Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রশিক্ষণের নামে নেয়া টাকা বৈধ করতে নীতিমালা করছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিধিবহির্ভূতভাবে প্রশিক্ষণের নামে নেয়া প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা বৈধ করতে নতুন নীতিমালা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ৩ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের ৭৪তম সভায় প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া তোলা হয়েছে। এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্বাচন কমিশন শিগগিরই চূড়ান্ত করবে।
চলতি সংসদ ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় বিধিবহির্ভূতভাবে প্রশিক্ষণের নামে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয় দেখায় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার এবং ইসির কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে ভাতা হিসেবে এত টাকা নেন। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এরপর এ বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতরও। অনিয়ম ধরা পড়ার পর নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) সেই সময়ের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুককে ঢাকা থেকে বদলি করা হয়। তিনি এর মধ্যে কিছু টাকা ফেরতও দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং এখন আইন পরিবর্তন করে বিষয়টি বৈধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর জানিয়েছেন, নির্বাচনি প্রশিক্ষণের ভাতা নিয়ে ভবিষ্যতে অডিট আপত্তি যাতে না আসে, সেজন্য প্রশিক্ষণ নীতিমালা করা হচ্ছে। কমিশনের সভায় প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া তোলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবারও সভায় উপস্থাপন করতে বলেছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, প্রশিক্ষণ ভাতা নিয়ে যেহেতু অডিট আপত্তি হয়েছে, তাই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অডিট আপত্তি না আসে, তার জন্য ইসি সচিবালয় থেকে একটি নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশনের বক্তব্য প্রশিক্ষণের পদ ও ভাতার হার নির্ধারণের বিষয়ে কমিশনই ক্ষমতাপ্রাপ্ত, তারা অনুমোদন দিতে পারে। কিন্তু অডিট বিভাগ মনে করছে, কোন খাতে ব্যয় হবে তা কমিশন নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু প্রশিক্ষণে ভাতার হার ও পদের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
সচিব মো. আলমগীর বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত পদ ও হার অনুযায়ী, প্রশিক্ষণ ভাতা দেয়া হলে আর আপত্তি আসবে না। তিনি বলেন, প্রথমে ইসি এটা মনে করলেও অডিট আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত পদের বাইরে নীতিমালায় ‘বিশেষ বক্তা’ ও ‘কোর্স উপদেষ্টা’সহ বিভিন্ন পদ রাখার বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মো. আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিশন সচিবালয়কে খসড়া প্রশিক্ষণ নীতিমালা পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রশিক্ষণে কী কী পদ থাকবে ও কী হারে সম্মানী দেয়া হবে, সেই প্রস্তাব চূড়ান্ত করে আবারও কমিশন বৈঠকে তোলা হবে। কমিশন সভা সেটা চূড়ান্ত করলে তা অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে আর অডিট আপত্তি না আসে।
দায়িত্বে থাকাবস্থায় সারাদেশ থেকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুকের সম্মানী নেয়ার যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, সেটাতো অডিট আপত্তিতে এসেছে। অডিট বিভাগের পরীক্ষায় যেটা ফাইন্যান্সিয়াল রুল অনুযায়ী হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে অডিট আপত্তি দিয়েছে। সেগুলোর জবাব তৈরি করে দিয়েছি। তিনি বলেন, অডিট অধিদফতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়ম অনুযায়ী পেলে অডিট নিষ্পত্তি করবে। আর যদি মনে করে, ঠিকমতো হয়নি, নিয়ম অনুযায়ী হয়নি, তাহলে সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরত দিতে বলবে। এটা অফিসিয়াল প্রক্রিয়া। যার বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি এসেছে, সেই জবাব দেবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অডিট অধিদফতরের দৃষ্টিতে যেসব নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ভাতা নেয়া হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে আপত্তি দিয়েছে। এরপর জবাব দেয়া হয়েছে। অনেকগুলো তারা মেনে নিয়েছে। অন্যগুলোর আরো কিছু তথ্য চেয়েছে। ইটিআই-এর এডিজি জবাব দেবেন। জবাবে তারা সন্তুষ্ট হলে তা মেনে নেবে। আর যদি মনে করে আইন ও নিয়ম অনুযায়ী হয়নি, তখন ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলবে। এ প্রক্রিয়ায় অডিট নিষ্পত্তি হবে।
নির্বাচন কমিশনারদের প্রাধিকার সংক্রান্ত আইনের খসড়ার বিষয়ে ইসির সচিব বলেন, খসড়া আইনটি সংশোধন সাপেক্ষে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে কমিশনারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা না থাকাই ভালো। যেহেতু বিচারপতিদের গাড়িতে জাতীয় পাতাকা থাকে না, তাই কমিশনারদের গাড়িতে তা না থাকাই ভালো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ