বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি সমালোচনা তথা পারস্পরিক ব্লেইম গেমের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের দিনব্যাপী বর্ধিত সভা হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাবেশ। কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গত রোববার অনুষ্ঠিত এই বর্ধিত সভা পরিণত হয়েছিল এক বিশাল জনসভায়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের শোডাউনের কারণে পৌর মিলনায়তন এলাকা ও আশেপাশের রাস্তাঘাটে বিশাল জন সমাগম ঘটে। নরসিংদী সদরের এমপি সাবেক প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মো. নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীকের সর্মথকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সমাবেশ লাইভ প্রচার করে। এই সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থকদেরকে শহর আওয়ামী লীগের একজন ভ‚মিদস্যু নেতার বিরুদ্ধে এবং কর্ণেল হিরুর পক্ষে বিভিন্ন স্লােগান দিতে শোনা যায়। নরসিংদী পৌর মিলনায়তনে বর্ধিত সভা চলাকালে সারাদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক পৌর মিলনায়তন চত্বর ও সামনের তিনটি রাস্তায় অপেক্ষমান থাকে। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কর্নেল হিরু এমপি যোগদান করলেও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূইয়া সভায় যোগ দেননি। দুই গ্রুপের নেতারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যার পক্ষে তাদের বক্তব্য পেশ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য মোন্তাজ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত। তবে এই বিভক্তি কোন নেতৃত্ব নিয়ে নয়। দলের ভিতরে নরসিংদী শহরের একজন দুর্নীতিবাজ নেতার ভ‚মিদস্যুতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, মাদক ব্যবসা নিয়ে। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নরসিংদী জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা পরিচালনা, সরকারি-বেসরকারি ভূমি দখল ইত্যাদি ঘটনা নিয়ে নরসিংদী শহরের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এলাকার এমপি এবং সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে কর্নেল হিরু এমপির কাছে এসব ব্যাপারে নালিশ আসতে থাকে। তিনি ওই নেতাকে শুধরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি তাকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে এসব ভ‚মিদস্যুতা সন্ত্রাস চালালে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এই ঘটনার পর থেকেই সন্ত্রাসী ভ‚মিদস্যু নেতা জাতীয় বীর লে: কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু এমপি বীর প্রতীকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে শুরু করে। এলাকার লোকজন এই নেতার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অব্যাহত অভিযোগের কারণে বছর দুয়েক আগে এই কথিত নেতার সশস্ত্র ক্যাডার শফিকুল ইসলাম ও মাদক পার্টনার ইমান আলী র্যাাব ও পুলিশের সাথে এনকাউন্টারে নিহত হয়। তারা বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত কর্নেল হিরুর বীর প্রতীক খেতাব ও তার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে। এই সন্ত্রাসী নেতাকে আশ্রয় দান করে দত্তপাড়ার একজন বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা। তার ছত্রছায়ায় থেকেই এই সন্ত্রাসী নেতা আওয়ামী লীগের উপর অবাধ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালায়। এমপি হিরু দলের ভাবমূর্তির প্রশ্নে এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় কোন্দলের সৃষ্টি হয়। দলের ভিতরে এই ভয়াবহ বিষফোঁড়া বহাল রেখে শুধু সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, কর্নেল হিরো এমপি ভগ্নদশা থেকে তিলে তিলে দলকে গড়ে তুলেছেন। তার নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ যখন একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে ঠিক তখন তাকে দলের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দানে হাজার হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যথিত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আজকের বর্ধিত সভায় কর্নেল হিরুর স্বপক্ষে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়েছে। শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু তার বক্তৃতায় মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম বলেন, আমরা উন্নয়ন শুনতে চাই না। শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন। এ অবস্থায় তিনি বলেন, আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিল করতে পারিনি। পৌরসভা নির্বাচনের পর ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল শুরু করব। নরসিংদী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিপন সরকার জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন সেখানে নরসিংদী সদরের এমপি কর্নেল হিরু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দল থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা দূরীকরণের কথা ঘোষণা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে কর্নেল হিরু এমপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে। আরেকজন দত্তপাড়া বিতর্কিত নেতা দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এটাই জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব। এসব ঘটনা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মৌখিক এবং লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এসব ঘটনাসমূহ তদন্ত করে যে ব্যবস্থা নেবেন সেটাই মেনে নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।