পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাঁদনী ঘাটের সিঁড়ি/ আলী আমজদের ঘড়ি/ জিতু মিয়ার বাড়ি/ বঙ্কু বাবুর দাঁড়ি। এমন একটি প্রবাদ সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত। আগেকার মানুষ এর মাধ্যমে সিলেটের চারটি ঐতিহ্য তুলে ধরতেন। কিনব্রিজের সঙ্গে আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। প্রতিঘণ্টাধ্বনি শুনে মুগ্ধ হন সাধারণ মানুষ। ‘সুরমা গাংগের পাড়ে বাড়ী, শাহজালালের উওরসুরি, দেশ-বিদেশে বেটাগিরী, আমরা হক্কল সিলেটী।’ সিলেটের লোকজন এভাবে গানের মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্যের কথা প্রকাশ করেন।
বঙ্কু বাবু মারা গেছেন অনেক বছর আগে। বাকি তিনটি ঐতিহ্য এখনো টিকে রয়েছে। এর মধ্যে আলী আমজদের ঘড়ির বয়স হয়েছে ১৪৫ বছর। মাঝে কিছুদিনের জন্য বিকল ছিল ঘড়ি। পরে কয়েক মাসের মধ্যে ঘড়ির কাঁটা সচল করে দিয়েছে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এখন ঘড়িটি প্রতিঘণ্টায় ধ্বনি দিচ্ছে। এই ধ্বনি শুনে মুগ্ধ হন বিভিন্ন দেশ- বিদেশ থেকে সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটক ও সাধারণ মানুষ। অনেকই ঘড়ির ধ্বনি শুনতে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ঐতিহ্যবাহী এই সেতু টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শুধু পায়ে হাঁটার জন্য উন্মুক্ত রাখতে চাই। এটি করতে পারলে আমাদের এই কিনব্রিজ বিশ্বের একটি অনন্য স্থাপনা হবে। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজ পার হয়ে শহরের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এ ঘড়ি স্থাপিত হয় ১৮৭৪ সালে। ওই বছর তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রæক সিলেট সফরে এসেছিলেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে। ব্রিটিশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নবাব ঘড়িটি স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলে গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন। তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতিবছর ঘড়ি মেরামতের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
সিলেটের সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, আলী আমজদের ঘড়ি সিলেটবাসীর কাছে এখন ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা। অনেক পর্যটকও এখন এটি দেখতে আসেন। বর্তমান মেয়র ঘড়ির কাঁটা সচল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, যখন প্রতিঘন্টায় ঘড়িটি বাজে তখন মানুষ মুগ্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কিনব্রিজ সিলেটের সুরমা নদীতে স্থাপিত প্রথম সেতু। ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৩ সালে লোহার কাঠামোয় দৃষ্টিনন্দন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় কিনব্রিজ। প্রায় আট দশক ধরে সচল সেতুটি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংস্কারকাজ শেষে সচল হয় সেতুটি। নব্বই দশকের পর সিলেটে সুরমা নদীর ওপর আরও চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিনব্রিজ নগরের মধ্যভাগে হওয়ায় যানবাহন চলাচল কখনো বন্ধ হয়নি। লোহার তৈরি কিনব্রিজের আকৃতি অনেকটা ধনুকের মতো। যার দৈর্ঘ্য ১,১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট।
কিনব্রিজের উত্তরপাড়ে আছে আরেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আলী আমজদের ঘড়িঘর। এটিও সিলেটের আরেকটি প্রতীক হিসেবে পরিচিত। কিনব্রিজ হয়ে নগরের প্রবেশমুখ সুরমা নদীর চাঁদনি ঘাট নামে পরিচিত।
সুরমা নদীর তীরে ঐতিহাসিক ঘড়িঘর: ১৮৭৪ সালে কুলাউড়ার পৃথিম পাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খানের উদ্যোগে ঘড়িটি স্থাপন করা হয়। নবাব আলী আহমদ ঘড়িটি স্থাপন করলেও এটি পরিচিতি পায় তার ছেলে আলী আমজাদের নামে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন অথবা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলেই ঐতিহাসিক আলী আমজাদ ঘড়িটির অবস্থান। আলী আমজদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির ওপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা।
আড়াই ফুট ডায়ামিটারের ঘড়িটির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে আবৃত সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির ঘড়িটি সিলেটের ঐতিহ্য। নবাব আলী আহমদ ঘড়িটি স্থাপন করলেও এটি পরিচিতি পায় তার ছেলে আলী আমজাদের নামে। তখনকার সময়ে এখানকার মানুষ সাধারণ সূর্যের আলো দেখেই সময় আন্দাজ করে নিতেন। ঘড়িটি চালু হওয়ার পর সময় জানার জন্য এটিই হয়ে ওঠে অনেকের অবলম্বন। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এই ঘড়ি। এই নান্দনিক স্থাপনা যে কাউকে মুগ্ধ করে। এ ঘড়ি সিলেটের প্রতীক হিসেবে এখন দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ঘড়িটি বিধ্বস্ত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে কিছুসংখ্যক প্রবাসী, আরও পরে তৎকালীন সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি সচল করতে উদ্যোগী হয়। স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভা ঘড়িটি মেরামতের মাধ্যমে সচল করলেও কিছুদিনের মধ্যেই ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৭ সালে আলী আমজদের ঘড়ি মেরামত করে পুনরায় চালু করা হয়। ঘড়িটি চালু করার পর ঢাকার একটি কোম্পানীর কারিগররা ঘড়িটি চালু রাখার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবস্থা করে দেয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের অফিসকক্ষ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ঘড়ির কাঁটা ঘুরতো। কিন্তু দুই-চার বছর যেতে না যেতেই ঘড়ির কাঁটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সিজান কোম্পানীর দ্বারা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি পূনরায় চালু করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ঘড়িটির কাঁটা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৩ সালে আবারো ভাল করা হয়। বার কয়েক সংস্কার করা হলেও নানা সময়ে ঘড়িটি অচল হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সিটি করপোরেশন ঘড়িটি পুনরায় সচল করে। এখন ঘড়িটি সচল। বেজে উঠছে প্রতিঘন্টার আওয়াজ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ঘড়িটি নানা সময়ে সচল করার উদ্যোগ নিয়েছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঘড়িটি সংস্কার করে সচল করা হয়। এর ফলে পুনরায় ঘড়িটি সময় জানান দিতে থাকে। বছরখানেক আগে পুনরায় তা অচল হয়ে পড়ে। এখন আবার এটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে এই উদ্যোগ নিতে সিটি করপোরেশনের বৈদ্যুতিক শাখাকে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।