Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি টেলিফোন কোম্পানীর জবনিকা কম্পমান

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:০৩ পিএম

জনবল সংকটের সাথে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও উদাশীনতায় গ্রাহক সেবার মান তলানিতে নামার সাথে সেল ফোনের প্রযুক্তিগত প্রতিযোগীতায় টিকতে না পারায় দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বিটিসিএল-এর জবনিকা কম্পমান। ফলে এক সময়ে যে টিএন্ডটি বোর্ড রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বড় যোগানদার ছিল, এখনে তার উত্তরাধিকারী প্রতিষ্ঠান-বিটিসএল চলছে বড় ধরনের লোকশানের বোঝা নিয়ে। আর গ্রাহক সংখ্যা হ্রাসের সাথে আয়ও কমছে। ফলে লোকশানের বোঝাও ক্রমশ স্ফিত হচ্ছে। সেল ফোনের কারণেও বিশাল এ প্রতিষ্ঠানের প্রাণবায়ু ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে আসলেও তা থেকে উত্তরণে কোন কর্ম-পরিকল্পনাও নেই।

গত পাঁচ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার টেলিফোন সমর্পন করেছেন গ্রাহকগন। এর বাইরেও আরো অন্তত হাজার পাঁচেক ফোন বছরের পর বছর ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে এ অঞ্চলে। যা সচল করারও কোন উদ্যোগ নেই বিটিসিএল-এর। আর ঐসব ফোনের যে লাইনরেন্ট-এর বিল করা হচ্ছে তাও আদায় হচ্ছে না।

বরিশাল বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬৭

বরিশাল বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬৭ হাজার সংযোগ ক্ষমতার এক্সচেঞ্জগুলো থেকে বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা কাগজেপত্রে ২০ হাজারে হ্রাস পেলেও বাস্তবে ১৫ হাজার টেলিফোনও সচল নেই। এখনো মূল সুইচ রুমের এমডিএফ থেকে জরাজীর্ণ ভূগর্ভস্থ প্রাইমারি কেবলের সাহায্যে কেবিনেট হয়ে সেকেন্ডারী কেবল-এর মাধ্যমে ডিপি থেকে গ্রাহকের কাছে টেলিফোন সংযোগ দিচ্ছে বিটিসিএল। আর একবার টেলিফোন বিকল হলে তা সচল হওয়াও অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক সময়ই টেলিফোন সচল করতে উর্ধতন প্রকৌশলীদের দ্বারস্থ হতে হয়। সে পর্যšত যে গ্রাহক পৌছতে পারেন না, তার টেলিফোন

সচল হবারও কোন সম্ভবনা থাকছে না। আর হাতের মুঠোয় সেল ফোনের কল্যানে বেশীরভাগ গ্রাহকই এত যন্ত্রনা আর ভোগান্তি সহ্য করে বিটিসিএল-এর ‘পুরেনো দিনের ল্যান্ড ফোন’র সংযোগ সচল রাখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

অভিযোগ রয়েছে, বেশীরভাগ জেলা ও উপজেলাতেই দায়িত্বশীল (?) প্রকৌশলীদেরও পাওয়া যায়না। খোদ বরিশাল বিভাগীয় সদরে ৩টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে প্রায় ১৪ হাজার সংযোগ ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে কাগজেপত্রে গ্রাহক সংখ্যা ৬ হাজারের মত। বাস্তবে সচল ফোনের সংখ্যা আরো কম। বরিশাল টেলিযোগাযোগ অঞ্চলে জিএম পদে কোন কর্মকর্তা নেই দীর্ঘদিন। খুলনার ট্রান্সমিশন বিভাগের ডিজিএম বরিশালের জিএম সহ ৪টি পদ সামলাচ্ছেন। বরিশাল,ফরিদপুর ও পটুয়াখালী টেলিকম বিভাগের ডিজিএম পদে দায়িত্ব পালন করছেন ম্যানেজারের চলতি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগন। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই টেলিকম কোম্পানীটির কর্মকতা পদে চরম হাহাকার চলছে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই। ফলে গ্রাহক সেবা সহ কোম্পনীটির বেহাল দশার উত্তরন হচ্ছে না।

বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হবার সাথেই বরিশাল মহানগরীতে ২১ দিয়ে শুরু এক্সঞ্জটি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এ নগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই এখনো টেলিফোন এক্সেঞ্জের ওপরই সমস্ত পুলিশÑপ্রশাসন সহ থানা, হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, দমকল ও নৌ দমকল সহ প্রায় সব জনগুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী পরিষেবার টেলিফোন সংযোগ রয়েছে। বরিশাল মাইক্রোয়েভ স্টেশনে ৭ দিয়ে শুরু এক্সেঞ্জটি থেকে মূল এক্সেঞ্জের জাংশন ক্যাবলের ত্রুটির কারনে অর্ধেক সংযোগই বন্ধ।

দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন রাস্তা প্রশস্ত করায় দীর্ঘদিনের পুরনো ভগর্ভস্থ কেবলের বেশীরভাগই এখন আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেক এলাকাতেই জোড়াতালি দিয়েও এখন টেলিফোন সচল রাখা দুরুহ হয়ে পড়ছে। এরিয়াল কেবল ও ড্রপ ওয়্যার টেনে সাময়িকভাবে অনেক গ্রাহকের টেলিফোন সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও তা টেকসই হচ্ছে না। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের টেলিফোন বিকল গত ৩ মাস। অনেক সময়ই লাইনম্যানদের অবহেলায়ও গ্রাহকদের টেলেফোন বিকল থাকছে মাসের

পর মাস। ফলে বিরক্ত হয়ে অনেকেই এখন সরকারি ল্যান্ড লাইনের টেলিফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

নিয়মনুযায়ী বিটিসিএল-এর টেলিফোন ব্যবহার না করলে বা বিকল থাকলেও ১৫% ভ্যাট সহ মাসে প্রায় ১৭৩ টাকা লাইন রেন্ট গুনতে হওচ্ছে গ্রাকদের। অপরদিকে বিটিসিএল থেকে যেকোন মোবাইল অপারেটরে কলচার্জ ভ্যাট সহ এখনো প্রায় ১ টাকা। যা দেশের অন্যসব সেল ফোন অপারেটরের কল চার্জের চেয়ে প্রায় ৩৫ % বেশী। একারনেও ক্রমশ গ্রাহক হারাচ্ছে বিটিসিএল।

বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার টেলিফোন বিল জারি হলেও আদায় ৭০%-এ বেশী নয়। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যয় ৫ কোটি টাকার ওপরে। অনেক গ্রাহকের টেলিফোন বিকল বা বন্ধ থাকায় তারা এখন আর কোন বিল পরিশোধ করছেন না। এর বাইরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ‘ওয়ারলেস টেলিফোন’ ব্যবস্থা চালু করার দাবী থাকলেও তার পরিবর্তে অপটিক্যাল ফাইবার নির্ভর বহুমুখী টেলিফোন ব্যবস্থা চালু করার একটি উচ্চাভিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিটিসিএল। কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার সংযূক্ত এ টেলিফোনে বহুমুখী সুবিধার কথা কর্তৃপক্ষ বললেও তা গ্রাহকদের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, সে

বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে কোম্পানীটির অনেক দায়িত্বশীলদের মধ্যেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে এমন অভিমতও প্রকাশ করেছেন যে, ‘এ ধরনের উচ্চাভিলাসি ও বিশাল অংকের প্রকল্প গ্রহনের আগে যে ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি’।

তবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে গ্রাহকদের মধ্যে বিটিসিএল সম্পর্কে ব্যাপক আস্থার অভাব এখন সুস্পষ্ট। ফলে সংযোগ ফি হ্রাস সহ এনডিব্লিডি ও লোকাল কলের মাসুল বাতিল করেও নুতন গ্রাহক সংগ্রহ সহ পুরনোদের ধরে রাখতে পারছে না বিটিসিএল। এর কারন চিহ্নিত করে তা নিরসনের দাবী করেছেন ওয়াকিবহাল মহল। নচেৎ অদুর ভবিষ্যতেই হয়ত সরকারি এ টেলিযোগাযোগ কোম্পনীটি গ্রাহক শূণ্য হয়ে লোকসানের বোঝা নিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়তে পারে। এমন অভিমত ওয়াকিবহাল মহলের।

তবে এসব বিষয়ে বরিশাল টেলিযোগাযোগ অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত জিএমÑ২’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সেবার মান উন্নয়নের চেষ্টার কথা জানান। পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির টেলিফোন সংযোগের পরে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেলিফোন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ