Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূমিদস্যুতা উদ্বিগ্ন বগুড়ার নাগরিক সমাজ

বগুড়া ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

 ভ‚মি দস্যু চক্রের সীমাহীন সক্রিয়তায় উদ্বিগ্ন বগুড়ার নাগরিক সমাজ। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী খুব কম সময়ে কোটি টাকা উপার্জনের মাধ্যম এখন ভ‚মিদস্যুতা। তাদের মতে বগুড়ায় জমির মাঠ পর্চা, খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা একটি চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তির জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে।

ভ‚মি জালিয়াত ও ভ‚মি দস্যু চক্রের কারসাজিতে বগুড়ায় এখন স্বাভাবিকভাবে জমি বেচাকেনা করতে পারছে না ক্রেতা-বিক্রেতারা। জালিয়াত চক্রের সাথে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা, আদালত ও সেটেলমেন্ট বিভাগের দুর্নীতিবাজ চক্রের সহায়তা থাকায় দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি ।

অতি সম্প্রতি বগুড়া শহরের রহমান নগর এলাকার ৫৭টি পরিবারের ৮২ শতাংশ জায়গার ওপরে বগুড়ার আদালতে অতি সংগোপনে বন্টন মামলা (নং-২৭/১৯৯৯) করে তাদের সবার অজ্ঞাতেই চক্রটি আদালতে একতরফা রায় হাসিল করে অ্যাডভোকেট কমিশনারের মাধ্যমে চ‚ড়ান্ত নোটিশ দিলে ঘটনাটি জানাজনি হয় এবং চারিদিকে হৈ-চৈ পড়ে যায়। বেশকিছু পত্রিকায় ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। ওই ঘটনাটির বিবরণ দিয়ে ভুক্তভোগীদের একজন ফারুক হোসেন, জানান প্রায় ৫ যুগ আগে তার মরহুম পিতা ও মামা ৭ শতাংশ ও আরেকটি দাগে বেশকিছু জায়গা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ওই জায়গাটি তার মরহুম পিতা ও মামার উত্তরাধিকারীগণ, যথাযথ বন্টনের আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে হালনাগাদ খারিজ/ খাজনা দিয়ে বসবাস করে আসছেন।

তিনিসহ ভুক্তভোগীরা চ‚ড়ান্ত নোটিশ পাওয়ার আগে জানতেই পারেননি যে তাদের এই বৈধ জমির ওপর কারো বদ নজর পড়েছে। ভ‚মিদস্যু চক্র অতি গোপনে সাজানো মামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট কমিশনার হারুনুর রশীদের স্বাক্ষরকরা উচ্ছেদের নোটিশ পেয়ে রীতিমত হতভম্ব ও ঘাবড়ে যান। তবে ডিসেম্বর মাসে কোর্ট খোলা থাকায় তিনি পরদিন ৩ ডিসেম্বর আদালতের দারস্থ হয়ে উচ্ছেদসহ ওই মামলার যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চাইলে বগুড়ার ১ম জেলা যুগ্ম জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শাহাদত হোসেন স্থগিতাদেশের আবেদন মঞ্জুর করেণ। এই স্থগিতাদেশের ফলে রহমান নগরে বসবাসকারি মোট ৫৭টি পরিবারের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি নেমে আসে। বিজ্ঞ বিচারক এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আগামী ৯ ফেব্রæয়ারি।

এদিকে এই মামলাটি সম্পর্কে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যে দেখা যায়, মূলত মামলা ও উচ্ছেদের ফাঁদ পেতে সাংবাদিক, কর্মরত ও অবসর প্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের মালিকানাধীন আনুমানিক ৫০ কোটি টাকার জমি ও জমিতে স্থাপিত বাড়িঘর স্থাপনাকে জিম্মি করে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় চক্রান্ত ছিল জালিয়াত চক্রের আসল উদ্দেশ্য। কারণ ইতোপূর্বে এই চক্রটি একই কায়দায় রহমান নগর, মালতিনগর, বকশিবাজার এলাকার বেশকিছু ভ‚মি মালিককে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এদিকে রহমান নগরের ওই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছাড়াও ভ‚মি দস্যু ও ভ‚মি জালিয়াত চক্রের বিভিন্ন গ্রæপ, সিএস, এম আর আর, মাঠ পর্চা, মৌজা ম্যাপ হাতে নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিস ও আদালত পাড়ার দুর্নীতিবাজ চক্রের সহায়তা নিয়ে বগুড়া শহরের ঝাউতলা, নাটাইপাড়া, লতিফপুর কলোনি জামিলনগর হাউজিং ও তাঁত শিল্প সমবায় সমিতির কোটি কোটি টাকার ভ‚-সম্পত্তি মামলা দায়ের ও অন্যান্য পন্থায় জবর দখল করে নিয়েছে।

দখলকারীরা বিত্তশালী হওয়ায় ও তাদের পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া থাকায় ভুক্তভোগী ভ‚মি মালিকরা তাদের বিরুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে পারে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভূমিদস্যুতা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ