Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হাইকোর্টের জামিনাদেশ বাতিল : চার দফা নির্দেশনা আপিলে স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে সেটির অপব্যবহার না করলে বিচারিক আদালত সেই জামিন বাতিল করতে পারবে না। এই মর্মে চার দফা নির্দেশনা দিযেছিলেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশনা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এছাড়া আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্দেশনা স্থগিতের আদেশ বহাল রাখেন। আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ উপরোক্ত আদেশ দেন। এ কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

এর আগে চট্টগ্রামের বাসিন্দা মো. ইব্রাহিমের জামিন বিষয়ে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ৪ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো.হাবিবুল গণি এবং বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের তৎকালিন ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন।

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে, (১) হাইকোর্ট বিভাগ থেকে কোনও আসামি যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পান,তবে জামিনের অপব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন না। (২) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ দাখিল না করার কারণে অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠাতে পারবেন না। (৩) সংশ্লিষ্ট আসামি বা ব্যক্তির জামিন বাতিল করতে হলে তিনি হাইকোর্টের যে রুল বা আপিলে জামিন পেয়েছেন, সেই রুল বা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং (৪) হাইকোর্ট যে রুলে বা আপিলে জামিন দিয়েছেন,তা খারিজ না হওয়া পর্যন্ত অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন না। তবে, হাইকোর্টের দেয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গ করলেই শুধু জামিন বাতিল করা যাবে।

উপরোক্ত রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, হাইকোর্ট থেকে জামিনের পর নিয়মিত সংশ্লিষ্ট আদালতে (অধস্তন আদালত) হাজিরা দিচ্ছেন,এমন আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। জামিনের অপব্যবহার না করলেও শুধু জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর হাইকোর্টের আদেশের কপি দাখিল না করার কারণে এই জামিন বাতিল করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অধস্তন আদালত থেকে প্রায়ই এমনটি করা হচ্ছে। দিনের পর দিন এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হাইকোর্ট ও বিচারপ্রার্থীরা আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই উপরোক্ত নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের এই নির্দেশনাগুলো স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে সরকারপক্ষীয় আইনজীবীরা।

উল্লেখ্য, মো.আবু বকর চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি তার ৮ বছরের ছেলেকে বলাৎকারের অভিযোগে মো. ইব্রাহিম নামে একজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় ২০১৮ সালের ১৬ মে মামলা করেন। এ মামলায় ওইদিনই পুলিশ ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে। ইব্রাহিম চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাকে জামিন না দিলে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তাকে ৬ মাসের জামিন দেন। সেই সঙ্গে রুল জারি করেন। এরপর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ অবস্থায় পুলিশ তদন্ত শেষে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ইব্রাহিম ২০১৯ সালের ১৯ জুন চট্টগ্রামের ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু ওই আদালত তার আবেদন খারিজ করে তাকে আবারও কারাগারে পাঠান। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। ২০২০ সালের ২৬ জুন হাইকোর্ট তাকে ৩ মাসের জামিন দেন। আদালত একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারককে তলব করেন। বিচারক ১৪ জুলাই হাইকোর্টে হাজির হয়ে ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের ব্যাখ্যা দেন। পরে ২১ জুলাই লিখিতভাবে হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। শুনানি শেষে আদালত ২০১৯ সালে ৪ দফা নির্দেশনা জারি করে রায় ঘোষণা করেন। সেই চার দফার ওপর স্থগিতাদেশ দেন আপিল বিভাগ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জামিন

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ