বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বজাহানের সুন্দরতম মানুষটির মহোত্তম জীবন ছিল গোটা মানবজাতির জন্য অনুসরণীয় এক পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ। মানব চরিত্র মনের কোন দিকটি এমন রয়েছে যেখানে প্রিয়তম রাসূলের আদর্শিক দিক-নির্দেশনা নেই? মানব সভ্যতার কোন পথটি এমন, যে পথে পড়েনি তার প্রিয় পদরেখা। মুসলিম উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হযরত আবু বকর (রা.)-এর ভাষায়, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) সবসময় চিন্তামগ্ন থাকতেন। উদ্বেগ তার লেগেই থাকত।’ এ চিন্তা-ভাবনা ও উদ্বেগ তার গুরুদায়িত্ব পালনের। বিশ্ব মানবতার মুক্তপথ রচনার। মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টির।
এত ভাবগম্ভীর ও চিন্তাভাবযুক্ত মানুষটি যেমন জীবনধর্মী ছিলেন, ঠিক তেমনি জীবনের সব ক’টি অঙ্গনে তার অংশগ্রহণও ছিল নিপূণতায় সমুজ্জ্বল। আপন মহিমায় ভাস্বর। একবার প্রিয়নবীর সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রা.)-কে প্রশ্ন করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কি কখনো হাস্য-রসিকতাও করতেন, মা আয়েশা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, করতেন তবে যত্রতত্র নয়। স্থান-কাল-পাত্র ও সম্বোর্ধিত ব্যক্তিটির যোগ্যতানুসারে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র জীবন থেকে কতিপয় নির্বাচিত ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। একবার জনৈক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর দরবারে এসে সওয়ারী উপযোগী একটি উটের জন্য আবেদন জানালো। হুযুর আকরাম (সা.) বললেন, আমি তোমাকে উটের একটি বাচ্চা দান করব। লোকটি হতাশ হয়ে বলল, উটের বাচ্চা নিয়ে আমি কী করব? প্রিয়নবী জবাব দিলেন, বড় উটও তো একটি উটনীর বাচ্চাই হয়ে থাকে। এ বর্ণনাটি হযরত আনাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত।
হাস্য-রসিকতার উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে আনন্দ দান এবং নিজের চিত্তের নির্দোষ বিনোদন। এতে কারো মনে কষ্ট হলে বা আপন ব্যক্তিত্ব আহত হলে, এটা আর অনাবিল হয় না। মিথ্যা ও প্রতারণার মিশ্রণ ঘটলে তো এ রসিকতা বৈধই থাকে না। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন : লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জানতে চাইল, হুজুর, আপনি কি হাস্য-রসও করেন? তিনি উত্তর দিলেন, অবশ্যই, তবে কেবল সত্য কথা ও বিষয়কে অবলম্বন করেই এমন করে থাকি।
ত্রিভুবনের প্রিয় এ মানুষটির সত্যনির্ভর নির্মল রসিকতার উদাহরণস্বরূপ এ ঘটানাটি উল্লেখ করা যায়। এক বৃদ্ধা মহানবী (সা.)-এর সমীপে উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ, দোয়া করবেন আমি যেন জান্নাতবাসিনী হই। রাসূলুল্লাহ অবলীলাক্রমে জবাব দিলেন, বুড়িরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বৃদ্ধা এতে সীমাহীন উদ্বিগ্ন হয়ে কান্না জুড়ে দিলো। রাসূল করীম (সা.) এ অবস্থা দেখে বুঝিয়ে বললেন, জান্নাতে কেউ বৃদ্ধ অবস্থায় প্রবেশ করবে না। এ কথা শুনে বুড়ি শুধু আশ্বস্তই হলো না বরং একগাল হেসে খুশী মনে বাড়ি ফিরে গেল।
প্রিয়নবী (সা.)-এর দরবারে এক মহিলা হাজির হলে তিনি তার স্বামীর নাম জানতে চাইলেন। মেয়ে লোকটি নাম বলল। হুজুর তখন লোকটিকে চিনতে পেরেছেন এমন ভাব দেখিয়ে বললেন, ও, ওই সাদা চোখওয়ালা লোকটা তাই-না। মহিলাটি বাড়িতে গিয়েই তার স্বামীর চোখ দু’টো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল। স্বামী বলল, আরে তোমার হলোটা কী? মেয়ে লোকটি জবাব দিলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি নাম বললাম। তিনি বললেন, ও, ওই লোকটি, যার চোখে সাদা রং রয়েছে। এ কথা শুনে স্বামী বললো; আমার চোখে কি সাদা রং নেই? কালোর চেয়ে সাদা অংশ কি বেশি নয়?
তিনি নিজে যেমন হাস্য-রস করতেন, তার সাহাবীদের পক্ষ হতে কোনো রসিকতা প্রকাশ পেলে একে সহজভাবে নিতেন এবং সমানভাবে তা উপভোগ করতেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।