Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক ও ধনী ব্যবসায়ীদের পুঁজিতে চলছে ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইয়াবা ফেন্সিডিল হেরোইন ও উত্তেজক ওষুধে বগুড়া সয়লাব
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে ঃ ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন এবং যৌন উত্তেজক ওষুধে বগুড়া এখন সয়লাব। মায়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজার হয়ে নিয়মিত ভাবে ইয়াবা এবং হেরোইন এবং ভারত থেকে উত্তরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রাণঘাতী ফেন্সিডিল ও যৌন উত্তেজক ওষুধ আসে বগুড়ায়। এখান থেকে বগুড়া সংলগ্ন অন্যান্য জেলায় এবং বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে মাদক। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কালো টাকার বিপুল অংকের বিনিয়োগ,ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের ব্যবস্থাপনা এবং আইনের রক্ষকদের একাংশের সহায়তায় চলে মাদকের ব্যবসা। মাদকের এই ব্যবসায় কিছু সংখ্যক ব্যক্তি টাকার পাহাড় গড়তে সক্ষম হলেও হাজার হাজার মানুষের ব্যক্তি ও সাংসারিক জীবনে নেমে আসছে সর্বনাশের ঘোর অমানিশা।
বগুড়ার মাদক ব্যবসায় লভ্যাংশের অংশ সমাজের সব স্তরে পৌঁছুলেও বিভিন্ন কারণে মাঝে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে বিপুল পরিমাণে মাদক দ্রব্য উদ্ধার এবং কিছু ব্যক্তি গ্রেফতার হলে পাওয়া যায় মাদক ব্যবসা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অতি সম্প্রতি বগুড়া-জয়পুরহাট সড়কের কিচক বাজারের কাছে একটি মোটরবাইকের ওয়েল ট্যাংকের নীচের গোপন ভাঁজের মধ্যে পাওয়া গেছে ৩৮ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিল। এই ফেন্সিডিলের উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি গোপন সূত্রে পাওয়া থানা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে বগুড়ার মহাস্থান গড়ের বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন ইব্রা নামের এক ব্যক্তির ছেলে শাহীনুর ইসলাম (৩০) মোটরবাইক যোগে নাশকতার কাজে ব্যবহার করার জন্য ভারত থেকে পাঁচবিবি সীমান্ত দিয়ে বিস্ফোরক বহন করে আনছে। খবর অনুযায়ী পুলিশের একটি দল বগুড়া-জয়পুরহাট সড়কের কিচক নামক স্থানে অবস্থিত কেয়া ফিলিং নামের একটি পেট্রোল পাম্পে ওঁত পেতে থাকে। নির্দিষ্ট সময়েই শাহীনুর ১৫০ সিসি’র হিরো মোটরবাইক যোগে ফেরার পথে পুলিশ তাকে আটকে দিয়ে তার শরীর তল্লাশী করে কিছু না পেলেও জেরার মুখে স্বীকার করে যে, তার মোটরবাইকের ওয়েল ট্যাংকের নীচের দিকে ৩৮ বোতল ফেন্সিডিল লুকানো আছে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কোর্টে পাঠায়। তার আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে শুধু সে নয়, তার মতই অনেক যুবকই ভারত থেকে সীমান্ত পথে ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ওষুধ এনে জীবিকা নির্বাহ করছে। কারণ, হেরোইন ফেন্সিডিল ও যৌন উত্তেজক ওষুধের ব্যাপক চাহিদা (তার ভাষায় কাস্টমার) রয়েছে বগুড়ায়। তার ভাষায় ঝুঁকি ও গ্রেফতারের ভয় থাকলেও এই ব্যবসায় লাভের অংকটা লোভনীয় হওয়ায় তারা এই কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
কিছুদিন র‌্যাব-এর একটি টিম বগুড়া শহরতলীর ফুলতলা এলাকার একটি ফ্লাটের ভাড়াটে বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে মাহা আলম (৩৭) ও তার স্ত্রী নার্গিস (২৭) নামের এক দম্পতিকে আটক করে। তাদের হেফাজত থেকে র‌্যাব অভিযানকারীরা তিন হাজার পিস ইয়াবা এবং একশ’ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে। এই দম্পতি নিজেরাও ইয়াবা সেবন করে, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চড়া মূল্যে মাদক বিক্রি এবং দেহ ব্যবসার নেটওয়ার্ক ও পরিচালনা করে। এর আগেও র‌্যাব বগুড়া শহরের বারপুর হাইওয়ে সড়কের একটি দোতলা বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ‘পুতু সরকার’এক মাদক সম্রাটের ২ মহিলা পেডলার (মাদকের বাহক) ও ২ জন পুরুষ পেডলারকে আটক করে তাদের জেল হাজতে পাঠায়। তাদের হেফাজত থেকে কোটি টাকার ইয়াবা ফেন্সিডিল ও অন্যান্য মাদক এবং মাদকের প্যাকেট তৈরীর যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে। ওই মাদক ও পেডলাররা আটক হলে জানা যায়, বগুড়ার এক কোটিপতি হোটেল ব্যবসায়ীর অর্থ লগ্নী রয়েছে বগুড়ার মাদক ব্যবসায়।
অতিসম্প্রতি বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একটি দল কয়েক লক্ষ টাকার ভারতীয় যৌন উত্তেজক ওষুধ একটি হিউম্যান হলার আটক করেছে। এই ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়ার চাঁন মিয়ার ছেলে মামুন (৩০) ও একই উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামের ইমাদুলের ছেলে জিন্নাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় ৮৫ হাজার ৩শ’ ১৫ ভারতীয় রুপি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে বেআঈনী পন্থায় নিয়মিত ভাবে বগুড়ার খান মার্কেট নামের ওষুধের পাইকারী বাজারে মোটা লাভের বিনিময়ে গবাদিপশু মোটা তাজা করার ভারতীয় ওষুধ ও যৌন উত্তেজক এনে সরবরাহ করে থাকে। আমদানী নিষিদ্ধ ভারতীয় ওষুধের চাহিদা ও লাভের অংক বেশ মোটা হওয়ায় লাভের অংকের একটা অংশ ওষুধ প্রশাসনে পৌঁছে দেওয়া হয় ফলে ওষুধ প্রশাসন এক্ষেত্রে চোখ বুজে থাকাটাকেই বেহতের মনে করে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক ও ধনী ব্যবসায়ীদের পুঁজিতে চলছে ব্যবসা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ