পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন দফা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া আমন ধানে নতুন স্বপ্নে বিভোর সিলেটের চাষিরা। এর মধ্যে দিয়ে অর্থনীতির এক নির্ভরতায় সৃষ্টি হয়েছে আশা জাগানিয়ার। একই সাথে কমলার ফলনে নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে সম্ভাবনার। চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সিলেটের চাষিরা পুরো উদ্যমী আমন ও কমলার ফলনে। এছাড়া ব্যস্ততা চলছেই শীতকালীন শাকসবজিতে। আলু, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ধনিয়া পাতা, লাল শাক, পুঁই শাক, লাউ শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল-কুমড়া, কদুর ফুল, বেগুন, বরবটি, শসা, শালগম, ডাটা শাকসহ বিভিন্ন শাকসবজি আসতে শুরু করেছে সিলেটের বাজারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুরোদমে চলছে আমন ধান কাটার উৎসব। গ্রামীণ জনপদে এখন সোনালী ধানের মেলা। ধান কাটা, ধান মাড়াই, ধান শুকানো ও ঘরে তোলাসহ সব ধরনের উৎসব বিরাজ করছে গ্রাম এলাকায়। এ অঞ্চলে তিন দফা বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফসলহানির পরও আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে সিলেট। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রোপা আমন ফসল হয়েছে ২৮১৩ হেক্টর বেশি এমন তথ্য জানিয়েছে কৃষি অধিদফতর। তবে ধান কাটা ও মাড়াইয়েরও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়াও। এসব কাজে গরু দিয়ে মাড়াই নয় এখন হচ্ছে ডিজিটাল ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মেশিন দিয়ে কাজ। ফলে দ্রæত ধান ঘরে তোলার সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা। কৃষকের ঘরে নানা রকম পিঠা-পুলি বানানো আর খাওয়ার ধুমও চলছে।
কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে ৪ লাখ এক হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ছিল উফশী ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫১ ও স্থানীয় জাতের ৬৩ হাজার ২৩৬ হেক্টর। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় শেষ পর্যন্ত এ অঞ্চলে ৪ লাখ ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে উফশী ৩ লাখ ৪১ হাজার ১৭৩ ও স্থানীয় জাতের ৬৩ হাজার ৬২৭ হেক্টর। সবমিলিয়ে এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রোপা আমন আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৮১৩ হেক্টর বেশি।
এদিকে, অর্থনীতির নতুন এক সম্ভাবনা মিলছে কমলা চাষ ঘিরে। মৌসুমের এই সময়ে সিলেটে কমলার ব্যাপক ফলন হয়েছে এবার। শীত পুরো দমে শুরুর আগেই কমলা পাকতে শুরু হয়েছে। যদিও কমলার মৌসুম বলতে গেলে পুরো শীতকাল। সিলেটে কমলা উৎপাদন বাড়াতে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর বছর দশেক আগে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন নামে আট বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে আট হাজারের বেশি কমলার নতুন বাগান করার পরিকল্পনা হয়।
২০০১ সালের জুলাই থেকে ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলে। চার জেলায় ২৫০টি বাগান তৈরির স্থান নির্ধারণ করা হয়। প্রশিক্ষণ দেয়া হয় পাঁচ হাজার কমলা চাষিকে। আট বছরের ওই প্রকল্প শেষে এই অঞ্চলে কমলার চাষ বেড়ে যায় দিগুণ। তবে এরপর বন্ধ হয়ে যায় কমলা চাষ বৃদ্ধির উদ্যোগ। ওই সময় স্থানীয় চাষি ও বাগানিরা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন। তবে মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন কৃষি অধিদফতর ও সিলেটের কমলা চাষিদের মধ্যে দেনদরবার হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ায় ফের কমলা চাষে আগ্রহ হারাতে শুরু করেন সিলেটের চাষিরা।
মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল হচ্ছে এখনকার কমলা চাষ। সব মিলিয়ে সিলেট অঞ্চলে ২৮২ হেক্টর জমিতে হয় কমলা চাষ। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে সিলেটে কমলার গড় উৎপাদন এক হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন। সব কমলা তো দেখতে গোলগাল এবং রসে টইটুম্বুর। সুস্বাদু আর সুঘ্রাণের জন্য সিলেটের বিয়ানীবাজারের জলঢুপী এলাকার কমলার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। এছাড়া বড়লেখা ও জুড়ির কমলাও বেশ ভালো। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি ও বালাটের পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কমলার চাষ হয় এ অঞ্চলের টিলা এলাকায়।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানায়, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার এবং মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়ার ৯ উপজেলায় প্রকল্পের কাজ চলবে। এসব উপজেলায়ই কমলাসহ লেবু জাতীয় ফল সবচেয়ে বেশি ফলন হয়। কমলা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, কমলার নতুন বাগান সৃষ্টি, পুরাতন বাগান ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৫-২০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের কৃষকরা। এ লক্ষ্য পূরণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও উদ্ধুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান তারা।
উল্লেখ্য, সিলেট বিভাগের ১২ উপজেলায় কমলা চাষ হয়। দেশের মোট উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশ কমলা জোগান দেয় এ অঞ্চল। চলতি মৌসুমে এ ১২ উপজেলার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা অন্যতম। অন্যদিকে, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ি, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও সদর উপজেলা এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় কমলার সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে।
মৌলভীবাজারের জুড়ি থানার, গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালচড়া গ্রামের কমলা চাষীয় মুর্শেদ মিয়া বলেন, প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে কমলা চাষে জড়িত তিনি। তার এলাকার ৩টি গ্রামে ১২০টি পরিবার কমলা চাষের সাথে জড়িত। তার বাগানে শুরু হয়েছে কমলা পাকা ও বিক্রি। তার বাগানের কমলা খাসিয়া নাগপুরী জাতের। রসে ভরা সুঘ্রাণও রয়েছে। তিনি বলেন, এবার ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে তার। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা তার কমলা বাগান দেখতে আসেন, সেই সাথে প্রায় ১০/১৫ হাজার টাকার কমলা প্রতিদিন ক্রয়ও করে নেন দর্শনার্থীরা।
তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন বলেন, স্থানীয় বন কর্তৃপক্ষ তাদের বাগানগুলো সাফারী পার্ক করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যদি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় তাহলে কমলা চাষে ব্যাঘাত ঘটবে। এছাড়া সংগ্রহকালীন কমলা রাখার জন্য সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে কোনো হিমাগার নেই। অনেক সময় সংগ্রহ করা কমলা কিছুদিন রাখতে হলে চাষিদের সমস্যায় পড়তে হয়। ফল নষ্ট হয়ে যায়। হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে সিলেট অঞ্চলে কমলা উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ফল সংরক্ষণে হিমাগার নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে, সাইট্রাস সিলেট কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহ মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, মৌলভীবাজারের জুরি এলাকার কমলা দেশের জন্য প্রসিদ্ধ। এখান থেকে এ কমলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয় বাণিজ্যিকভাবে। সংশ্লিষ্টরা কমলার চাষ বৃদ্ধিতে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। এ সম্ভাবনা ঠিকিয়ে রাখতে পারলে স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে, এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সারা দেশে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।