রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
অব্যাহত লোকসানের কারণে সরকার দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ৬টি চিনিকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্প ‘শ্যামপুর সুগার মিলস’-এ চলতি মওসুমে আখ মাড়াই বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ লোকসানের জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে দায়ী করে চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের দাবি বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বহুমুখী দ্রব্য উৎপাদনের মাধ্যমে চিনিকলগুলোকে লাভজনক শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
জানা যায়, ১৯৬৪ সালে রংপুরের সদর উপজেলার শেষপ্রান্তে বদরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১শ’ একর জমির ওপর গড়ে উঠে শ্যামপুর সুগার মিল। ১৯৬৭ সালে উৎপাদন শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত মিলটি পর্যাপ্ত লাভ করে আসলেও ২০০১ সাল থেকে শুরু হয় লোকসানের হিসাব। এরপর থেকে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে থাকে মিলটি। এই মিলটিকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এ মিলটি ২০০১ সাল থেকে অব্যাহতভাবে লোকসান গুনে চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংক ঋণ, ঋণের সুদ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ বিভিন্ন খাত মিলে ৫০৫ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথা রয়েছে। এরমধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে লোকসান হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা, ১৮-১৯ অথবছরে ৬২ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে লোকসান হয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ১৩শ’ মেট্রিক টন চিনি।
এ পরিস্থিতিতে শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি শ্যমপুর সুগার মিলসহ উত্তরাঞ্চলের আরও ৫টি চিনিকল বন্ধের সুপারিশ করে। এতে আন্দোলনে নামেন আখচাষি ও শ্রমিক কর্মচারীগণ। তাদের দাবি, বন্ধ নয় আধুনিকায়নের মাধ্যমে চিনি কলগুলো সচল রাখতে হবে। তাদের মতে, সরকারের নীতি নির্ধারকদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে মিলগুলো লোকসানে পড়েছে। চিনি কলগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত একটি ষড়যন্ত্র। রিফাইনারি সুগার মিলের মালিকরা এই ষড়যন্ত্রের সাথে লিপ্ত। কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে আতাত করে এ কাজ করা হচ্ছে। চিনিকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বেসরকারি চিনি কল ব্যবসায়ীদের হাতে।
পক্ষান্তরে মিল কর্তৃপক্ষের মতে, পর্যপ্ত আখ না পাওয়ায় লোকসান কমাতেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে মিল বন্ধ হয়েছে। ৬ মিলকে এ মৌসুমে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। দেশে উন্নত জাতের আখ উদ্ভাবন না হওয়া এবং উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেসরকারি চিনি কল ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লোকসানে পড়েছে চিনি কলগুলো। তাই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, মিলে চলতি মওসুমে আখ মাড়াই বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন আখ চাষিরা। প্রায় ১৫ হাজার আখচাষি ও তাদের পরিবার এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দিনমজুর, শ্রমিক, ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ২ লাখ মানুষের রোজগার বন্ধ হতে চলেছে। এতে করে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। মিলটি বন্ধ হলে কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামপুর সুগার মিল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, অদক্ষ কর্মকর্তা, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে দুর্নীতি, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টাকা আত্মসাৎ এবং অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে এই কারখানাটি লোকসানের মুখে পড়ছে এবং প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। দেশের ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের মধ্যে শ্যামপুর চিনিকল দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডে অবস্থান করলেও লোকসানের অজুহাতে তা পুরোপুরি বন্ধের পায়তারা করা হচ্ছে। কারখানাটি বন্ধ না করে কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে এটি চালু রাখার জোর দাবি জানান তিনি।
ওদিকে, আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী দ্রব্য উৎপাদনের উপযোগী করে চিনিকলগুলোকে লাভজনক হিসেবে গড়ে তুলতে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে চিনিকলগুলো চালু রাখার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন আখচাষি ও শ্রমিক কর্মচারীগণ। তাদের মতে, এই শিল্পের সঙ্গে শুধু শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবন-জীবিকাই জড়িত নয়, কৃষকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবন-জীবিকা এরসঙ্গে জড়িত। তাই আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী দ্রব্য উৎপাদনের উপযোগী করে চিনিকলগুলোকে লাভজনক হিসেবে গড়ে তুলতে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তারা।
তবে, আখমাড়াই বন্ধ রাখায় আখচাষিদের ক্ষতির বিষয়সহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার সরকার বলেন, যেখানে ৫ মাস মিল চালু রাখার কথা, সেখানে পর্যাপ্ত আখ না পাওয়ায় তার আগেই চিনি উৎপাদন বন্ধ করতে হয়। আখ উৎপাদন কমে যাওয়া এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। অথচ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সবই দিতে হয়। এসব কারণে মিলটিতে প্রতিবছর লোকসান বাড়ছে। তিনি বলেন, মিল বন্ধ নয়, চলতি মৌসুমে আখমাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে।
শ্যামুপর সুগার মিল এলাকায় উৎপাদিত আখ মিল ব্যবস্থাপনায় জয়পুরহাট চিনিকলে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।