Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভাইকে মেম্বার প্রার্থী বানাতেই খুন

একজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজের ভাইকে ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদপ্রার্থী বানাতে বর্তমান সদস্য হামিদুল হককে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেন একই এলাকার বাসিন্দা রবি শরীফ। ঘটনার পর ছায়া তদন্ত করে সোমবার দিনগত রাত ১১টার দিকে পুরান ঢাকার পাটুয়াটলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রবিউল শরীফকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তবে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি’র ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন।

এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ৭ টার দিকে গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য (কাউন্সিলর) হামিদুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর গত ১৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-১৩) দায়ের করা হয়। ঘটনার পরপরই সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে প্রথমে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) এর মালিক ও চালক আমির মোল্লাকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করে। পরে আমির মোল্লার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকান্ডের মূল আসামী রবিউল শরীফ (৫৭) কে গ্রেফতারের জন্য সিআইডি যশোর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। অবশেষে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, কারিগরি তথ্য, রুপসা ব্রিজে টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এবং মনিরের (যশোর) পেট্রোল পাম্প এর সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মূল আসামি রবি শরীফ গত ১১ ডিসেম্বর তার পূর্ব পরিচিত যশোরবাসী চশমার দোকানের মালিক আমির মোল্লাকে মোটরসাইকে যোগে যশোর হতে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। মোটরসাইকেল (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) নিয়ে যশোর সদর হাসপাতালের সামনে আনুমানিক দেড়টার সময় তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় রবি শরীফ কালো বেøজার, জিন্স প্যান্ট, কালো পিকআপ এবং সাদা সার্জিক্যাল মাস্ক পরিহিত ছিলেন। সেখান থেকে তারা দুপুর ২টা ৫ মিনিটের সময় যশোরের মনিরুদ্দিন পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে যান। সেখানে তারা এক হাজার টাকা সমমূল্যের তেল নেন। রবি শরীফ ঐ টাকা পরিশোধ করে।

তিনি বলেন, এরপর গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে কালনাঘাটের একটি চায়ের দোকানে চা পান করে গোপালপুর বাজারে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেন। এ সময় মূল আসামি মোটরসাইকেল থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলেন। গোপিনাথপুরে হামিদুল হক এলাকার পরিচিত ভ্যানচালক সাগরকে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করে তার মায়ের জন্য ঔষধ আনতে যান। এরমধ্যে তিনি স্থানীয় মিজান মেম্বার ও পলাশ শেখের সঙ্গে গল্প করেন। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভ্যানযোগে হাইস্কুল গেটের সামনে আসেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোপিনাথপুর বাজার হতে একই মোটরসাইকেলযোগে রবি শরীফসহ গোপিনাথপুর হাইস্কুলের গেটের সামনে রাস্তার পূর্ব পাশে পৌঁছলে মোটরসাইকেল দিয়ে ভ্যান আটকে দেয়। এরপর মোটর সাইকেলে বসা রবি শরীফ ভ্যানে বসা হামিদুল হক মেম্বারকে অত্যন্ত কাছ থেকে পিস্তল দিয়ে বুকের বাম পাশে চারটি গুলি করেন। সঙ্গে সঙ্গে হামিদুল হক রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার পর ভ্যান চালক সাগর হামিদুল হককে হাসপাতালে নিয়ে যান। হত্যার পর রবি শরীফ মোটরসাইকেল চালক আমির মোল্লাকে নিয়ে দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, যশোর যাওয়ার পথে রুপসা ব্রীজের টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরায় তাদের অবস্থানের বিষয়টি আনুমানিক রাত ৮টায় ধরা পড়ে। সেখান থেকে যশোরের দড়াটোনা মোড়ে এসে রবি শরীফ নেমে পড়েন এবং সেখানে একটি রুটি কিনে মূল আসামী রবি শরীফ আবার মোটর সাইকেলযোগে যশোরের গোপপাড়া রোডে চলে আসেন।


রাত সাড়ে ৯ টার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি পুনরায় চালু করেন। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি সরবরাহকারীর কাছে পুনরায় জমা দিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যান তারা। হামিদুলকে হত্যা কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইমাম হোসেন বলেন, খুনিরা পেশাদার না। তবে স্থানীয় প্রভাব, এলাকায় প্রভাব-ক্ষমতা বিস্তারের জেরে হত্যা করা হয় হামিদুলকে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিআইডি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ