বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত মোহাম্মাদ (সা.) শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী। আর ৫০০ বছর আগে ইমিডিয়েট নবী ছিলেন হযরত ঈসা (আ.)। হযরত ঈসা থেকে মধ্যবর্তী ৫০০ বছর তাওহীদের দাওয়াত দুর্বল হয়ে যায়। ঈসা (আ.)-এর উর্ধ্বগমনের পরপরই তার বিশিষ্ট হাওয়ারীগণ মারা গেলে ইহুদিরা ধর্মটিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। ১০০ বছর পর জন পল নামক এক ইয়াহুদি নিজের মনমতো নতুন খৃষ্টধর্ম তৈরি করে।
বার্নাবাসের বাইবেল লুকিয়ে ফেলে নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে বাইবেল রচনা করে। যাতে মূল ইঞ্জিল বা আসমানী কিতাবের কিছু অংশই থেকে থাকবে। বাকি সব মানুষের রচনা। এসময় আরবরা বিশেষ করে হেজাজের লোকজন ছিল দীনে হানিফের ওপর। অর্থাৎ হযরত ইবরাহীমের তাওহীদি ধর্মের ওপর। কিছু লোক অবশ্য প্রকৃত খৃষ্ট ধর্মের সন্ধানও পেয়েছিল।
এরইমধ্যে মিশর, সিরিয়া ও প্রাচীন ইরাকী পৌত্তলিক মুশরিক স¤প্রদায়ের দেখাদেখি মুর্তিপূজা করতে এক দু’জন আরব উৎসাহী হয়। তখন সর্বপ্রথম জাজিরাতুল আরবে মূর্তি প্রবেশ করায় ইয়াহুদী আমর ইবনে লুহাই। এর আগে আরব উপদ্বীপের লোকেরা মূর্তি কি জিনিস, তা জানতো না। এরা তাওহীদি সমাজে বা দীনে হানিফে বিশ্বাসী মক্কাবাসীর সামনে শিরকের প্রস্তাব দিতে সাহস পায়নি। তখন আসে এই ভাস্কর্য পদ্ধতি।
নবী বিহীন ৫০০ বছরের অবসরে কোনো এক ফাঁকে তায়েফের লোকেরা একজন আল্লাহওয়ালার মহৎ ব্যক্তির মৃত্যুর পর স্মৃতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির জন্য ভাস্কর্যের নামে তার মূর্তি তৈরি করে। লোকটির নাম ছিল লা’ত। যার ভাবার্থ হচ্ছে, আল্লাহওয়ালা।
কালক্রমে একদল লোক এটিকে পবিত্র মক্কায় নিয়ে আসে। মক্কাবাসীরা আরেক মহৎ ব্যক্তির মূর্তি নির্মাণ করে তার নাম মানাত। আরেক বংশের লোক নিজেদের বিশিষ্ট ব্যক্তি উজ্জা’র ভাস্কর্য নির্মাণ করে। আরেক গোত্র নির্মাণ করে হোবল। এই হলো লা’ত, মানাত, হোবল ও উজ্জা’র গল্প। আমর ইবনে লুহাই এর আনা মডেল মূর্তিটির ধারণা থেকেই এসবের নির্মাণ। এসব ছিল শিল্প সৌকর্যহীন বড় বড় পাথরের অসুন্দর মূর্তি। এরপর ধীরে ধীরে নানা প্রজন্ম শৈল্পিক সৌকর্যমন্ডিত সুদর্শন মূর্তি এনে আরবে স্থাপন করে। আরবে আনুষ্ঠানিক মূর্তিপূজার বিকাশ করেছে তারাই।
এরপর নতুন প্রজন্ম শ্রদ্ধার বদলে লা’ত মানাত হোবল উজ্জা’র ইবাদত শুরু করে। সময়ে সময়ে আল্লাহর ঘরেও ঢুকতে থাকে মূর্তি। একে একে ৩৬০ ছোট বড় মূর্তিতে ভরে যায় কাবাঘর ও আশপাশের এলাকা। পূজা শুরু হয় কৌশলে। দীনে হানিফের নামে শুরু হয় পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নতুন ধর্ম। ইবরাহীমী ঐতিহ্য টিকে থাকে হজ্জের নামে।
আরবের মুশরিকরা নারী পুরুষ মিলিত আকারে উলঙ্গ হয়ে পবিত্র কাবা তাওয়াফ করতো। স্বয়ং আবু জাহেল এ ধরণের হজ্জ করেছিল ২৫ বার। দিনে দিনে মূর্তির প্রতি ভালোবাসা তাদের এতো বেড়ে গিয়েছিল যে, কিছু লোক নবী করিম (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণের পরও আগের চেতনা ছাড়তে সময় লেগেছে। তারা তাওহীদে বিশ্বাসী হয়ে এক আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণার সময়ও কোনো কোনো মুনাফিক বগলের নিচে ছোট ছোট মূর্তি রাখত। যে জন্য তাকবীর বলার সময় তারা হাত ভালো করে উপরে তুলতো না। এরপর যখন অবশ্যই কাঁধ বা কানের লতি বরাবর হাত তোলার নিয়ম করে দেয়া হলো, তখন বগলের নিচের মূর্তি মাটিতে পরে গেল।
নবী করিম (সা.) একদিনে মূর্তি উচ্ছেদ করতে পারেননি। ইসলাম প্রচারের একুশ বছরই তিনি এসব মূর্তির বর্তমানেই নিজের দাওয়াত, তালিম ও তাজকিয়ার কাজ করে গেছেন। আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা, কোরআন সুন্নাহর শিক্ষা প্রচার ও মানুষের আত্মশুদ্ধি ছিল তার কর্মপন্থা। সবশেষে প্রায় ৮০টি যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। ২৭টি যুদ্ধে নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। সাহাবীরা হতাহত হন। নবী (সা.) নিজে আহত হন।
ওফাতের দুই বছর আগে তিনি মক্কা বিজয় করেন। নিজ হাতে সব মূর্তি ভেঙে দেন। আর বলেন এই নগরীতে আর কখনো মূর্তি আসবে না। এই পবিত্র গৃহে আর কোনোদিন ভাস্কর্য বসবে না। এই হুকুম প্রতিটি মুসলিম সমাজের জন্য। যেখানে আল্লাহ তাওহীদ, একত্ববাদ, ঈমান, ইসলাম দিয়েছেন সেখানে কোনোভাবেই যেন মূর্তি, ভাস্কর্য ও প্রতিমার অনুপ্রবেশ না ঘটে। এটাই মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।