অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন : যখন মুয়াজ্জিন আযান দেয়, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তাই বল। এরপর দরূদ পাঠ করো এবং আমার জন্য ওয়াসিলার দোয়া করো। (সহীহ মুসলিম)।
মাকতুবাত শরীফ এবং তাফসীরে মাজহারীর বিশ্লেষণ অনুসারে জানা যায় যে, ওয়াসিলা শব্দটিতে প্রেম ও আগ্রহের অর্থ সংযুক্ত থাকায় বোঝা যায় যে, ওয়াসিলার স্তরসমূহের উন্নতী মুমিনগণের জন্য আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মহব্বতের ওপর নির্ভরশীল। মহব্বত সৃষ্টি হয় আল্লাহর নির্দেশ পালন ও রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সুন্নাতের অনুসরণের দ্বারা। এই আনুগত্য ও অনুসরণ যে যতখানি প্রদর্শন করতে পারবে, সে ততখানি আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হবে ও প্রিয়জন রূপে বরিত হবে।

সুতরাং ওয়াসিলা শব্দের আভিধানিক অর্থ, মর্ম ও ব্যাখ্যা এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তাফসীর মোজাদ্দেদে আলফেসানী (রাহ:) ও কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ:)-এর বিশ্লেষণ থেকে জানা গেল যে, যে বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়, তাই মানুষের জন্যে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার ওয়াসিলা। ঈমান এবং সৎকর্ম যেমন এর অন্তর্ভুক্ত তেমনি পয়গাম্বর ও সৎকর্মশালীদের সংসর্গ ও মহব্বত উহার অন্তর্ভুক্ত।

কেননা, এগুলোও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভেরই উপায়। একারণেই তাদেরকে ওয়াসিলা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা জায়েজ। হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) স্বয়ং জনৈক অন্ধ সাহাবীকে এভাবে দোয়া করতে বলেছিলেন : ‘হে আল্লাহ। আমি রহমতের নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর ওয়াসিলায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি।’ আল্লাহ পাক তাঁর দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়ে ছিলেন। (তাফসীরে মানার)।

হযরত ওমর ফারুক (রা:)-এর খেলাফতকালে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষের সময় তিনি হযরত আব্বাস (রা:)-কে ওয়াসিলা করে বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছিলেন। আল্লাহপাক তার দোয়া কবুল করে দিলেন এবং বৃষ্টি বর্ষণ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী)।

মোদ্দাকথা হচ্ছে এই যে, আল্লাহপাকের যাত, সিফাত, আসমাউল হুসনা, সৎ আলম যথা সালাত, সাওম, সদকা, যিকির, তিলাওয়াতে কোরআন, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা, ইত্যাদির ওয়াসিলায় দোয়া করা যায়েজ। সুতরাং সৎ আমলের ওয়াসিলায় দোয়া করা যেমন বৈধ তেমনি সৎ ব্যক্তিদের ওয়াসিলায় দোয়া করাও বৈধ। কেননা সৎ ব্যক্তিদেরকে ওয়াসিলা বানানো মূলতঃ তাদের নেক আমলেরই তাওয়াস্সুল মাত্র।



 

Show all comments
  • KAZI MOHAMMED ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
    VERY GOOD EXPLANATION
    Total Reply(0) Reply
  • KAZI MOHAMMED AL MANSUR ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
    EXCELLENT ,INQILAB ALL THE BEST,NO 1 THE DAILY NEWSPAPER IN BANGLADESH
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০৬ এএম says : 0
    এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০২ এএম says : 0
    ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শের নাম। এ আদর্শের দুটো দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে বিশ্বাস বা আকীদাগত দিক আর অন্যটি হচ্ছে আমল বা প্রয়োগগত দিক। প্রতিটি মানুষ তার মনের যে ধ্যান ধারণা পোষণ করে, যে আকীদা বিশ্বাস লালন করে বাস্তব বা আমলের ক্ষেত্রে তারই প্রতিফলন ঘটে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৩ এএম says : 0
    ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতেتوسل বা ওয়াসিলা গ্রহণ করার অর্থ বর্ণনায় আল্লামা নাসীব আর রিফায়ী বলেন- هو التقرب إلى الله تعالى بطاعته وعبادته واتباع أنبيائه ورسله وبكل عمل يحبه ويرضاه ـ “আল্লাহর বিধি-বিধানের অনুসরণ করা, তাঁর ইবাদত করা, তাঁর রাসূলের পথ নির্দেশ অনুযায়ী চলা এবং এমন সব কাজ করা যা তিনি পছন্দ করেন। এ সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হবার নাম হচ্ছেتوسل বা ওয়াসিলা গ্রহণ।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৪ এএম says : 0
    সহজ কথায় বলা যায়, ইসলামী শরীআতের নিকট গ্রহণযোগ্য- ভাল কাজ বা আমলে সালিহ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে তাওয়াসুল বা ওয়াসিলা গ্রহণ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৪ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা আমাদের কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন!
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:০৫ এএম says : 0
    জনাব লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ্‌ এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন. অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ লেখার জন্য এবং প্রকাশ করে আমাদের উপকার করার জন্য আপনা দের কে অনেক ধন্যবাদ.
    Total Reply(0) Reply
  • jalal kazi ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:১৯ এএম says : 0
    Ameen
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ পিএম says : 0
    Heart-touching article from Mr Fazlur Rahman Munshi. Islam is a complete code of life consisting of Shariath, Tarikat, Hakikat & Marefat.
    Total Reply(0) Reply
  • আলমগীর কবীর ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৩২ পিএম says : 0
    ১. যে কোন নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অসিলা কামনা করা যায়। ২. জীবিত যে কোন নেককার ব্যক্তির মাধ্যমে অসিলা চাওয়া যায়। যেমন ইবনে আব্বাস রাঃ এর ঘটনা। ৩. মৃত ব্যক্তির কাছে/মাধ্যমে অসিলা তালাশ করা যাবে না। ৪. আজানে নবী সাঃ এর জন্য যে অসিলা চাওয়া হয় তা মূলত তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির দোয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur+Rashed ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৮ পিএম says : 0
    To understand the zest of this article, it will require higher level of studies about holy Islam. People having education of grass-root level, will not be able to understand the meanings of this article. That is why, Muslim society is moving backward day by day.
    Total Reply(0) Reply
  • আনিস ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১০ পিএম says : 0
    এ ধরনের ধর্মভিত্তিক লেখা আরও পড়তে চাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন