মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতেই সবাইকে সতর্ক করা হয়েছিল যে ভ্যাকসিন তৈরি করতে অনেক বছর সময় লেগে যায় - তাই খুব দ্রুত কিছু পাওয়ার আশা যেন আমরা না করি। মাত্র ১০ মাস পরেই কিছু দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পৌঁছে গিয়েছে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান। ফলে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে কমপক্ষে দু-তিনটি ভ্যাকসিন-উৎপাদক কোম্পানি - আমেরিকার মডার্না, জার্মানির বায়োএনটেক এবং তাদের অংশীদার বৃহৎ আমেরিকান কোম্পানি ফাইজার - এরা আগামী বছর সম্ভবত শত শত কোটি ডলার অর্থ আয় করতে চলেছে।
কিন্তু এর বাইরে ভ্যাকসিন-উৎপাদকরা ঠিক কত টাকা কামাবে তা এখনো ঠিক স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়ায় যেভাবে অর্থসংস্থান করা হয়েছে এবং যতগুলো ফার্ম এই উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে - তাতে বড় অংকের মুনাফা করার সুযোগ হয়তো খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ভ্যাকসিনের প্রয়োজন ছিল জরুরি। তাই বিভিন্ন দেশের সরকার এবং দাতারা টিকা তৈরি এবং তার পরীক্ষার প্রকল্পগুলোতে কোটি কোটি পাউণ্ড পরিমাণ অর্থ ঢেলেছে। গেটস ফাউণ্ডেশনের মত দাতব্য সংস্থাগুলোও এতে অর্থ-সহায়তা দিয়েছে, এমনকি আমেরিকান কান্ট্রি মিউজিক তারকা ডলি পার্টন এবং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা-র মতো অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও অর্থ দিয়েছেন। বৈজ্ঞানিক উপাত্ত বিশ্লেষণকারী কোম্পানি এয়ারফিনিটি বলছে, সব মিলিয়ে সরকারগুলো দিয়েছে ৬৫০ কোটি পাউন্ড। এ ছাড়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে প্রায় ১৫০ কোটি পাউণ্ড। কোম্পানিগুলো নিজেরা বিনিয়োগ করেছে মাত্র ২৬০ কোটি পাউণ্ড - তবে এর মধ্যে অনেকে আবার বাইরের তহবিলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
বেশি কিছু কোম্পানি - বিশেষ করে যারা বাইরে থেকে অর্থায়ন পেয়েছে - তারা এটা দেখাতে চায় না যে একটা বৈশ্বিক সংকট থেকে তারা মুনাফা করছে। বৃহৎ আমেরিকান ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি জনসন এ্যান্ড জনসন, এবং যুক্তরাজ্যের এ্যাস্ট্রাজেনেকা (যারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানির সাথে কাজ করছে) - তারা তাদের উৎপাদনমূল্যটুকু পুষিয়ে যাবে এমন দামে ভ্যাকসিনটি বিক্রি করার অঙ্গীকার করেছে। এ্যাস্ট্রাজেনেকা এখন প্রতিটি টিকা ৪ ডলার বা ৩ পাউণ্ড দামে বিক্রি করছে - যা সবচেয়ে সস্তা করোনাভাইরাসের টিকা। সাধারণত ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো একেক দেশে একেক দামে টিকা বিক্রি করে - সাধারণত সরকারগুলোর কত দামে কেনার সাধ্য আছে তার ওপর এটা নির্ভরশীল। বার্কলের ইউরোপিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণার প্রধান এমিলি ফিল্ড বলছেন, এমুহূর্তে ধনী দেশের সরকারগুলো ভ্যাকসিনের জন্য চড়া দাম দেবে - কারণ তারা চাইছে মহামারির অবসান ঘটাতে এখন যাই পাওয়া যায় তাই কিনে ফেলতে। তবে তিনি বলছেন, পরে যখন আরো নানা ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসবে তখন প্রতিযোগিতার কারণেই দাম অনেক কমে যাবে।
যেহেতু সংকট এত গুরুতর ছিল, তাই অনেকে আহ্বান জানিয়েছেন যে ভ্যাকসিনের পেছনের যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান তা সমন্বয় করা উচিত যাতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত দেশগুলোতে অন্যান্য ফার্মগুলো তাদের নিজেদের বাজারের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে। মেডিসিন্স ল’ এ্যান্ড পলিসি নামে একটি গবেষণা সংস্থার পরিচালক এলেন টি হোন বলছেন, ‘সরকারি অর্থায়নের একটা শর্তই হওয়া উচিত ছিল এ ব্যাপারটা। কোন রকম শর্ত ছাড়াই এ পরিমাণ অর্থ তাদেরকে দেয়াটা সুবিবেচনার কাজ হয়নি।’
যারা ধনী দেশগুলোর কাছে ভ্যাকসিন বিক্রি করবে তারা তাদের বিনিয়োগ থেকে লাভ করতে শুরু করবে। কিন্তু এ্যাস্ট্রাজেনেকার মত কোম্পানি সবচেয়ে বেশি ডোজ টিকা সরবরাহ করার চুক্তি করলেও - তারা তাদের খরচ উঠিয়ে নিতে পারবে মাত্র - তার চেয়ে বেশি কিছু পাবে না।
প্রথম চুক্তিগুলো অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহের পর পরিস্থিতি কি হবে তার পূর্বাভাস দেয়া মুশকিল। এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে, যেমন - ভ্যাকসিন নেবার পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন স্থায়ী হবে, কতগুলো টিকা সাফল্য পাবে, উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা কত সুষ্ঠুভাবে কাজ করবে। এমিলি ফিল্ড মনে করেন - মুনাফা করার সুযোগ হবে খুবই সাময়িক। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।