বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম ততদিন স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল থাকবে, যতদিন ইসলামের দাওয়াত চালু থাকবে। কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা থাকবে। নবী রাসূলগণের আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
মুসলমানদের শিক্ষার অন্যতম বিষয় হলো, কোরআন ও সুন্নায় গভীর জ্ঞান অর্জন করা। আর এই কাজ অব্যাহত রাখতে গিয়ে শত্রুর মুখোমুখি হতে হবে। অনুসারীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সেই জন্য নবীগণ এই উম্মতের উলামাদের ওপরে নবুওয়াতি ধারার দাওয়াত চালিয়ে যাওয়ার জন্য জিম্মাদারি দিয়ে গিয়েছেন। উলামায়ে কেরাম কীভাবে এই কাজ আঞ্জাম দিবেন তার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরায় তা বর্ণিত হয়েছে। সুরা নাহাল এর ১২৫-১২৮ নং আয়াতে খুব গুরুত্বপুর্ণ কিছু নির্দেশনা রয়েছে। এ আয়াতের মর্মার্থগুলো যদি এই সময়ের উলামায়ে কেরাম অনুসরণ করেন, তাহলে সমাজে বিদ্যমান অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
আয়াতগুলোর ভাবার্থ আলোচনা করা হলো: (ক) ইরশাদ হচ্ছে, আপনি লোকদেরকে সত্য পথে, আল্লাহর দিকে আহ্বান করুন প্রজ্ঞার দ্বারা, সদুপদেশ প্রদান করার দ্বারা, আর যদি কখনো একান্তই বিতর্ক করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করুন। কে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে, আল্লাহর পথ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে, বিপথগামী হয়ে গিয়েছে, আর কে সঠিক পথে অবিচল আছে, অটল আছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
(খ) মুমেনদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ইসলামের শত্রুদের অন্যায় ও জুলুমের মোকাবেলায় যদি তাদের ওপরে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেই হয় তাহলে ততটুকুই করতে হবে যতটুকু অন্যায় তারা করেছিল। এর থেকে যেন বেশি না হয়ে যায়। সুযোগ পেলেই তাদের ওপরে প্রতিশোধ গ্রহণে সীমালঙ্ঘণ করা হবে অন্যায়। আর যদি সুযোগ পাওয়া সত্তে¡ও প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ধৈর্যধারণ করা হয়, তাহলে এটাই হলো অতি উত্তম পদ্ধতি।
(গ) আর ধৈর্যধারণ করতে পারাটাও আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে থাকে। সুতরাং প্রতিশোধ গ্রহণ না করার কারণে তোমরা দুঃখ করো না, অস্থির হয়ে উঠো না। আর তারা যে অনবরত ষড়যন্ত্র করেই যেতে থাকে তা দেখেও মনঃক্ষুন্ন হয়ে উঠো না।
(ঘ) নিশ্চয়ই জেনে রেখো যে, আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অবলম্বনকারীদের সাথেই আছেন। আর যারা সৎকর্মপরায়নশীল তাদের সাথেই আছেন।
উপরোক্ত আয়াতসমূহের সারমর্ম দাঁড়ায়, ইসলামী জ্ঞানে পন্ডিতগণ প্রতিশোধপরায়ণ হবেন না। দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রজ্ঞাপূর্ণ পথ অবলম্বন করবেন। দায়সারাভাবে দাওয়াত দেয়ার কারণে যদি ইসলামেমর ক্ষতি হয়, তাহলে এর জন্য আলেমগণই দায়ী থাকবেন। আর ইসলামের যারা শত্রু, তারা সবসময় চেষ্টা করবে কীভাবে আলেমদেরকে কষ্ট দেওয়া যায়, এগুলো দেখেও ধৈর্যধারণ করতে হবে। তাকওয়ার খেলাফ কোনো কাজ করা যাবে না।
কারণ মুমেনের এটা বিশ্বাস যে, সবকিছুই আল্লাহ দেখছেন। তিনিই ভালো জানেন কোনটায় কল্যাণ আর কোনটায় অকল্যাণ নিহিত। আজকাল অনেক বক্তাকে দেখা যায়, তারা কঠোর ভাষায় ভিন্নমতের মানুষের সমালোচনা করেন। সামান্য দূরত্ব সৃষ্টি হলে তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিতে কোনো প্রকার ত্রুটি করেন না। ইসলামের কোনো বিষয়ে কেউ উল্টা-পাল্টা বললে তাৎক্ষণিক তাকে নাস্তিক-মুরতাদ আখ্যায়িত করে মিল্লাত থেকেই বের করে দেন।
অথচ বক্তা একজন দ্বীনের দাঈ। তাঁর ব্যবহার দেখে মানুষ অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আমাদের কথার অতিরঞ্জনের কারণে মানুষ দ্বীন থেকে আরো বেশি করে দূরে সরে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা উম্মাতের দাঈদের মধ্যে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর সুন্দর বিষয়গুলো আরো ভালোভাবে ধারণ করার তৌফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।