Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গায়েব শব্দের আভিধানিক ও ব্যবহারিক দিকের সংজ্ঞা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

গায়েব শব্দের আভিধানিক সংজ্ঞা : আরবি ‘গায়েব’ শব্দটি ক্রিয়ামূল, মাছদার। যে বস্তু চোখের দৃষ্টি থেকে লুক্কায়িত তাকে গায়েব বলা হয়।

ইমাম ইবনে মানজুর আল আফরিকী গায়েব শব্দটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, ‘যে বস্তু তোমার কাছে লুক্কালিত তা-ই গায়েব’। ইমাম আবু ইসহাক ‘ইউমিনুনা বিল গায়বি’-এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন : যে বস্তু মুক্তাকীনদের নিকট লুক্কায়িত ছিল, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে উহার খবর দিয়েছেন-তা-ই গায়েব। যেমন মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হওয়া, জান্নাত, জাহান্নাম এবং প্রত্যেক ঐ বস্তু যা তাদের দৃষ্টি সীমার বাইরে। (লিসানুল আরব : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৬৫৪)।

ইমাম ইবনে মানজুর ইবনুল আরবীর সূত্রে গায়েব শব্দের অর্থ করতে গিয়ে আরও লিখেছেন যে, সেই বস্তুও গায়েব যা চোখের দৃষ্টির বাইরে। কিন্তু অন্তরে তা মওজুদ আছে। (তাজুল উরুস খন্ড ১; পৃষ্ঠা ৪১৬)।
ইমাম কুরতুবী গায়েব শব্দের আভিধানিক অর্থ এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন: আরবি ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে গায়েব ঐ বস্তুকে বলে যা আপনার দৃষ্টি হতে লুক্কায়িত। যখন সূর্য ডুবে যায়, তখন বলা হয়- ‘গাবাতিশ শামছু’। আর গীবতের অর্থ তো সর্বজন বিদিত। অর্থাৎ কারোও অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ণনা করা। আর যখন কোনো মহিলার স্বামী নিখোঁজ হয়ে যায়, তখন বলা হয়- ‘আগাবাতিল মার আতু’। সে স্ত্রীলোকটিকে ‘মুগিবাতুন’ বলা হয়।

আর আমরা ‘গায়বাতুন ও গায়াবাতুন-এ পড়ে গেছি কথার অর্থ হলো আমরা গর্তে পড়ে গেছি। আর আল গায়াবাত বৃক্ষের সারিকে বলা হয়। কেননা, এতে একই স্থানে বহু বৃক্ষের সমাবেশ থাকে বিধায়, এগুলোর ফাঁকে লুকিয়ে থাকা যায়। ভ‚মির নিচের অংশকেও আলগায়েব’ বলা হয়। কারণ তা দৃষ্টি শক্তির বাইরে। (আল জামেউলি আহকামিল কোরআন: খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬৩)।

আমরা এ পর্যন্ত গায়েব শব্দের যে আভিধানিক অর্থ জানার চেষ্টা করেছি, তা আল কোরআনের নিম্নোক্ত দু’টি আয়াত দ্বারাও সমর্থিত। যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর আমি তাদের নিকট পূর্ণ জ্ঞানের সাথে তাদের কার্যাবলী বিবৃত করাই আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না। (সূরা আরাফ : আয়াত ৭)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে ভীত সন্ত্রস্ত। (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ৪৯)। এতে বুঝা যায় যে, আল্লাহপাকের সত্তাকে এই পৃথিবীতে দেখার জো সেই। তবে, তিনি আছেন এ বিষয়ের জ্ঞান দৃষ্টিশক্তি ও দলিল প্রমাণ দ্বারা হাসিল করা যায়।

‘গায়েব’ শব্দের ব্যবহারিক সংজ্ঞা : আভিধানিক দৃষ্টিতে প্রত্যেক ঐ বস্তু যা আমাদের দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে, তাকে গায়েবের (অদৃশ্যের) আওতায় আনা যায়। কিন্তু ব্যবরাহিক দৃষ্টিকোণ অনুসারে গায়েবের ব্যবহার শুধু ঐ সকল বস্তুর ওপর হয়, যেগুলোর জ্ঞান পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা হাসিল করা যায় না। এমন কি গভীর প্রজ্ঞার দ্বারাত্ততা’ জানা যায় না। বরং এগুলোর খবর আম্বিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে লাভ করা যায়।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, মক্কা শহরটি গায়েব নয়। কেননা, কেউ হয়ত স্বচক্ষে শহরটি দেখেছেন কিংবা ভ্রমণকারীদের মুখে তার বর্ণনা শুনেছেন। কিন্তু জ্ঞান লাভের কোনো উপায় উপকরণ ছাড়া এ কথা বলা যে মক্কা শহরের অমুক বাড়ীর অমুক কোঠায় এ কাজটি হচ্ছে। তা’ গায়েব। এলমে গায়েবের এই সংজ্ঞাটি জমহুর মুফাস্সেরীনে কেরামের ঐকমত্যে গৃহীত ও অভিনন্দিত। নিম্নে তাদের কয়েকজনের দেয়া অভিমত তুলে ধরা হলো। যথা :

(ক) ইমাম রাগেব ইস্পাহানী গায়েব শব্দের ব্যবহারিক অর্থ এভাবে করেছেন। গায়েবের দ্বারা প্রত্যেক ঐ অদৃশ্য বস্তুকে বুঝানো হয়, যা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুভব করা যায় না এবং বুদ্ধিদীপ্ত আকল দ্বারা ও যা উপলব্ধি করা যায় না। বরং তা’ আম্বিয়ায়ে কেরাম প্রদত্ত খবরের মাধ্যমে জানা যায়। (আল্ মুফরাদাতু ফী গারিবিল কোরআন : পৃষ্ঠা ৩৬৭)।

(খ) কাজী নাসিরুদ্দিন বায়জাভী গায়েবের ব্যবহারিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন : গায়েব দ্বারা ঐ গোপন বস্তুকে বুঝানো হয় যা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের নাগালের বাইরে। এবং যা বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। (আনওয়ারুত তানজিল : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮)।

(গ) ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী লিখেছেন : গায়েব উহাকেই বলে যা ইন্দ্রিয়ানুভূতি হতে অনুপস্থিত। (তাফসীরে কবীর : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭)। মোটকথা, গায়েব হলো ঐ বস্তু যার জ্ঞান প্রখর বুদ্ধিমত্তার দ্বারা জানা যায় না এবং পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারাও তা হাসিল করা যায় না।



 

Show all comments
  • Cht BD ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
    জাজাক আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • আশিক ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২১ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Badrul Huda ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:০২ এএম says : 0
    I would like to write islamic article.Please give me islami jibon gmail
    Total Reply(0) Reply
  • মেঘদূত পারভেজ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৩২ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ আমাদের কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তৌফিক দিন
    Total Reply(0) Reply
  • সৈকত ফকির ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৩২ এএম says : 0
    ইসলামি নিবন্ধের জন্য আল্লাহ ইনকিলাবকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল মাওয়া ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৩৩ এএম says : 0
    আমি নিয়মিত আপনাদের ধর্মীয় লেখা পড়ি।
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৯ পিএম says : 0
    Mr Fazlur Rahman Munshi is an exceptional writer in The Daily Inqilab who concentrates in fundamental articles.
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Kamrul Hasan ২৪ মার্চ, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
    আজকের গায়েব নিয়ে কত কথা.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন