Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আমি অহনে কারে নিয়া বাঁচুম

দুর্ঘটনায় একই সঙ্গে তিন বোনের মৃত্যু, শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

‘ভাই বোনদের মানুষের মতো মানুষ বানানোর জন্য নিজের দিকে একবারের জন্যও তাকায় নাই খায়রুন। খাইয়া না খাইয়া লেহাপড়া করাইয়া বোনগুলোরে মানুষ ঠিকই বানাইছে। কিন্তু আজকে আমারে রাইখা একসঙ্গে আমার তিনডা মাইয়া চইলা গেল। আমি অহনে কারে নিয়া বাঁচুম। আল্লাহ তুমি আমারে নিয়া আমার মাইয়াগুলারে বাঁচাইয়া রাখতা’। বিলাপ করতে করতে বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় তিন মেয়ের মৃত্যুতে শোকের কাতর এক মা হোসনে আরা বেগম। ২০ বছর আগে হারিয়েছেন স্বামীকে। সন্তানদের বুকে চেপে রেখে এতদিন বেঁচে থাকলেও গত শুক্রবারে একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তার সব স্বপ্ন। গতকাল সকালে নিহত তিন বোনের লাশ লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে চরসিন্দুর ইউনিয়নের চলনা গ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা হোসনে আরা। এর আগে গত গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীর পাড়ে ঘুরে ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জঙ্গুয়া এলাকায় তাদের বহনকারী প্রাইভেট কারটি দুর্ঘটনার শিকার হলে তারা তিনজনই প্রাণ হারান। 

নিহতরা হলেন, নরসিংদীর পলাশের খায়রুন নাহার (৩৫), কামনা আক্তার (২৫) ও জামিয়া বেগম তৃশা (১৮)। সম্পর্কে তাঁরা আপন তিন বোন। তারা সবাই উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়ের চলনা গ্রামের মৃত আশাদুজ্জামানের মেয়ে। এ ঘটনায় প্রাইভেট কারের চালক নোয়াব আলী (৫৪) নামের আরেকজন নিহত হয়েছেন এবং রুনা আক্তার (৩০) নামের একজন গুরুতর আহত হন। নিহত নোয়াব আলী কুষ্টিয়ার মিরপুরের ইয়াকুব আলীর ছেলে। তিনি গাজীপুরের একটি কারখানার বায়িং হাউজের ব্যবস্থাপক ছিলেন।
স্বজনরা জানান, নিহত তিন বোনের বাবা আশাদুজ্জামান মারা যান প্রায় ২০ বছর আগে। অভাব-অনটনের সংসারে একমাত্র উপার্জনের হাতিয়ার ছিল বড় বোন খায়রুন নাহার। তিনি লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন। মেজ মেয়ে কামনাও সবেমাত্র লেখাপড়া শেষ করে একটি চাকরি করার চেষ্টা করছিলেন। সবার ছোট মেয়ে জামিয়া বেগম তৃশা অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল। প্রতিবন্ধী একটি ভাই ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভালোই চলছি তাদের সংসার।
ছোট বোন দুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে ভালো মানুষ করার চিন্তায় এখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি বড় বোন খায়রুন নাহার। গত শুক্রবার দুপুরে ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে বেড়ানোর জন্য খালাতো বোন রুনার পরিচিত নোয়াব আলীর প্রাইভেট কারে করে খায়রুন নাহার, কামনা ও তৃশা ভৈরবে ঘুরতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে তাদের বহনকারী প্রাইভেট কারটি বেলাব উপজেলার জাঙ্গুয়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা আল মোবারকা পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস অপর আরেকটি বাসকে অতিক্রম করার সময় তাদের প্রাইভেট কারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেট কারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই চালক নোয়াব আলীসহ তিন বোন নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় রুনাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিন-বোনের-মৃত্যু

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ