Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামে শিক্ষা ও তার গুরুত্ব

মুহাম্মাদ এনামুল হাসান | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সকল সৃষ্টির মধ্যে বিশেষভাবে মানুষকেই আল্লাহ তাআলা জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দান করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও ধারণ করতে পারে। ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আসমানী ইলমের উপযুক্ততার কারণেই মানুষের জন্য এসেছে হালাল-হারামের বিধান। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এই যোগ্যতা নেই। তাদের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ তাদের সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য পশম, অন্ধকারে পথ দেখার জন্য চোখে বিশেষ শক্তি ইত্যাদি

তদ্রুপ প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই রয়েছে জীবন ধারণের জন্য সহজাত বোধ ও প্রবণতা। যার দ্বারা চালিত হয়ে তারা আত্মরক্ষা করে ও বংশ বিস্তার করে। কিন্তু এ পর্যন্তই। পশু-পাখির জীবন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বভাবের গন্ডিতে বাধা। স্বভাবের বৃত্ত থেকে তাদের উত্তরণ ঘটে না। পক্ষান্তরে মানুষ শিক্ষা অর্জন করে এবং শিক্ষা দান করে। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তাই পৃথিবীর শাসন ও নিয়ন্ত্রণের ভার তাদের ওপর অর্পিত।

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’(সূরা আলাক : ১-২)। আল্লাহ তাআলার আদেশে মানুষ যেমন লাভ করেছে জীবনের আলো তেমনি আল্লাহরই নিকট থেকে সে লাভ করেছে ইলমের নূর। ইলমের মাধ্যমে মানুষ নবজন্ম লাভ করে। আল্লাহর মারিফত যখন মানুষের মধ্যে আসে তখনই সে প্রকৃত মানুষ হয়।

শিক্ষাকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা মৌলিকভাবে দুই প্রকার : জাগতিক শিক্ষা ও দ্বীনী শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির জ্ঞান হচ্ছে দ্বীনী শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র ওহী।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব (উপকরণের জগত) বানিয়েছেন। এখানে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য এবং অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মানুষকে দান করা হয়েছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও জ্ঞান-বুদ্ধি। এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইসলাম পূর্ণমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম গাযালী রাহ. বলেন, অনুমোদিত জাগতিক জ্ঞান দুই ভাগে বিভক্ত : ১. যা চর্চা করা অপরিহার্য ২. যা চর্চা করা উত্তম।

প্রথমটি হচ্ছে ওই সব জ্ঞান যা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন চিকিৎসা বিদ্যা। কেননা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তদ্রুপ গণিত। কেননা, লেনদেন, মিরাছ বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে তা প্রয়োজন। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে তাহলে সকলেই কষ্টে পতিত হবে। একইভাবে কৃষি, বয়ন, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য। (ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন ১/২৯-৩০)।

পক্ষান্তরে যা মানুষকে কুফর ও ইলহাদের দিকে টেনে নিয়ে যায় তা চর্চা করা হারাম। যেমন ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরী সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রুপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষেধ। মোটকথা, পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। তাই জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মৌলিকভাবে অনৈসলামিক মনে করার অবকাশ নেই। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে শিক্ষার উপাদান ও পরিবেশে নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। যা একটি মুসলিম দেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই সব দর্শন ও অনৈসলামিক পরিবেশের কোনো প্রয়োজন নেই।



 

Show all comments
  • Akhter Jahid ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৩৭ এএম says : 0
    জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব ইসলাম ধর্মে অপরিসীম। ইসলাম জ্ঞানবানদের দিয়েছে ভিন্ন সম্মান ও মর্যাদা।
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৩৭ এএম says : 0
    ইসলামে ঈমানের পর “ইলম” বা সাক্ষরতা, শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এই জ্ঞানার্জন সকল মুমিন (বিশ্বাসী) নর-নারীর জন্য ব্যক্তিগতভাবে ফরজ করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • নিয়ামুল ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৩৮ এএম says : 0
    সন্তানকে জাগতিক শিক্ষায় পড়াতে চান তবে অবশ্যই তাদের প্রয়োজনীয় দ্বীনি জ্ঞান প্রথমে শেখাতে হবে। এটা আপনার আমার জন্য সার্বজনিন ফরজ। এজন্যে প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হলো, কুরআন কারিম পাঠ করা। আর অর্থসহ বুঝে পড়াকেই পাঠ বলে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
    ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২
    Total Reply(0) Reply
  • জসিম ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
    রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’
    Total Reply(0) Reply
  • রোমান ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
    প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’ (আল হাদিস)।
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৫৫ পিএম says : 0
    When muslim used to ruled by the Law of Allah half of the world, they were super power not only that they were superior in Science and Technology. When muslim betrayed with Allah the Kafir unitedly occupied all the muslim land and they rule us by colonial rule. Still all the so call muslim country ruling by the Kafir Law.. now we muslim are most oppressed nation on Earth. Muslim Taghut,Murtard,Munafiq and Zalem government kill and torture muslims, as such>>>>> “Nations are about to unite (and call) each other to set upon you, just as diners are invited to a plate of food.” It was said: “Will it be because of our lack of numbers that day (i.e. will be be small in number)?” He صلى الله عليه وسلم said: “Rather, you will be many on that day, but you will be like scum foam (that floats) on the river. Allaah will remove the fear of you from the hearts of your enemies and put Wahn into your hearts.” It was said: “O Messenger of Allaah, what is Wahn?” He صلى الله عليه وسلم said:“Love for the dunya and hatred for death.” Related by Abu Da’wud, 4297 and others – graded as saheeh by Al-Albani in ‘Silsilah as-Saheehah’, 958] [
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন