মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
স্টুয়ার্ট রোডসের মতো মানুষদের কতটা গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত? যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই তিনি বলেছিলেন যে, তার সশস্ত্র কমরেডরা ওয়াশিংটনের বাইরে অপেক্ষা করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে তারা একটি ‘রক্তক্ষয়ী লড়াই’ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
‘ওথ কিপার্স’ নামের একটি কট্টর ডানপন্থী সংগঠনের সদস্য রোডস এর আগেও এমন হুমকীপূর্ণ কথা বলেছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও তার দল ‘ব্যাপক ভোট জালিয়াতি’ হবে বলে অনুমান করেছিল। কিন্তু সে নির্বাচনে ট্রাম্প জেতায় তারা তাদের দাবি থেকে সরে আসেন। তাদের দলে সদস্য হিসাবে অনেক সাবেক সেনাও রয়েছেন। সে সময় মেক্সিকান সীমান্তে অভিবাসীদের প্রতিরোধ ও হয়রানি করার জন্য তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে টহল দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।
ওথ কিপার্স সম্পর্কে করা গবেষণায় আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যাম জ্যাকসন অনুমান করেন যে, দলটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তাদের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে আরও অসংখ্য মানুষের। এই লোকেরা দ্বিতীয় আমেরিকান বিপ্লবের প্রত্যাশা করে এবং তারা যাকে ‘অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে, তার বিরোধিতার জন্য ‘সহিংসতা’ যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে। ট্রাম্প ব্যতীত যে কোন সরকারের বিরোধিতা করাকে তারা ‘দেশপ্রেম’ বলে মনে করে। বিশ্লেষকরা তাদেরকে সম্পূর্ণ ‘বর্ণবাদী’ এবং ‘জাতিবাদী’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। যারা খ্রিস্টান ধর্ম ব্যতীত অন্য ধর্ম, বিদেশী প্রভাব ও অশেতাঙ্গদের বিরোধিতা করে।
জ্যাকসনের তার একাধিক নতুন বইয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, ৯০ দশকের পরে যে কোনও সময়ের থেকে আমেরিকায় এখন কট্টর ডানপন্থীরা অনেক বেশি সক্রিয়। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগও তার সাথে একমত হয়েছে এবং সম্প্রতি কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেয়ার সময়
এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার ওয়াই বিশেষত কট্টর ডানপন্থী এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে সন্ত্রাসবাদের ভয়ঙ্কর হুমকি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। গত বছর, তাদের করা ১৬ হামলায় ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। এটি ১৯৯৫ সালের পরে এক বছরের মধ্যে সর্বাধিক।
কট্টর রাজনীতি, লকডাউন নিয়ে ক্ষোভ এবং ‘প্রাউড বয়েজ’এর মতো কট্টরপন্থী দলগুলোকে ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থনও বছরজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারের মতো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সময়ও তাদের হামলায় দুই পুলিশকর্মী সহ অনেকেই নিহত হয়েছেন।
তবে সৌভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রায় নেই। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের আরি পেরলিগার বলেন, ‘ডানপন্থী চরমপন্থীদের একটি বড় দুর্বলতা হল তারা অনেক সংস্থায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বা পুরোপুরি একা হয়ে কাজ করেন। যার ফলে প্রায় ১ কোটি ২০ হাজার কর্মী ও সমর্থক থাকলেও তাদের সামগ্রিক প্রভাব সীমাবদ্ধ রয়েছে।’ কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এখন তাদের মাঝেও যোগাযোগ বাড়ছে। ওথ কিপারদের ক্ষেত্রে - যারা মুসলিম এবং বিদেশীদেরকে অপছন্দ করে – তারা আনুষ্ঠানিক সমন্বয় ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এখন নিজেদের মতবাদ শেয়ার করছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথলিন বেলিউ জানিয়েছেন যে, আফগানিস্তান, ইরাকের মতো দেশগুলোতে নিযুক্ত সৈন্যরা দেশে ফিরলে কট্টর ডানপন্থী সংগঠনগুলোর শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি উল্লেখ করেন যে পূর্ববর্তী যুদ্ধের পরে কু ক্লাক্স ক্ল্যানের বিকাশ ঘটেছিল। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরাক, আফগানিস্তান এবং অন্য কোথাও বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা এখন সহিংস ক্রিয়াকলাপকে আরও বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, আমেরিকার কট্টর ডানপন্থীরা ‘একটি চূড়ায়’ পৌঁছে যাচ্ছে।
তাদের বক্তৃতা সংক্রান্ত বিষয়গুলোও বিশেষত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। ‘ওয়েপোনাইজড ওয়ার্ডস’ বইয়ে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ট ব্র্যাডক দেখিয়েছেন কীভাবে চরমপন্থীদের ভাষা সমর্থকদের আকর্ষণ করে। তবে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের কথাও ঠিক ততটাই বিপজ্জনক হতে পারে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা একটি ‘গভীর রাষ্ট্র’ প্রতিরোধের পরিকল্পনা করেছেন। অক্টোবরে এফবিআই মিশিগানে একটি দলকে গ্রেপ্তার করেছিল, যারা ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্রেচেন হুইটার এবং অন্যদের অপহরণের (এবং হত্যা করতে পারে) পরিকল্পনা করতে কয়েক মাস ব্যয় করেছিল। তারা রাষ্ট্রকে ‘মুক্ত’ করতে ট্রাম্পের করা আহ্বানে উৎসাহিত হয়েছিল। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।