Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ন্যায় ও সহনশীল সংস্কৃতিই স্বাধীনতার রক্ষাকবচ -জুমার খুৎবার বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৩৬ পিএম

ন্যায় ও সহনশীল সংস্কৃতি চর্চাই স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। একটি জাতি যতদিন ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততদিন কেউ তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। পারস্পরিক জুলুম পরিহার করতে হবে। আজ নগরীর বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকি আজ খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেছেন, ন্যায় ও সহনশীল সংস্কৃতি চর্চাই স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। একটি জাতি যতদিন ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততদিন কেউ তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আল্লাহ মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও চাহিদার উপযোগী ভূখন্ডে তাদের জন্মের ব্যবস্থা করেছেন। একটি স্বাধীন ভূখন্ডের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপত্তা। সেজন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন মক্কাকে নিজ নগর হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তখন সেই ভূখন্ডের জন্য প্রথম যে দোয়াটি করেছিলেন তা হলো নিরাপত্তার দোয়া। এ দোয়া সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহিম বলেছিল “হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীর তুমি নিরাপত্তা দান কর”। সূরা বাকারা, আয়াত ১২৬।
তিনি বলেন, এই নিরাপত্তার অর্থ ব্যাপক। একটি অঞ্চলের চারদিকে শুধু সেনা সদস্যদের পাহারারত থাকার নামই নিরাপত্তা নয় বরং একই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রত্যেক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে নিরাপদ থাকার নামই নিরাপত্তা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঝুঁকি মনে করলে তখন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার মিশনে লিপ্ত হয়ে যায়। এই ফাঁকে আল্লাহ’র নিয়ামত স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়ে যায়।
পেশ ইমাম বলেন, এই স্বাধীনতা একটি বড় নিয়ামত। স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য দুটি বিষয় খুবই জরুরি, একটি হলো সেই ভূখন্ডের জন্য একটি সামগ্রিক ইউনিভার্সেল সংস্কৃতি,তাহজিব-তমদ্দুন, যার ভিত্তিতে ওই অঞ্চলে ঐক্য গড়ে উঠবে, যে ঐক্যের ভিত্তিতে সে অঞ্চলের স্বাধীনতা কোন ধরণের আক্রমনের শিকার হলে তা প্রতিহত করা হবে। স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য খুবই জরুরি হলো পারস্পরিক জুলুম পরিহার করা। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি এসব জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা পারস্পরিক জুলুম শুরু করে দিয়েছে’। সূরা ১৮, আয়াত-৫৯। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর মক্কার অধিবাসীদের মধ্যে একে অন্যকে ঝুঁকি মনে করার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়া থেকে দূরে রাখতে স্পষ্ট ঘোষণা দেন ‘আজকে কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। অর্থাৎ অতীতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনৈক্য সৃষ্টি করে এই ভূখন্ডের ক্ষতিসাধন ও অর্জিত স্বাধীনতার ক্ষতি হয় সে রকম কোনো কাজ করা যাবে না। তিনি বলেন, বিজয় মাসের শপথ ও আল্লাহর কাছে পার্থনা হবে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যেন অটুট রাখতে পারি সে তাওফিক আমাদরকে দান করুন। আমিন!
ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, চিকিৎসক বিজ্ঞ হয়েও চিকিৎসায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে রোগীর ক্ষতি করে বসতে পারেন। এমন ভুলের প্রমাণও আছে অনেক। এই বাস্তবতার পরেও মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুসরণ করে সুস্থ থাকতে চায় অথচ ওহীর নির্দেশনাসমূহ শতভাগ নির্ভুল হওয়া সত্ত্বেও সে আলোকে পরিচালিত হতে আমরা অনেকই প্রস্তুত নই। এটা অজ্ঞতা কিংবা একগুয়েমি যাই হোক না কেন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ার জন্য এতটুকুই কিন্তু যথেষ্ট। মাওলানা আফেন্দী আরো বলেন, আমরা নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করতে গিয়ে নিয়মিত মহান আল্লাহর নিকট এই ফরিয়াদ করি যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সরল ও সঠিক পথ দেখাও, ঐ সকল মানুষের পথ দেখাও যারা তোমার অনুগ্রহ লাভ করেছে। যে পথে তোমার অভিশপ্ত বান্দারা চলেছে সে পথ নয় এবং ঐ সমস্ত লোকের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। এটি এমন এক তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া যা নামাজের প্রতি রাকাতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আরবী ভাষা না বুঝার দরুণ হয়তোবা আমরা কেউ কেউ এর তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারিনা। সূরা ফাতিহার এই দোয়ায় অভিশপ্ত দ্বারা ইহুদি আর পথভ্রষ্ট দ্বারা খ্রিষ্টানদের বুঝানো হয়েছে। যেহেতু আমরা তাদের পথ চাইনা বলে নিয়মিত দোয়া করছি তাই মুসলমান হিসেবে কাজে কর্মে তাদের অনুসরণ না করে নবী, সিদ্দিক,শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গের পথ অনুসরণ করে সফলতা লাভের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সূরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেছেন, একে অন্যের গীবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তোমরা ঘৃণা করে থাকো। (আল কোরআন) । তিনি বলেন, গীবত করার অর্থ হলো গীবতকৃত ব্যক্তির ইজ্জত সম্মান নষ্ট করে দেয়া, যা নিন্দনীয় ও খারাপ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এই বিষয় ভালো জানেন। রাসুল (সা.) বললেন, নিজের ভাইয়ের এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যা সে পছন্দ করে না। একথা শুনে কোন একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, যদি এই দোষটি আমার ভাইয়ের মাঝে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেন, যদি তার মাঝে থাকে তবেই তো গীবত হবে। আর যদি সেটি তার মাঝে না থাকে তবে তুমি তাঁকে অপবাদ দিলে । (যা গীবত এর চেয়েও ভয়াবহ)। (মুসলিম শরিফ)
এই হাদিস থেকে বুঝা গেল, কারো মাঝে বিদ্যমান দোষ নিয়ে আলোচনা করা গীবত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে গীবত থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমিন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ