Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইফা কর্মচারীদের টানা অনশন

বকেয়া বেতন ও চাকরি স্থায়ীকরণ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিগত ১৪ মাস যাবত বেতন বন্ধ থাকায় ২২৪ জন দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আগারগাঁওস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে চার দিন যাবত শীতের মাঝে টানা অনশন কর্মসূচি চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। গত রোববার ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় যোগদান করেন। ঐ দিনই এসব অসহায় মহিলা পুরুষ কর্মচারি কার্যালয়ের নীচে শীতের মাঝে বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনশন শুরু করে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অফিস ত্যাগ করার সময়ে অনশনরত কর্মচারিদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান। এ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত থাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি আনিস মাহমুদ গত সোমবার থেকে অফিসে যাচ্ছেন না।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিবসহ পরিচালকরা এ বন্ধ করে বাসায় ফিরে যেতে অনুরোধ জানায়। তাদের দাবী সহানুভূতির সংগে দেখা হবে বলে তারা জানান। আন্দোলন কারীরা শূন্য পদে তাদের নিয়োগের দাবীতে অনড় থাকেন। তারা মহাপরিচালকে অফিসে আসতে অনুরোধ জানান। তার নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ইফার সচিব ফারুক আহমেদ আন্দোলন বন্ধ করলে মহাপরিচালক অফিসে আসবেন বলে জানান। আন্দোলনকারীরা দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

উল্লেখ্য, অডিট আপত্তির বেড়াজালে পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) ৩৫৯ কর্মচারী প্রায় ১৪ মাস যাবত বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এসব কর্মচারী অনাহার অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছেন। বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় তাদের সন্তানদের পড়া লেখা বন্ধ হয়ে গেছে। বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ কতে না পারায় এসব কর্মচারীর পারিবারিক জীবনে নানা অশান্তি দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইফার দ্বৈত নীতির কারণে কর্মচারীদের মাঝে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইফার দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ২২৪ জন কর্মচারী এবং রাজস্ব খাতের আওতায় ১৩৫ জন কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ বিধি অনুযায়ী না হওয়ায় সরকারের ১৪ কোটি ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ বিগত ১৪ মাস যাবত এসব কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রেখেছে। অডিট আপত্তি ইফার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জালাল , অর্থ সচিব আফজাল উদ্দিনসহ অনেকেরই বিরুদ্ধে থাকলেও তাদের বেতন ভাতা চালু রাখা হয়েছে কি কারণে সেব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না। এছাড়া দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারী ও রাজস্ব খাতের কর্মচারীদের অনেকেইর বেতন ভাতা গত ডিসেম্বর জানায়ারি মাস পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে। অডিট আপত্তির ইফার অনেক ড্রাইভারের বেতন ভাতা বন্ধ রাখা হলেও তাদেরকে ওভার টাইম নিয়মিত দেয়া হচ্ছে। ইফা কর্তৃপক্ষের এমন দ্বিমুখী আচরণে অভিযুক্ত কর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের চার জন খাদেম, আজান ঘরের মাইক অপারেটর, বিক্রয় সহকারী সাইফুল ইসলাম, ড্রাইভার হায়দার, এলডিএ লিমন শেখ, এম এল এস সুমন মিয়া, রেফায়েত উল্লাহ, মো.এনায়েত উল্লাহ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মো. জালাল উদ্দিন, ফাহমিদা সুলতানা, সফুরন বেগম, মাকসুদুর রহমান, বাবুল হোসেন, নিজাম উদ্দিন, জুলফিকার আলী, নাজমুল হোসেন, টিটু মিয়া শাকিলা আক্তর, উপ সহকারী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বাবর ও আলাউদ্দিন আল মামুনসহ অনেকেই বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। তারা খেয়ে না খেয়েই নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে এসব অসহায় কর্মচারী ইফার ডিজি ও সচিবের কাছে গিয়ে তাদের বেতন ভাতা চালুর অনুরোধ জানায়। মুজিববর্ষের আগেই তাদের বেতন ভাতা চালুর প্রতিশ্রæতি দেয়া হলে এখনো এ ব্যাপারে কোনো সুরাহা হয়নি। কান্না জড়িত কন্ঠে একজন ভুক্তভোগি কর্মচারী ইনকিলাবকে বলেন, ইসলামের প্রচার প্রসারের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিঁনি আজ জীবিত থাকলে আমাদের বেতন ভাতা বন্ধের কারণে না খেয়ে থাকতে হতো না। কারণ মরহুম বঙ্গবন্ধু ছিলেন, মানবতাবাদী জাতীয় নেতা। তিনি এ ব্যাপারে নবনিযুক্ত ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামান করেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ