Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

হেফাজত নেতাদের মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলন : বাবুনগরী

মামলাকারীরা জনপ্রত্যাখাত ইসলামী নীতি আদর্শ বিচ্যুত দালালগোষ্ঠী

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৩০ পিএম | আপডেট : ১:২৫ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০

হেফাজত ইসলামের নেতাদের নামে দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন উল্লেখ করে হেফাজতের আমির শায়খুল হাদিস হাফেজ আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে শুরা কমিটির সভা করে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বুধবার হাটহাজারী মাদরাসায় আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর দীর্ঘ সময়ের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ছিলেন। তিনি হাটহাজারী মাদরাসাসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের কওমি মাদরাসা সমূহের মুরুব্বি ও অভিভাবক ছিলেন। তার ইন্তিকালে মাদরাসার সকল শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মকর্তাবৃন্দ গভীর শোকাহত।
মাদরাসার তৎকালীন শিক্ষাপরিচালক আল্লামা মুফতী নূর আহমদকে পাশকাটিয়ে সহকারি শিক্ষাপরিচালক মাওলানা আনাস মাদানী দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলো। তিনি একক সিদ্ধান্তে ছাত্রদের ভর্তি ফরম এবং দাওরায়ে হাদিস ছাত্রদের বোর্ড পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকে রাখেন। অনেক ছাত্রদের বোর্ডিং এর খাবার এবং আবাসিক সিট অন্যায়ভাবে বাতিল করেন। তার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লামা আহমদ শফি (রহ.) ইন্তিকালের দু’দিন পূর্বে সর্বস্তরের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি দাওয়া তৎকালীন মুঈনে মুহতামিম আল্লামা শেখ আহমদ সাহেবের মাধ্যমে আল্লামা শাহ আহমদ শফি (রহ.) নিকট পেশ করেন। তিনি শূরা আহ্বান করে মাওলানা আনাস মাদানীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন এবং ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। বাকি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুনরায় শূরার অধিবেশন আহ‌বান করেন। এ ঘোষণার পর মাদরাসায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে।

পরদিন ১৭ সেপ্টম্বর শূরার সদস্যদের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে মাওলানা আনাস মাদানী অনির্দিষ্ট কালের জন্য মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করলে, পুনরায় ছাত্ররা ব্যপকভাবে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তখন আল্লামা শাহ আহমদ শফি (রহ.) পুনরায় শূরা আহ্বান করেন। সারা দিন নানা উদ্বেগ উৎকন্টার পর বা’দে মাগরিব উপস্থিত শূরা সদস্যগণ আল্লামা আহমদ শফিসহ (রহ.) মাদরাসা সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে বৈঠকে বসেন।

ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছচারিতা, অনিয়ম, ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি জুলুম-নির্যাতনসহ নানা দূর্নীতি হযরতের সামনে স্পষ্ট হলে, তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। যার ফলে তিনি আনাস মাদানীর উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করে শূরার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কিন্তু শূরাসদস্যগণ তা গ্রহণ করতে রাজি হননি। পদত্যাগে হযরতের দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে শূরা সদস্যগণ হযরতকে সদরে মুহতামিম হিসেবে মনোনীত করেন। ইতোমধ্যে তার অসুস্থতাবোদ করলে শূরার সদস্য এবং সিনিয়র আসাতিযায়ে কেরামের উপস্থিতিতে হযরতকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে প্রতিবারের ন্যায় আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য হযরতকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার পর সন্ধা ৬.২০ মিনিটে তিনি ইন্তিকাল করেন। আল্লামা আহমদ শফির (রহ.) মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি যে, তার এ স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র মূলকভাবে নির্জলা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। হযরতের ইন্তিকালের তিন মাস পর ঐ কুচক্রি মহল তাঁর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করে। দায়ের কৃত মামলাটি 'রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি বলে আমরা মনে করছি।
একটি চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিল। সেখানে নানা অনিয়ম এবং ছাত্রদের ওপর অব্যাহত হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা হয়েছিল। এছাড়া বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষককে মাদরাসা থেকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করে বের করে দেয়া হয়েছিল, যা ছিল অত্যন্ত অবমাননাকর। তাদের অনিয়ম ও ক্রমাগত হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে হাটহাজারি মাদরাসার ছাত্ররা জুলুমতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।

আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগ তুলে যারা মামলা করেছে, তারা একটি চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী। তারা দেশের আলেম সমাজ ও সচেতন তৌহিদি জনতার কাছে প্রত্যাখ্যাত। মামলায় তথাকথিত হত্যার যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অতিরঞ্জন ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, তাকে হত্যা করা হয়েছিল এমন কোনো মেডিকেল রিপোর্টও দালালগোষ্ঠীরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। কিছুদিন আগে ঐ চিহ্নিত গোষ্ঠী আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে আল্লামা আহমদ শফির হত্যা বিষয়ক প্রশ্নগুলোরও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। দায়েরকৃত মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে এবং বিবরণে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা কেউ এর সাথে সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা সম্পূর্ণ মিথ্যা ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যমূলক।

এ কুচক্রী মহল নিজেদের কর্মফলের পরিণতিস্বরূপ জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে ইসলামী নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। এখন পায়ের তলায় মাটি না থাকায় তারা আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে নতুন ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে চক্রান্তে নেমেছে। মামলাটি সেই চক্রান্তেরই অংশ। এর আগে তারা আল্লামা আহমদ শফীর লাশ নিয়েও নোংরা রাজনীতি করে ফায়দা হাসিলে ব্যর্থ হয়েছিল। আহমদ শফীর জীবদ্দশাতেও তাকে জিম্মি করে কায়েমী স্বার্থ হাসিল করতে দেখা গিয়েছিল। তারাই ওনাকে জিম্মি করে একের পর এক দুর্নীতি ও অনাচার চালিয়ে ওনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো। মাদরাসার শিক্ষক মন্ডলী, ছাত্রজনতা, ওলামায়ে কেরাম এবং এলাকাবাসী এই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপূর্ণ মামলা দ্বারা ফায়দা হাসিল করার সুযোগ তাদেরকে দেবে না, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে দায়েরকৃত এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। এ সময় আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, আল্লামা নোমান ফয়জী, আল্লামা তাজুল ইসলাম, আল্লামা মোহাম্মদ শোয়াইব, আল্লামা মুফতী কেফায়েতুল্লাহ, আল্লামা মুফতী জসিম উদ্দীন, আল্লামা লোকমান হাকিম, আল্লামা কবির আহমদ, আল্লামা হাবিবুল্লাহ আজাদি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি, আল্লামা দিদার কাসেমী, মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনীর প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ