বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দোজাহানের শাহেনশাহের জীবনের প্রতিটি চাল-চলন ও কর্মকান্ডে রয়েছে উম্মতের জন্য বহু মূল্যবান শিক্ষা। তিনি ইচ্ছা করলে রাজকীয়ভাবে জীবনযাপন করতে পারতেন, সে সুযোগ তার সর্বদাই ছিল। কিন্তু তা তিনি গ্রহণ করেননি। পোশাকের ক্ষেত্রে একটি ঘটনা দিয়ে আলোচ্য বিষয়ের অবতারণা করতে চাই। বায়হাকির বরাতে ‘শরহে সফরুস সাআদাত’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আনসার গোত্রের এক মহিলা আমার কাছে আসে এবং সে দেখতে পায় হুজুর (সা.) এর বিছানা এক পুরোনো ‘কাতিফা’ অর্থাৎ মোটা চাদর আবৃত। সে তার গৃহে গমন করে এবং একটি উৎকৃষ্ট বিছানা প্রেরণ করে। হুজুর (সা.) এসে দেখেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটি কি?’ হজরত আয়েশা (রা.) কেচ্ছা বর্ণনা করেন। হুজুর (সা.) বলেন, ‘হে আয়েশা! এটি ফেরত দাও। আল্লাহর কসম! আমি যদি চাই তাহলে আল্লাহপাক সোনার পাহাড় আমাকে দান করবেন।’ কিন্তু আল্লাহর নিকট তিনি কখনো সোনার পাহাড় তলব করেননি, বরং তিনি আল্লাহর দরবারে এই বলে প্রার্থনা করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে মিসকিন হিসেবে জীবিত রাখ, মিসকিন হিসেবে মৃত্যু দান কর এবং মিসকিনদের সাথে হাশর কর।’
হুজুর (সা.) সর্বদা গরিব মিসকিনদের সাথে এমন উত্তম আচরণ করতেন যে, তারা নিজেদের অভাব ও নিঃস্ব অবস্থাকে রহমত ও সৌভাগ্য মনে করত এবং আমির ধনী লোকেরা অনুতাপ করত যে তারা কেন গরিব হলো না। হুজুর (সা.) ‘আল ফাকর, ফাখরী’ (দারিদ্র্য আমার গর্ব) বলে এ শ্রেণীর লোকদেরকে গৌরবান্বিত করেছেন।
পূর্বে হুজুর (সা.) এর যে দোয়া বর্ণিত হয়েছে, যাতে মিসকিনদের দলে তার হাশর করার কথা বলা হয়েছে। সে সম্পর্কে একবার উম্মুল মোমেনিন হজরত আয়েশা (রা.) তার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, জবাবে হুজুর (সা.) বলেন, ‘হে আয়েশা! এরা ধনী লোকদের পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ অন্য এক প্রসঙ্গে হুজুর (সা.) উপদেশ প্রদান করেন, ‘হে আয়েশা! কোন মিসকিনকে তোমার দর্জা হতে বিমুখ করোনা, চাই তোমার কাছে খেজুরের একটি টুকরা হোক না কেন, গরিবদের ভালো বাসবে এবং তাদের নিজের নিকটবর্তী করবে, যাতে খোদা তোমাকে তাঁর নিকটবর্তী করেন।’
হজরত সাদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) কে উদ্দেশ্য করে হুজুর (সা.) বলেন, ‘তোমাদের শুধু গরিবদের কারণে জীবিকা দান করা হয় এবং সাহায্য করা হয়।’ উম্মুল মোমেনিন হজরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন : ‘তোমাদের পূর্ব যুগে ফেরেশতাগণ এক আত্মার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কোন নেক করেছ কি? সে বলে, আমি নিজের গোলামদের নির্দেশ করতাম, তারা যেন নিজেদের ছুটি দেয় এবং তাদের সাথে কোমল আচরণ করে। এ জন্য খোদাও তাদের সাথে সদয় আচরণ করেছেন।’
হজরত ওসামা ইবনে জায়দ (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘আমি জান্নাতের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাতে অধিকাংশ গরিব-মিসকিন ছিল এবং মালদার লোকদেরকে দরজায় রুখে দেওয়া হয়েছে।’
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘বিধবা নারী ও মিসকিনদের সাথে উত্তম আচরণকারীর দৃষ্টান্ত এমন, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদকারী যেমন অথবা সারারাত নফল এবাদতকারী এবং দিনে রোজা পালনকারী।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) গরিব মোহাজেরদের সাথে একত্রে বসে বলেন: ‘ফকির (দরিদ্র) মোহাজেরদের জন্য সুসংবাদ, তারা আমিরদের (ধনী) চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাত লাভ করবে।’ এ কথা শুনে আমার (বর্ণনাকারীর) অনুতাপ হয় যে, আমি গরিবদের দলভুক্ত কেন হলাম না।
গরিবদের সাহায্যের ব্যাপারে হুজুর (সা.) উদ্বিগ্ন থাকতেন। হজরত জারির (রা.) এর বর্ণনা অনুযায়ী, আমরা একবার হুজুর (সা.) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক গোত্র উপস্থিত হয় এবং সবাই এতই গরিব ছিল, তাদের কারো দেহে একখানা বস্ত্রও ছিল না, উলঙ্গ দেহ, উলঙ্গ মাথা, উলঙ্গ পা। তাদের এ অবস্থা দেখে হুজুর (সা.) দারুণভাবে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তিনি কখনো বাইরে যেতেন, কখনো ভেতরে আসতেন। এ সময় তিনি হজরত বেলাল (রা.) কে আজান দিতে বলেন। নামাজের পর তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন এবং তাতে ওইসব লোকের প্রতি সাহায্যের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তিনি শান্ত হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।