Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০০ দখলদারের কবলে শীতলক্ষ্যা-বালু নদ

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

লোভের ছোঁপের দখলে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ। অভিনব কৌশলে ছোঁপ ফেলে শুকনো মৌসুমে নদ দখলের প্রতিযোগিতা চলে। চলে নির্বিচারে মাছ নিধন। নদে ছোঁপ থাকার কারণে নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। বছরে এসব ঘের থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদে ৩০০ ঘের রয়েছে। এসব ঘের ২০০ দখলদারের কবলে রয়েছে।

দখলবাজরা বলছেন, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ইজারা নিয়েই তারা ঘের করেছেন। উপজেলা ভূমি অফিসে নদী ইজারা দেয়ার কোন নথি নেই বলে জানান কর্তৃপক্ষ। তবে ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের দু’তীরের রূপগঞ্জ অংশে ৩০০ ছোপ ২০০ দখলদারের কবলে রয়েছে। নদের সীমানায় এদের জায়গা-জমি না থাকলেও ক্ষমতার প্রভাবে এরা নদে বাঁশ পুতে ছোঁপ ফেলে। একেকটি ছোঁপ থেকে শুকনো মৌসুমে অন্তত দু’তিনবার মাছ ধরা হয়। প্রতিবারে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়। একটি ঘেরে দু’বারে প্রায় এক লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। সে হিসেবে ৩০০ ঘের থেকে বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ছোঁপ ফেলতে ফেলতে একসময় কৌশলে ভরাট করে ফেলা হয়। পরে নদের কোন চিহ্ন আর থাকে না। এমনও ছোঁপ ফেলা হয়েছে, যেটা নদের মাঝখানে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই ছোঁপ ফেলার আয়োজন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘জাল যার, জলা তার’ সরকারের এই উদার মৎস্য নীতি আইন লঙ্ঘন করে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনকে মাছ শিকারে বাধা দিচ্ছে। নদের স্রোতমুখে ঘের দেয়া, জাল পাতাসহ সব রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর ছোঁপ ফেলে দখলের কাজটি করে যাচ্ছে ওই প্রভাবশালীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদের তারাবো থেকে দাউদপুরের খৈসাইর পর্যন্ত নদের দু’তীরে প্রায় ২০০ ছোঁপ। আর বালু নদের ডেমরা থেকে তলনা পর্যন্ত দু’তীরে আরো ১০০ ছোঁপ ফেলা হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদের ইছাখালী এলাকার আধা কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে ১৩ ছোঁপ। খবর নিয়ে জানা গেছে, এসব ছোঁপের মালিক টুক মিয়া, নুর ইসলাম, আবুল হোসেন, সোলমান, নায়েব আলী, মনির হোসেন, নুর হোসেন মোল্লা, জামান, সামসু মেম্বার, আলম হোসেন, কমুরদ্দিন, বাতেন ও বদু।

কথা হয় ইছাখালী এলাকার ঘেরের মালিক আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির বরাবর, তাই ছোঁপ ফালাইছি। অনুমতি নিমু কে আবার! বছরে দুইবার মাছ ধরবার পারি’। আরেক ঘের মালিক বদু মিয়া। তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মৎস্য অফিস আর এলাকার নেতাগো টেকা আর মাছ দেই। আর গাঙে মাছ ধরমু, এইডার আবার অনুমতি লাগবো ক্যান’।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, নদী দখল করে ঘের দেয়ার কোন বিধান নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৎস্য অফিস টাকা নেয় এটা সঠিক নয়। ভূমি ও মৎস্য অফিসের নাকের ডগায় ১৩ ঘের কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি জানা নেই। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খাঁন বলেন, ভূমি অফিসের ইজারা দেয়ার কোন এখতিয়ার নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীতলক্ষ্যা-বালু নদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ