বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নরসিংদীতে সুতার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতি কাউন্টের সুতার পাউন্ড প্রতি মূল্য বেড়েছে ২০ থেকে ২৮ টাকা। কিন্তু পাশাপাশি কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় পাওয়ার লুম মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। ছোট বড় ও মাঝারি আকারের কমবেশি ৫ সহস্রাধিক পাওয়ার লুম ফ্যাক্টরি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই লোকসানের শিকার মাধবদী ও নরসিংদী শিল্প এলাকায় কমবেশি ছয় শত পাওয়ার লুম ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে আরো শত শত পাওয়ার লুম ফ্যাক্টরি। ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত গ্রে কাপড়ে গজ প্রতি লোকসান যাচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা। মুনাফাখোর স্পিনিং মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মিলিতভাবে সুতার এই মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পাওয়ারলুম মালিকরা। তারা জানিয়েছে গত নভেম্বর মাসে ৪০/১ কাউন্টের কটন সুতার পাউন্ড প্রতি মূল্য ছিল ১০৮ থেকে১১৭ টাকা। গত এক মাসের ব্যবধানে এই সুতার মূল্য দাঁড়িয়েছে১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। ৫০/১ কাউন্টের কটন সুতা বিক্রি হতো ১৩২ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। বর্তমান বাজারে এই সুতার মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি পাউন্ড ১৫২ টাকা। বাইনের সুতা ৫০/১ কাউন্টের মূল্য ছিল ১২০ থেকে ১৩৩ টাকা। এই কাউন্টের সুতা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪১ টাকা। পলিয়েস্টার সুতায় প্রকারভেদে পাউন্ড প্রতি মূল্য বেড়েছে ২৫ থেকে থেকে ২৮ টাকা। পূর্ব মূল্যে সুতা কিনে কাপড় তৈরি করে লাভ হত গজপ্রতি আট আনা থেকে দেড় টাকা। বর্তমান বাড়তি মূল্যে সুতার কিনে কাপড় তৈরি করে গজপ্রতি লোকসান হচ্ছে দেড় থেকে ২ টাকা। এই অবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাওয়ার লুম ফ্যাক্টরিগুলো লোকসান গুনতে গুনতে বাজার টিকে থাকতে পারছে না। এই অবস্থায় অনেক ক্ষুদ্র মালিকরা তাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
পাওয়ারলুম মালিক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুধু নরসিংদীর চৌয়ালা শিল্প এলাকায় কমবেশি ২০০ পাওয়ার লুম বন্ধ হয়ে গেছে। পাওয়ার লুম বিশেষজ্ঞ মাধবদীর এমদাদুল ইসলাম খোকন জানিয়েছেন, মাধবদী এলাকায় কমবেশি ৮০০০ ছোট-বড় মাঝারি আকারের পাওয়ার ফ্যাক্টর রয়েছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্র আকারের অনেক পাওয়ার লুম বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝারি আকারের পাওয়ার লুমগুলো একসেপ্ট করে কাজ চালাচ্ছে আবার এক শিফট বন্ধ রাখছে। শ্রমিকদেরকে বাঁচানোর জন্য কোন কোন ফ্যাক্টরি রাতে চালাচ্ছে দিনে বন্ধ রাখছে। দিনে চালাচ্ছে, রাতে বন্ধ রাখছে। এভাবেই গত এক মাস ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পাওয়ার লুম ফ্যাক্টরিগুলো।
বড় বড় পাওয়ারলুম ফ্যাক্টরিগুলো সরকারের প্রণোদনা পেলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাওয়ারলুম মালিকরা সরকারি কোন প্রণোদনা পাচ্ছে না।
এমদাদুল ইসলাম খোকন জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ফ্যাক্টরি মালিকরা নিজেদের সঞ্চিত ২ দিয়ে ফ্যাক্টরি চালায়। এদের বেশির ভাগ মালিকই ব্যাংক থেকে কোন ঋণ গ্রহণ করেনি। যার ফলে ব্যাংকের সাথে তাদের কোন লেনদেন না থাকায় তারা সরকারের প্রণোদনা পাচ্ছে না। পক্ষান্তরে বড় বড় ফ্যাক্টরির মালিকরা ব্যাংক ঋণের ভিত্তিতে ফ্যাক্টরি চালায় বিধায় তারা সরকারি প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে। সুতা উৎপাদনকারী নরসিংদীর কয়েকজন স্পিনিং মিল মালিকের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে চুলার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সুতার দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পাওয়ারলুম মালিকরা বলছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে তারা ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি পাউন্ড চুলার মূল্য বেড়েছে মাত্র ১০ সেন্ট বা সাড়ে ৮ টাকা। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সুতার মূল্য বেড়েছে পাউন্ড প্রতি ২৮ টাকা। এ থেকে বুঝা যায় স্পিনিং মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সুতার মূল্য বাড়িয়েছে। তারা তাদের ইচ্ছেমতো সুতার মূল্য বাড়িয়ে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে মুর্শিদি মাধবদীসহ দেশেরক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের হাজার হাজার ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবেক্ষুদ্র ও মাঝারি মালিকরা। বেকার হয়ে যাবে লাখ লাখ পাওয়ারলুম শ্রমিক। মারাত্মক ধকল সৃষ্টি হবে দেশের অর্থনীতির উপর। কারণ সুতার এই অগ্নিমূল্যের প্রভাব পরবে দেশের বস্ত্রশিল্প এবং তৈরি পোশাক শিল্পের উপর। তৈরি বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের মূল্য বেড়ে গেলে আন্তর্জাতিক বায়াররা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক নিতে চাইবে না। বাংলাদেশ যদি তৈরি পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার হারায় তবে জাতীয় অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে পড়বে। আর এই বিপর্যয় ঠেকাতে হলে সুতার অগ্নিমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।