Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কোটি কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহে প্রস্তুত চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:১৫ পিএম

চীনের উহান শহরে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ভাইরাসের উৎস হিসেবে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে অনেক। সেই চীন এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, দক্ষিণ চীনের শেনঝেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধূসর গুদামের অভ্যন্তরে একটি সারি সাদা চেম্বার চোখে পড়ে। বিশেষভাবে ঘিরে রাখা এসব চেম্বারের বাইরে লাগানো রয়েছে ডিসপ্লে স্ক্রিন। তাতে চেম্বারের ভেতরকার বিশেষ তাপমাত্রা প্রদর্শন করছে। এর সামনেই মুখে মাস্ক, সার্জিক্যাল গাউন ও রাবারের দস্তানা পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এ এলাকায় কাউকে ঢুকতে হলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বা পা থেকে মাথা অবধি ঢাকা হ্যাজমাট স্যুট পরা বাধ্যতামূলক। বিশেষ তাপমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত ৩৫০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে থাকা চেম্বারগুলো শিগগিরই ভর্তি হবে চীনা কোম্পানির তৈরি করোনার ভ্যাকসিনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকেরা অনুমোদন দিলেই সেই ভ্যাকসিন সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত চীন। এ গুদাম থেকেই তাপমাত্রা–নিয়ন্ত্রিত কার্গো উড়োজাহাজে করে বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে চীন।

চীনের ভ্যাকসিনটি যেসব দেশে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে, সেখানে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কয়েক কোটি ডোজ সরবরাহ করবে। চীনের রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, তাদের ভ্যাকসিন পরীক্ষা সফল হলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে ভাবমূর্তির সংকটে পড়া চীন ভ্যাকসিন কূটনীতি দিয়ে তা পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো ইয়ানঝং হুয়াং বলেন, ভ্যাকসিন চীনের বৈদেশিক নীতির বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রভাব সৃষ্টিকারী বিদেশনীতির একটি সরঞ্জামও হতে পারে তাদের ভ্যাকসিন। করোনা মহামারির শুরুর দিকে মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল দেশটি। তবে তা নিয়ে সমালোচনা হয়। ভ্যাকসিন তাদের আরেকটি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

চীনে বর্তমানে চারটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যায়ে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা দেখার পরই নিয়ন্ত্রকেরা অনুমোদন দেন। দেশের অভ্যন্তরে ভ্যাকসিনের সফলতার পর চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের ১৬টি দেশে তা পরীক্ষা চালাচ্ছে। ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা দেশগুলোকে শুরুতেই ভ্যাকসিন দেয়ার ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদনদের প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

সিনোভ্যাক বায়োটেক ব্রাজিল ও তুরস্কের সঙ্গে ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তি করেছে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়াতেও ভ্যাকসিনটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হবে। ক্যানসিনো বায়োলজিক চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে, তা মেক্সিকোকে সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে। আরও চারটি দেশে এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ১০টি দেশে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে।

গত অক্টোবরে সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে যুক্ত হয় চীন। এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্সে যুক্ত হওয়া সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ চীন। প্রথম থেকেই চীনা নেতারা বারবার জোর দিয়ে বলছেন, চীন ভ্যাকসিন পেলে উন্নয়নশীল বিশ্বের সঙ্গে তা ভাগাভাগি করা হবে। সূত্র: সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ