Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হযরত নূহ (আ.)-এর দোয়া

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

হযরত নূহ (আ.) যখন তার জাতিকে কুফর শিরক ও খোদাদ্রোহিতা থেকে ফেরাতে ব্যর্থ হলেন, তখন তিনি তাদের ধ্বংসের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেন। পবিত্র কোরআন সে বক্তব্যটি উল্লেখ করেছে।

মহান আল্লাহ বলেন: নূহ আমাকে বলল, হে আমার মালিক, আমি আমার জাতিকে দিবস রজনীতে, কালে-বিকালে সাড়ে নয়শ’ বছর দাওয়াত দিয়েছি। তারা আমার শোনেনি, বরং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত থেকেছে। যতই দীনের দাওয়াত দিয়েছি, তাদের অবাধ্যতার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। এবার আমি বলছি, আপনি তাদের নির্মূল করে দিন। আযাব পাঠিয়ে ধ্বংস করে দিন। নতুবা এরা এতই খারাপ হয়ে গেছে যে, নিজেরা তো হেদায়াত পাবেই না, বরং এদের থেকে জন্ম নেয়া পরবর্তী প্রজন্মও কাফের মুশরিকই হবে। এরপর কওমে নূহকে আল্লাহ জলোচ্ছ্বাস, বন্যা দিয়ে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেন। কেবল একটি নৌযানে অল্প কিছু ঈমানদার হযরত নূহ (আ.) এর সাথে দুনিয়ায় থেকে যায়। (আল কোরআনের সূরা নূহ এর ২৬-২৭ নং আয়াতের ভাবার্থ)।

হযরত নূহ (আ.)-এর পর শয়তানের প্ররোচনায় তার পরবর্তী লোকেদের মধ্যে ওই একই কায়দায় মূর্তিপূজা শুরু হয়। প্রথমে মহৎ ব্যক্তি ও নেককার বান্দাদের চিত্র, পরে ভাস্কর্য ও মূর্তি। শুরুতে শ্রদ্ধা ও স্মৃতি, পরের প্রজন্মে উপাসনা। আগে মাঠে ময়দানে, পরে দেবালয়ে। এই হচ্ছে মূর্তিপূজার বসন্তকাল। একসময় মধ্যপ্রাচ্যে নমরুদ শাসক হিসাবে আসে। আগেকার দেব-দেবীর পাশাপাশি সে নিজেকেও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর বলে দাবি করে।

তখনকার বিশ্বে হযরত নূহ পূর্ব তাওহীদ এবং হযরত নূহ (আ.) এর ঈমানী চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মূর্তি, প্রতিমা ও ভাস্কর্যবিরোধী মিশন নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করেন হযরত ইবরাহীম (আ.)। তিনি কেবল কল্পনার দেব-দেবী উচ্ছেদ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি খোদায়ী দাবিদার এবং মানুষের দন্ডমুন্ডের কর্তা, ভাগ্যবিধাতা মানবরূপী নেতা শাসক ও কথিত ঈশ্বরদেরও উচ্ছেদ করেন। সর্বপ্রথম তিনিই মূর্তি ভেঙে দেন।

গোমরাহ ও পৌত্তলিক পৃথিবীতে এক আল্লাহর পরিচয় স্পষ্ট করা, তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ এবং তার প্রতি বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের নজিরবিহীন পরীক্ষায় শতভাগ সাফল্য নিয়ে উত্তীর্ণ হন মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত এবং সকল প্রকার শিরকের প্রতি ঘৃণা, দ্রোহ ও সংগ্রাম ছিল ইবরাহীমি চেতনা। এ চেতনার ওপর মুসলিম মিল্লাত বা বিশ্ব মুসলিম জাতি প্রতিষ্ঠিত।

হযরত ইবরাহীমেরই দুই সন্তান নবী হন। এক. হযরত ইসমাঈল (আ.)। যাকে পবিত্র মক্কায় মহান রাব্বুল আলামীন স্থিত করেন। পবিত্র কাবাগৃহ যা নূহ (আ.) এর বন্যার সময় ধসে পড়ে পলিতে ঢেকে গিয়েছিল, তা হাজার বছর পর হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ.) পিতাপুত্র নবী আল্লাহর হুকুমে পুনঃনির্মাণ করেন। এটা অন্তত পাঁচ হাজার বছর আগের ঘটনা।

কাবাঘর নির্মাণ শেষে তিনি আল্লাহর হুকুমে দোয়া করেন। বলেন : হে আল্লাহ আপনি আমাদের পক্ষ থেকে এই খেদমত কবুল করুন। হে আল্লাহ, এই শহরকে আপনি নিরাপদ করুন। এই শহরে আমার উত্তরসূরীদের আপনি মূর্তিপূজা থেকে রক্ষা করুন। শহরবাসীকে সবরকম নেয়ামতে পরিপূর্ণ করে দিন। এ দোয়াটি পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ১২৭-১২৯ নং আয়াতে রয়েছে।

সেখানে আরো বলা হয়েছে, হে আল্লাহ আপনি এই নগরীতে আমার উত্তরসূরীদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করুন। যিনি মানুষের সামনে আপনার মহাগ্রন্থ তেলাওয়াত করবেন। তাদের আত্মশুদ্ধি করবেন। তাদের শিক্ষা দিবেন আপনার কিতাব ও ঐশী প্রজ্ঞা। এ দোয়ারই ফসল ইবরাহীম পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধারায় জন্ম নেয়া বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)।



 

Show all comments
  • কাওসার ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
    উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • জাবেদ ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২১ এএম says : 0
    পত্রিকায় ও অনলাইনে এসব নিউজ পড়তে ভালোই লাগে
    Total Reply(0) Reply
  • সবুজ ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২১ এএম says : 0
    আপনাদের এই লেখাগুলো দ্বারা আমাদের জ্ঞান অনেক সমৃদ্ধ হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২২ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২২ এএম says : 0
    সময় উপযোগী লেখা
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ গোলাম মোস্তফা ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:০৫ এএম says : 0
    এ সময়ে লেখাটা খুবি ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • rASHID2020 ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:০৭ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সেলিম সুলতান ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:১৫ এএম says : 0
    উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে এই সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Akram Uddin Chowdhury ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৪১ পিএম says : 0
    খুবই সুন্দর একটি আলোচনা৷
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন