পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কে হচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরবর্তী চেয়ারম্যান? এ প্রশ্নটি প্রতি ৫ বছর অন্তর গতানুগতিক নিয়মেই ওঠে। কারণ কমিশনারদের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয় ৫ বছর পর। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের মার্চ মাসেই শেষ হতে চলেছে সংবিধিবদ্ধ স্ব-শাসিত স্বাধীন সংস্থাটির চেয়ারম্যান এবং একজন কমিশনার নিয়োগের মেয়াদসীমা। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ‘বাছাই কমিটি’র সুপারিশ ক্রমে: প্রেসিডেন্ট শূন্য দু’টি পদে নিয়োগ দেবেন। নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে দুদক আইন ২০০৪’র ৭ ধারা অনুযায়ী বাছাই কমিটি গঠিত হয়। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের এ বাছাই কমিটি। অপর সদস্যরা হলেন, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) এবং মন্ত্রিপরিষদের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত সচিব।
আইনানুযায়ী গঠিত কমিটিতে ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটতে পারে কারও অস্বীকৃতি, অযোগ্যতা কিংবা অপারগতায়। অন্তত: ৪ জন সদস্যের উপস্থিতিতে করোম হয়। একটি কমিশনার পদের বিপরীতে কমিশনে নিয়োগযোগ্য ২ জন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করে বাছাই কমিটি। প্রেসিডেন্ট আইনের ৬ ধারায় একটি পদে একজনকে নিয়োগ দেবেন। বিধি অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতি ‘বাছাই কমিটি’র প্রধান থাকলেও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সচিব। তিনি প্রশাসন ক্যাডার (আমলা) থেকে আসা। আগামী মাসেই এ কমিটি কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৪ সালে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনে কমিশনার নিয়োগের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৬ বছরে পাঁচবার দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠিত হয়েছে। তিন সদস্যের এ কমিশনে তিনজনই কমিশনার। তাদের মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট একজনকে ‘চেয়ারম্যান’ নিয়োগ দেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, ‘কমিশন’ বলতে তিনজনের সমন্বিত সত্তাকেই বোঝায়। তবে চেয়ারম্যান পদটি প্রথম অলঙ্কৃত করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। পরবর্তীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা প্রধান লে: জে: (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সচিব গোলাম রহমান, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. বদিউজ্জামান এবং সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদকে এ পদে বসানো হয়।
লক্ষ্যনীয় বিষয়, পাঁচটি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেনই প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসা সাবেক আমলা। একজন বিচার বিভাগ এবং অন্যজন আসেন প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে। এ বিচারে বেশিরভাগ সময়ই দুদকের কতৃত্বে ছিলেন আমলাগণ। এবার এর ব্যত্যয় ঘটবে-এমনটিই কাম্য। কিন্তু এমন ‘অঘটন’(!) ঘটবে কি? কারণ নানা কথাবার্তা বাতাসে ভাসছে দুদককে ঘিরে। দুদকের নাকি আইন সংশোধন হচ্ছে। কমিশনারের সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৫ জন হচ্ছে। একজন কমিশনারের দু’বার নিয়োগ লাভের সুযোগ থাকছে। দুদকের নিজস্ব সিনিয়র কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভের সুযোগ আসছে -এসব কি নিছক গুঞ্জণ নাকি সত্য তা কেবল ১৪ মার্চের পরই হয়তো পরিষ্কার হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুদকের আমলা-কর্তৃত্বের বেশকিছু সুফল(?) গত পাঁচ বছরে মানুষ পেয়েছে। বিদ্যমান কমিশন ‘দুর্নীতি’কে দুর্নীতি হিসেবে দেখলেও বৃহৎ কোনো আমলা-দুর্নীতিবাজের হাতে হাতকড়া পরায়নি। বিচারক, পুলিশ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, শিল্পপতি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, ভূমি অফিসের পিয়ন-চাপরাশি, সাব-রেজিস্ট্রার, কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্যের ডিলারসহ বাদ পড়েননি কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবাই দুদকের কম-বেশি অস্তিত্ব টের পেলেও নিরাপদে ছিলেন শুধু প্রশাসন ক্যাডারগণ। বরং খাগড়াছড়ির এক কর্মকর্তার (এডমিন ক্যাডার) বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সত্তে¡ও কেন তার বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হলো -সেই কৈফিয়ৎ স্বরূপ দুদক কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
দুদক সূত্র জানায়, এ মুহূর্তের দুদক প্রশাসনেও প্রশাসন কর্মকর্তাদের জয়জয়াকার। প্রতিষ্ঠানটির নীতি-নির্ধারণী পদগুলো দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের হাতে কখনো ছাড়া হয় না। এটি রাখা হয় প্রেষণে আসা প্রশাসন ক্যাডারসহ অন্যান্যদের হাতেই। তিন জনের সমন্বয়ে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনে বর্তমানে ২ জনই প্রশাসন ক্যাডারের। মহাপরিচালকের (ডিজি)৭টি পদই পূরণ করা হয়েছে প্রেষণে, প্রশাসন ক্যাডার দিয়ে। একটি পদে আছেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। পরিচালকের পদ ৩৭টি। এর মধ্যে দুদকের রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। বাকিগুলো পূরণ করা হয়েছে প্রেষণে। এর মধ্যে ঢাকায় অবস্থান করতে আগ্রহী এমন প্রশাসন ক্যাডারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে ১২টি পদে। উপ-পরিচালকের মতো ছোট পদগুলোতেও প্রশাসন ক্যাডারদের বসানো হয়েছে। অনুসন্ধান-তদন্তের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনে তাদের কি কাজ -এ প্রশ্ন তাই অনেকেই করেন।
এ বাস্তবতার মধ্যে দুদকের আসন্ন পুনর্গঠনে আলোচিত হচ্ছে বেশ ক’জন অবসরপ্রাপ্ত আমলারই নাম। তবে পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগীয় প্রশাসন এবং হিসাব নিরীক্ষণের কয়েকজনের নাম শোনা গেলেও চেয়ারম্যান কমিশনের চেয়ারম্যান পদের জন্য তারা বিবেচিত হবেন কি-না সন্দেহ। একজন অবসরপ্রাপ্ত নারী আমলারও নাম শোনা যাচ্ছে দুদক কমিশনার হিসেবে। তবে সব নামই ‘প্রস্তাব’ আকারে আসবে ‘বাছাই কমিটি’র কাছ থেকে। এসব ‘উড়ো-খবরে’ জনমনে এ সংশয় সৃষ্টি হতেই পারে যে, অদূর ভবিষ্যতের দুদকও আমলাদেরই পদানতই থাকছে। সে ক্ষেত্রে দেশের দুর্নীতির ভবিষ্যৎ-চিত্রটা হয়তো আন্দাজ করা কঠিন। কারণ, অন্তত: দুর্নীতির দায়ে প্রশাসন ক্যাডারদের খুব একটা আদালতের বারান্দ অবধি যেতে হয় না।
তবে দুর্নীতির মাত্রা বোঝার জন্য বছর ৭ আগের একটি প্রতিবেদনের তথ্য স্মরণযোগ্য। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চার বছরের একটি খসড়া হিসাব প্রকাশ পায়। তাতে উল্লেখ করা হয়, চার বছরে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোট ৭৭টি মামলা হয়। এসব মামলায় ৮০ জন কর্মকর্তা অভিযুক্ত হন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ৪৮ জন, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ২৩ জন এবং পুলিশ ক্যাডারের রয়েছেন ৬ জন। এ ছাড়া প্রাণি সম্পদের ৫ জন, শিক্ষার ৪ জন, টেলিযোগাযোগ ও গণপূর্ত ক্যাডারের ৩ জন করে এবং কর ক্যাডারের ১ জন কর্মকর্তা ছিলেন। সে সময়ে দুদক আমলা নেতৃত্ব থাকলেও বিচার বিভাগীয় একজন প্রভাবশালী কমিশনারও ছিলেন। এ কারণেই হয়তো ৪৮ জন প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে পুনর্গঠিত কমিশনের পরবর্তী ৫ বছর প্রশাসন ক্যাডার পায় কেবইল সহমর্মিতা। আমলা-প্রধান দুদদেকর বদান্যতায় এখনও ২৮টি ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে প্রশাসনই সেরা। প্রায় সব দুর্নীতির প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত হলেও এখন ‘নির্দোষ’র তকমা বয়ে বেড়াচ্ছে অ্যাডমিন ক্যাডার।
বিশ্লেষকরা দুদক সম্পর্কে মন্তব্য প্রদানে কুণ্ঠিত। তবে এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা.ইকবাল আর্সলানের বক্তব্য বিশেষ প্রনিধানযোগ্য। তার মতে, বাংলাদেশে দুর্নীতি থেকে যত ধরণের সমস্যা সরকার মোকাবিলা করছে তার বেশির ভাগই আমলাদের সৃষ্টি। কারিগরি পদগুলোও আমলারা দখল করে নেন। অথচ বঙ্গবন্ধু আন্ত:ক্যাডার সমন্বয়ের বিধান করেছিলেন। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড তৈরি করেছিলেন। ৫০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডার থেকে পূরণের বিধান করেছিলেন। সেটি কার্যকর করা হচ্ছে না। নিজেরা ইচ্ছেমতো পদোন্নতি নিয়ে টেকনিক্যাল পদগুলোও দখল করছে। এ কারণে দেশে এক ধরণের অস্বস্তি ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। রাজনীতিকদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই আমলা প্রভাব বিস্তার করছে। সব জাযগায় তারা নাক গলাচ্ছেন। কিন্তু যখন সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন আর আমলার দায় নেয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।