Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরি-বোরো মাঠের নিচু জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে পরিকল্পনাহীন ভাবে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি

বসবাস করা নিয়ে শঙ্কা

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১৭ পিএম

নওগাঁর পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভা সংলগ্ন ছাতনী উত্তর মাঠের ইরি-বোরো ধান চাষের নিচু জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে পরিকল্পনাহীন দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি। ইতিমধ্যেই এই মাঠের জমিতে নির্মিত দুর্যোগ সহনীয় বাড়িতে বসবাস করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবার অনেকেই বলছেন ভূমিহীন/গৃহহীনরা যদি স্বাচ্ছন্দ ভাবে এই বাড়িতে বসবাসই করতে না পারে তাহলে নিচু এই মাঠের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা মানে সরকারের অর্থ পুকুরে ফেলে দেওয়া।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ-রাণীনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের তারাপুরের মোড় নামক স্থানের পশ্চিমে ছাতনী মৌজায় অবস্থিত ছাতনী উত্তর মাঠ। এই মাঠের মধ্যে প্রায় ২৮শতাংশ খাস জমি রয়েছে যা স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবত ধান চাষের জমি হিসেবে ভোগদখল করে আসছিলো। নিচু ধান চাষের এই খাস জমির উপর নির্মাণ করা হচ্ছে গৃহহীনদের জন্য ১৪টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি। এই ১৪টি বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকার ১লাখ ৭১হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে দুইটি ঘর, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও টয়লেট-গোসলখানা রয়েছে। বাড়িগুলোতে ইটের দেয়ালের উপর থাকবে উন্নত মানের টিনের ছাউনি। কিন্তু এই মাঠের জমিগুলো হচ্ছে নিচু। ইরি-বোরো ধান চাষের সময় পানিতে তলিয়ে যাবে ঘরগুলোর মেঝে। এছাড়া প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে হাটু পানি জমে এবং ছোট-বড় বন্যার সময় মাঠের এই সব জমির উপর মানুষ সমান পানি জমে যায়। তখন গৃহহীনরা এই সব দুর্যোগসহনীয় বাড়িতে কেমন করে বসবাস করবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই ধারনা করছেন দুর্যোগ সহনীয় বাড়িই প্রতিবছর দুর্যোগ ডেকে আনবে এই সব বাড়িতে বসবাসরত অসহায়-গৃহহীনদের ভাগ্যে। নিচু জমি মাটি কেটে উচু না করেই পরিকল্পনাহীন ভাবে নামমাত্র নির্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পের ঘরগুলো। এছাড়াও রাস্তা থেকে এই প্রকল্পের বাড়ির উপর দিয়ে খোলা তার দিয়ে মাঠের মধ্যে গভীরনলক’প চালানোর জন্য কয়েক হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন চলে গেছে। তাই শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে ও বন্যার পানি জমে নয় বিদ্যুতের লাইন থেকেও যে কোন সময় বড়ধরনের বৈদুতিক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

তারাপুর গ্রামের আনছার আলী, মিলন হোসেন ও স্থানীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন প্রথমে আমরা ভেবে ছিলাম যে রাস্তার পাশে হয়তো বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। তাই থাকার জন্য অস্থায়ী ভাবে ইট দিয়ে ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তিতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে সরকারের পক্ষ থেকে ভ’মিহীন/গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই সব বাড়িতে মানুষ থাকবে কিভাবে? বন্যার সময় এই মাঠের জমির উপর মানুষ সমান পানি চলে আসে। বর্ষা মৌসুমে এই মাঠে যাবার কোন রাস্তা নেই। তাহলে এখানে বসবাসরত মানুষরা কিভাবে চলাচল করবে। বন্যার সময় এখানে বসবাসরত মানুষদের সবকিছু নিয়ে রেললাইনের উপর আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। পরিকল্পনা বিহীন ভাবে এই সব ঘর নির্মাণ করে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কখনই সফলতার মুখ দেখবে না এবং অর্থগুলো পানিতে ফেলে দেওয়া ছাড়াও আর কিছুই নয়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন জমি চ’ড়ান্ত করার দায়িত্ব ভ’মি অফিসের। ওই মাঠের জমিগুলো অনেক নিচু। আমারও মনে হয়েছে জমিতে মাটি কেটে ভরাট না করে ঘর নির্মাণ করলে কেউ সেখানে বসবাস করতে পারবেন না। তবে এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খুব ভালো জানেন।

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন বলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতেই ঘর নির্মাণের জন্য এই খাস জায়গা চ’ড়ান্ত করা হয়েছে। বরাদ্দ কম থাকায় আপাতত বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে পরবর্তিতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরগুলো উচু করে দেওয়া হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ