Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বায়োনটেকের প্রতিষ্ঠাতা তুর্কি মুসলিম দম্পতির প্রশংসায় ম্যার্কেল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:১৩ পিএম

গত নভেম্বরে করোনা রোধে ৯৫ ভাগ সাফল্যের দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিন। রাতারাতিই বিখ্যাত হয়ে যায় জার্মানির মাইনৎস শহরকেন্দ্রিক এ বায়োনটেক প্রতিষ্ঠান। অথচ, কয়েক মাস আগে বায়োনটেকের নাম জার্মানির অনেকেই শোনেননি। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিস্কার করায় এখন সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে তাদের সুনাম। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এখন বায়োনটেক নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার শাহিন এবং ট্যুরেচির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় বায়োনটেকের তুমুল প্রশংসা করেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। বায়োনটেকের গবেষকদের প্রশংসায় তিনি বলেন, “আমাদের দেশে এমন সব গবেষক আছে বলে আমরা ভীষণ গর্বিত।” অনেক বাধা-বিপত্তি পার করে বায়োনটেকের এই পর্যায়ে আসার প্রশংসা করে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, “আপনারা হাল ছেড়ে দেননি। আপনারা আপনাদের গবেষণার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। এখন সারা বিশ্বে যতজন মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যাচ্ছে তা দেখেই বোঝা যায় এই ভ্যাকসিন কতজন মানুষকে বাঁচাতে পারবে। আপনারা আসলে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।”

২০০৮ সালে মাইনৎস শহরে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উগুর শাহিন ও ওসলেম ট্যুরেচি দম্পতি। ভ্যাকসিন আবিস্কারের পরেই এই মুসলিম দম্পতি চলে আসেন প্রচারের আলোয়। তারা দুইজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক। এই দম্পতির তৈরি বায়োনটেকে এখন কাজ করে ১৫শ’ কর্মী। ৫৫ বছর বয়সি জাহিনের জন্ম তুরস্কে। বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি। মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন। মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি। তার স্ত্রী ৫৩ বছর বয়সি টুরেচির জন্ম জার্মানিতে। কিন্তু তার বাবা-মা তুর্কি। হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ইমিউনোলজিস্ট টুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন।

২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। তখনই তার আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে। সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ফাইজার ও বায়োনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে। চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সঙ্গেও। ২০২০ সালেই এই দুই প্রতিষ্ঠান দু’টি পাঁচ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

ফাইজারের সঙ্গে যৌথভাবে আবিস্কার করা ভ্যাকসিন বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকেই করোনা থেকে বাঁচতে সহায়তা করবে। ইতিমধ্যে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র বায়োনটেক ভ্যাকসিন দিতে শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও খুব তাড়াতাড়িই এই ভ্যাকসিনের প্রতি আস্থা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বায়োনটেকের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ট্যুরেচি অবশ্য এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন বায়োনটেক এবং ফাইজারের গবেষকদের। তার ভাষায় “আমাদের লক্ষ্য ছিল যা অসম্ভব মনে হচ্ছে সেটাকে সম্ভব করা। আমরা সফল হয়েছি, কারণ, আমাদের টিমটা চমৎকার। এটা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের দল, যেখানে ৬০টি দেশের কর্মী অনেক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।” চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সঙ্গে কথা বলার সময় সার্বিক সহায়তার জন্য জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানান শাহিন এবং ট্যুরেচি। এ সময় ট্যুরেচি আরো বলেন, করোনার বিপক্ষে ম্যারাধন দৌড় এখনো শেষ হয়নি। সূত্র: ডিপিএ, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • Sadman ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:৩৬ পিএম says : 0
    Allah bless you, InsaAllah kamoyab.many many thanks
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ